Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home সাইকেল থেকে পাওয়া এক জীবনশিক্ষার গল্প
    লাইফস্টাইল

    সাইকেল থেকে পাওয়া এক জীবনশিক্ষার গল্প

    June 8, 202411 Mins Read

    লাইফস্টাইল ডেস্ক : স্কুল-কলেজে পরীক্ষা দিতে আমরা অভ্যস্ত। সে পরীক্ষা লেখাপড়ার। কিন্তু কোনও বিশ্ববিদ্যালয় যে হাতে খাতা-পেনের বদলে সাইকেল ধরিয়ে বলবে, এটা চালাও, দেখাও তুমি কেমন সাইকেল চালাতে পারো, এটাই তোমার পরীক্ষা—এমনটা আন্দাজ ছিল না একেবারেই। কিন্তু উপায় নেই। দেশটির নাম নেদারল্যান্ডস।

    Cycle

    শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ক্রিস্টেলিকে হোফেস্কুলে এডা’। পশ্চিমে, বিশেষ করে আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাগুলি পরিচিত স্কুল হিসেবে। এডা শহরের ক্রিস্টেলিকে হোফেস্কুলেও বলে তাই। বৃত্তি নিয়ে পড়তে এসেছি ‘ইন্টারকালচারাল কমিউনিকশন’। পাঠ্যে রয়েছে ডাচ সংস্কৃতিও। কিন্তু কী মুশকিল, স্কুলে যোগ দেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে বিভাগের সব পড়ুয়াকে হাজির করানো হয়েছে পাশের পার্কিং লটে। দেশি-বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে সাইকেল। প্রথমে মিনিট পনেরো নেদারল্যান্ডস-এর সাইকেল চালানো সম্পর্কে কিছু নিয়মের ফিরিস্তি। এ বার নির্দেশ, চালাও সাইকেল। সামনে পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মীরা থাকবেন। পৌনে এক ঘণ্টার শহর পরিক্রমা। শহর পরিক্রমার পাশাপাশি রাইডিং-টেস্ট। ডাচ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জনের প্রথম ধাপ।

    ৩ জুন। আন্তর্জাতিক বাইসাইকেল দিবস। ২০১৮ সাল থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ জুন মাসের তৃতীয় দিন সাইকেল দিবস হিসেবে পালন করার কথা বলেছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে তা পালিতও হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতে, সাইকেল হল শান্তি-সংস্কৃতির প্রতীক। সাইকেল চালানোর মধ্যে প্রছন্ন ভাবে সামাজিক সাম্য, শ্রদ্ধা আর সংযুক্তির বার্তা থাকে। থাকে সহিষ্ণুতাও। তাই বাড়তি গুরুত্ব দাও সাইকেলে। তা ছাড়া এখন সকলেই জেনে গিয়েছেন, সাইকেল চালানো নিজের এবং পরিবেশের জন্য ভাল। স্বাস্থ্য ভাল থাকে, নিজেকে ‘ফিট’ রাখা যায়। সাইকেল চালাতে ‘ফসিল ফুয়েল’ , মানে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে হয় না। ফলে কার্বন নির্গমন হয় না। ক্ষতি হয় না পরিবেশের। আন্তর্জাতিক সাইকেল দিবসে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হবে। এই কলমচিও সাইকেল নিয়ে দু’-চারটি কথা বলার অনুমতি চাইছে। তবে এই নিবন্ধে ‘সাইকেল চালিয়ে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন’ গোছের তথ্যাবলি নেই। এখানে প্রয়াস ওই সাইকেল নিয়ে ভিন্‌দেশ পরিক্রমার।

    যা-ই হোক, আমরা আবার ফিরে যাই এডার ইউনিভার্সিটিতে। পরে জেনেছিলাম, এই পরীক্ষাকে ওলন্দাজ ভাষায় বলে ভ্যেরকিরসডিপ্লোমা। ইংরেজি তর্জমা ট্র্যাফিক সার্টিফিকেট। নেদারল্যান্ডসে স্কুলপড়ুয়াদের এই টেস্ট প্রায় বাধ্যতামূলক। এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গেলেও সাইক্লিং সম্পর্কে জানাটা আবশ্যিক। গাড়িচালক মোড় নেওয়ার সময় সাইকেল ট্র্যাক কী ভাবে পার হবেন, সাইকেল ট্র্যাকের চিহ্ন কেমন করে বুঝবেন, সেটা তাঁদের জানতে হবে বইকি। আপনার পকেট ভর্তি ইউরো থাকতে পারে, আপনার গ্যারাজে থাকতেই পারে লিমুজিন বা রোলস রয়েস। কিন্তু পথে নামলে আগে সাইকেল। পরে গাড়ি।

    আমার এই ভ্যেরকিরসডিপ্লোমা পাশ করাটা একেবারে মাখনের মতো মসৃণ ছিল, তা বলব না। অথচ জন্ম মফস্‌সলে। স্কুলে থাকতেই বাপ-কাকাদের সাইকেল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছি। শেখার জন্য আলাদা ছোট মাপের সাইকেল নেই। পেল্লায় উঁচু সাইকেলে ভারসাম্য বজায় রাখার পাঠ নিতে কত বার যে ধাক্কা খেয়েছি ল্যাম্পপোস্টে, কিংবা অলস দুপুরে জাবর কাটতে থাকা গো-মাতার গাত্রে, ভাবলে এখন লজ্জা হয়। নিজে জখম হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু সাইকেলের রং চটলে বাড়ি ফিরে উত্তম-মধ্যমের আশঙ্কা। প্রহারটা উত্তম হবে না মধ্যম, তা নির্ভর করত সাইকেলের অবস্থা এবং বাপ-কাকাদের মেজাজের উপর।

    যাই হোক, আর পাঁচজন মধ্যবিত্ত মফস্‌সলির মতো গরু, ল্যাম্পপোস্ট, নর্দমার ‘হার্ডল’ পেরিয়ে অচিরেই সাইকেল শিখে গেলাম। সাঁতার আর সাইকেল একবার শিখলে জীবনে আর ভোলার আশঙ্কা নেই, এই প্রবাদের উপর ভর করে এডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কিং লটে খুব আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম। জন্মশহর রিষড়া ছাড়ার পর আর সাইকেল চালানো হয় না। প্রায় আড়াই দশক এই দ্বিচক্রযানের সঙ্গে প্রায় কোনও সম্পর্ক নেই। ভিন্‌দেশে গিয়ে, বারো ঘণ্টা বিমানযাত্রার ধকলের পর শৈশবের সেই কৃচ্ছ্রসাধনের সুবাদে উতরে যাব সাইকেলের পরীক্ষায়, এমনই ছিল ভরসা।

    কিন্তু সাইকেলটি চালাতে গিয়ে একগাল মাছি। দিব্যি সুন্দর হলুদরঙা সাইকেল। একটু ভারী, মজবুত গড়নের। ছোট্ট একটি বেল, আর সামনে-পিছনে আলো। চালাতেও পারছি বেশ, কিন্তু এ সাইকেল শুধু চলতে জানে। থামতে পারে না। কারণ, সাইকেলে ব্রেক নেই। প্যাডেল থেকে দুই পা রাস্তায় নামিয়ে, কোনওমতে সাইকেল থামিয়ে গেলাম ‘ইনসট্রাকটর’-এর কাছে। বললাম, সাইকেলে ব্রেক নেই, সুতরাং ভ্যেরকিরসডিপ্লোমা আমার দ্বারা হবে না। শুনে সাড়ে ছয় ফুটের ডাচ শিক্ষক খুব আহ্লাদিত। ‘উত্তরের আলোয় অচেনা ইউরোপ’-এর লেখক হীরেন সিংহরায় ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে সাইকেল ভাড়া করে শঙ্কিত হয়েছিলেন এই ভেবে যে, তিনি ঠকে গিয়েছেন। কেননা, সাইকেলে কোনও ব্রেক ছিল না। আমার ডাচ শিক্ষক আর হীরেনবাবুর ড্যানিশ সাইকেল-মালিক একই উত্তর দিলেন। এই সাইকেলে হাতে ব্যবহারের কোনও ব্রেক নেই। ব্রেক পায়ে। বা আরও নির্দিষ্ট করে প্যাডেলে। প্যাডেল সামনে ঘোরালে সাইকেল এগোবে। আর পিছনে ঘোরালে থামবে। সেটাই ব্রেক। আবার চেপে বসা গেল হলুদ সাইকেলে। সত্যিই তাই। পুরোটাই পায়ের কারসাজি। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হচ্ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় পাশ করতেই হবে। তাই ‘ইনসট্রাকটর’ বাঁশি বাজানো মাত্র এগিয়ে পড়লাম। ‘ইনসট্রাকটর’ তখনও মুচকি মুচকি হাসছিলেন। হীরেনবাবুর লেখাটা আগে পড়া থাকলে এই পয়লা দফার আহাম্মকি থেকে রেহাই মিলত।

    নেদারল্যান্ডস ইউরোপের ছোট দেশ। কিন্তু একটি ব্যাপারে বড়— সাইকেল। বস্তুত এই দেশটিকে সাইকেলের দেশ বললে পেয়াদায় ধরবে না। লোকে অফিস যাচ্ছে সাইকেল চেপে, প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট মিটিংয়ে হাজিরা দিচ্ছেন সাইকেল চড়ে, খুদে স্কুল পড়ুয়ার রংচঙে ট্রাইসাইকেল থেকে দাদু-ঠাকুমাদের ই-বাইক— সাইকেল নেদারল্যান্ডস-এর সার্থক জাতীয় প্রতীক। জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ যাতায়াতের জন্য কোনও-না-কোনও ভাবে সাইকেলের উপর নির্ভরশীল। এদের পরই আছে ডেনমার্ক। তার পর জার্মানি। এশিয়ার মধ্যে সাইকেল ব্যবহারে জাপান এগিয়ে। যদিও সাইকেলের সংখ্যা গুনলে চিন থাকবে প্রথমে। সেটি অবশ্য দেশের আয়তন এবং বিপুল জনসংখ্যার জন্য।

    শহর বাদ দিলে ভারতের গ্রাম এবং মফস্‌সল এখনও সাইকেলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। যদিও বাইক বা স্কুটারের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে। রাজারহাট-নিউ টাউনে সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা হয়েছে, তবে উত্তর-মধ্য কিংবা দক্ষিণ কলকাতায় সাইকেলের জন্য নির্ধারিত রাস্তা নেই। নেদারল্যান্ডস-এর গোটা দেশে রয়েছে ‘ফিতসপাথ’ (fietspad)। ফুটপাতের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। ফুটপাতও আছে, সেটা হাঁটার জন্য। আর ‘ফিতসপাথ’ সাইকেলের। এ পথের রং মেরুন লাল। ফিতসপাথ গাড়ি চলার রাস্তার দু’পাশে বা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র পথ হিসাবে থাকতে পারে। আর আছে ‘ফিতসস্ত্রাত’ (Fietsstraat)। এটি সাইকেলেরই রাস্তা। গাড়ি চলতে পারে। তবে ‘অতিথি’ হিসেবে। হংকিংয়ের মাধ্যমে সাইকেলকে পাশ কাটিয়ে গাড়ি এগিয়ে যাবে, সেটি হওয়ার উপায় নেই। মূলত পাড়ার অভ্যন্তরে, ‘রেসিডেনশিয়াল’, যাকে বাংলায় বলা যায় গৃহস্থ এলাকায় এমন ‘ফিতসস্ত্রাত’ রাখা হয়, যেখানে স্বাভাবিক কারণেই গাড়ির চলাচল কম।

    এক পথচারী আনমনে হাঁটছিলেন। বেখেয়ালে কখন যে বাইক লেনে ঢুকে পড়েছেন মালুম হয়নি। পিছন থেকে ধেয়ে আসছিলেন এক সাইকেল আরোহী। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ধাক্কা এড়ানো গেল না। দু’জনেই ভূলুন্ঠিত। বাইক আরোহী সেই অবস্থাতেই বলল, ‘আজ খুব বেঁচে গেলে’! পথচারীর যথেষ্ট লেগেছে। তাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করলে, ‘মানে? আমায় তো ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে।’ সাইকেল-চালকের নির্লিপ্ত উত্তর, ‘আমি এ রাস্তায় বাইক চালাই না, পাশের রাস্তায় ভারী ট্রাক চালাই।’

    এটি অবশ্যই রসিকতা। এবং রসিকতাটি যে নেদারল্যান্ডস-এ তৈরি হয়েছে, সেটিও হলফ করে কেউ বলবে না। কিন্তু এমন বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানে, সাইকেল লেনে পথচারী বা অন্য সাইকেল আরোহীর গুরুতর আহত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। কেননা, তৃতীয় আর এক ধরনের সাইকেল লেন আছে—‘স্নেলফিতসরুটে’। দ্রুতগামী সাইকেলের জন্য সুনির্দিষ্ট। এ বার রসিকতাটি হালকা ভাবে নেবেন, না কি গুরুত্ব দেবেন—‘বুঝ লোক, যে জান সন্ধান’।

    রসিকতার কথা উঠল যখন, আর একটি উল্লেখ করার লোভ সামলানো যাচ্ছে না। রসিকতাটি এমন কিছু আহামরি নয়। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে বেশ কয়েকটি স্মৃতি। তাই অল্প কথায় সেরে নেওয়া যাক। আমাদের সঙ্গেই পড়তেন ভুটানের দেমা দোরজি। ভুটানের জাতীয় টেলিভিশনের সাংবাদিক দেমাই একমাত্র সাইকেল চালাতে পারতেন না। তবে তিনি ছিলেন একেবারে রোগাপাতলা চেহারার। ছোটখাটো দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার হলে কারও-না-কারও সাইকেলের পিছনে বসে যেতেন, পিছনে যে কেউ বসেছে, সেটা চালক টেরও পেতেন না। এখানে বলে রাখা দরকার, নেদারল্যান্ডস-এ সাইকেল সংক্রান্ত নিয়ম বেশ কড়া। এবং নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা আছে। যেমন, সাইকেলে দ্বিতীয় কাউকে বসাতে হলে (মূলত শিশুদের জন্য) উপযুক্ত বসার আসন বা বাকেট রাখতে হবে। আপনার বাইক-ক্যারিয়ারের যা বহর, তাতে মুদিখানার ব্যাগ ধরবে, অথচ আপনি বসিয়েছেন এক মানুষকে, পুলিশ এমন দেখলে ফাইনের খাতা বার করতেই পারে। দেমার ক্ষেত্রে দেখেছি, পুলিশ মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকের দৃশ্য অবলোকন করত। সেটা ‘স্টুডেন্ট কনসেশন’ না ‘বিদেশি কনসেশন’, তা জানি না। তবে আলো জ্বালানোর ব্যাপারে পুলিশ খুব কড়া। দিনের আলো পড়ে গেলে সাইকেলের সামনে সাদা বা হলুদ আলো, এবং পিছনে লাল আলো জ্বালা একেবারে মাস্ট। সেই সঙ্গে প্যাডেলে থাকতে হবে হলুদ রিফ্লেক্টর। এই আইন ভাঙলে ৪৫ থেকে ৭৫ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ডাচরা অন্তত রাস্তাঘাটে ঘুষ দেয় না, নেয়ও না। সুতরাং ফাইনের হাত থেকে মুক্তি নেই।

    কথিত আছে, এক বাইক আরোহী পিছনের লাল আলো না জ্বালিয়ে রাতে সাইকেল চালাচ্ছিলেন। যথারীতি এক পুলিশ তাঁকে দাঁড় করান। ব্যাকলাইট ছাড়া বাইক চালানো কত ক্ষতিকর এবং কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে, সে সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিয়ে জরিমানার খাতা খুলে ধরেন। বাইক আরোহী জরিমানা দিতে রাজি নন। তাঁর দাবি, স্বয়ং ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে চলেছেন। তাঁর অ্যাক্সিডেন্টের ভয় নেই, তাই লাল আলোরও প্রয়োজন নেই। পুলিশ নির্বিকার। দেখা গেল চালকের হাতে ডাবল ফাইনের স্লিপ ধরিয়েছেন। কী ব্যাপার! ট্রাফিক পুলিশের বক্তব্য, একে তো লাইট নেই, তার উপর সাইকেলে গডকে বসিয়ে ডাবল ক্যারি হচ্ছে, ডাবল ফাইন তো লাগবেই!

    তা ডাচদের দেশে এমন রঙ্গ-রসিকতা, সাইকেল (চালু লব্জে বাইক) প্রসঙ্গের শেষ নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, সাইকেল নিয়ে বাঙালির ভাবনা কী? অল্প অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হচ্ছে, যানবাহন হিসাবে সাইকেলকে তেমন আমল দিতে রাজি নন বঙ্গসন্তানেরা। ছবির পর্দায় স্বর্ণযুগে বঙ্গ-নায়কদের সাইকেলারূঢ় দেখা গেলেও কাগজে-কলমে তার প্রতিফলন স্বল্প। ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘কলিকাতায় চলাফেরা: সেকালে আর একালে’ গ্রন্থে কল্লোলিনী তিলোত্তমার যানবাহন নিয়ে কত কিছুই না লিখেছেন। বিত্তবানদের ল্যান্ডো, ফিটন, ব্রুহাম থেকে সাধারণের পাল্কি, ট্রামের প্রচলন— সব তিনি সরস ভঙ্গিতে লিখে গিয়েছেন। এমনকি ঘোড়ার ট্রাম থেকে কলের ট্রাম হয়ে বিদ্যুতের ট্রামের কথাও আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আলাদা করে সাইকেল? উঁহু, কল্কে পায়নি।

    ক্ষিতীন্দ্রনাথ এ বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন জোড়াসাঁকোয়, ঝুলন দ্বাদশীর দিন। সন ১৩৩৭। গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেবে ১৯৩০। অর্থাৎ এর চল্লিশ বছর আগেই হুজুগে বাঙালি টমাস স্টিভেন্সের হাতে সাইকেল দেখে ফেলেছে। সাইকেলে পৃথিবী ভ্রমণের পয়লা পর্যটক এই স্টিভেন্স-সাহেব। মার্কিন মুলুকের সান ফ্রান্সিসকো থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। শেষ টোকিয়োয়। মাঝখানে লন্ডন, ফ্রান্স, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে ভারত। এসেছিলেন কলকাতাতেও। তখন অবশ্য পেনি-ফার্দিং সাইকেলের চল বেশি। আপনারা অনেকেই ছবিতে এই সাইকেল দেখে থাকবেন। সামনের চাকাটি বড়, মানে পেনি, আর পিছনেরটি ছোট, পেনির চারভাগের একভাগ—ফার্দিং। কলকাতা থেকে স্টিমার ধরে স্টিভেন্স চলে যান হংকংয়ে। অবশ্য তার আগে কলকাতার মানুষকে সাইকেল সম্পর্কে বেশ উৎসাহী করে দিয়ে যান। তাই প্রশ্ন জাগে, ক্ষিতীন্দ্র ঠাকুর এই যানটিকে গুরুত্ব দিলেন না কেন? অথচ, শোনা যায় ঠাকুর বাড়িরই আর এক বাসিন্দা, দ্বিজেন্দ্রনাথ সাইকেল চেপে হাওয়া খেতে যেতেন চৌরঙ্গি অঞ্চলে।

    এমনিতে স্মার্টফোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবাদে বঙ্গ-সাইকেলের অতীত গৌরবের কিছু নমুনা খুঁজে পাওয়া যায় অল্প আয়াসেই। একটু খোঁজ করলেই আমরা দেখতে পাব, হ্যারিসন রোডে সাইকেলের দোকান খুলেছিলেন ‘কুন্তলীন’ খ্যাত হেমেন্দ্রমোহন বসু, কিংবা, ভোরের কলকাতায় সাইকেল চালাতেন জগদীশচন্দ্র ও অবলা বসু। একই কথা বলা হয় সস্ত্রীক নীলরতন সরকার সম্পর্কেও। তবে এগুলির সত্যাসত্য নিরূপণের অবকাশ এই নিবন্ধে নেই। আমরা শুধু বাঙালির সাইকেলচর্চার কয়েকটি ‘শোনা যায়’ গোছের তথ্য দেখে নিলাম। এরসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় ভূপর্যটক বিমল মুখোপাধ্যায় কিংবা রামনাথ বিশ্বাসের নাম। তাঁরা সাইকেল নিয়ে বিশ্ব ঘুরেছেন। কিন্তু সে তো বিশ্ব ঘোরার কাহিনি। বাংলায় সাইকেল? সুধী পাঠক, আপনার জানা থাকলে, অবশ্যই এই প্রতিবেদককে জানাবেন। আমি জানতে আগ্রহী, আগাম ধন্যবাদও জানিয়ে রাখলাম।

    মাঝেমাঝে মনে হয়, শরদিন্দুবাবু সেই যে তাঁর গল্পে সাইকেলের ঘন্টি থেকে গ্রামাফোনের পিন ছুড়ে এই দ্বিচক্রযানটিকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে দিলেন, তার পর থেকে আর তার ‘রেজারেকশন’ হল কই! অবশ্য নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের সৌজন্যে বাঙালির সাইকেল আবার জাতে উঠেছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে নোবেল কমিটির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে অর্মত্য সেনের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবিটি আমাদের চেনা। শান্তিনিকেতনের রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছেন বিশ্ববন্দিত অধ্যাপক। নোবেল কমিটি এও জানিয়েছে, প্রফেসর সেনের গবেষণায় সাইকেলটি খুবই সাহায্য করেছে। এতে চড়েই প্রফেসর গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছেন। এ হেন সাইকেল আর তাই বীরভূমে পড়ে থাকেনি। পাড়ি দিয়েছে সুইডেনের স্টকহোমে, নোবেল সংগ্রহশালায়।

    আমরা নোবেল সংগ্রহশালার সাইকেল নিয়ে আহ্লাদিত হতে পারি। কিন্তু ডাচদের কাছে এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে নিয়মিত সাইকেল চড়েই অফিস যান। ভারত সফরে এসে বেঙ্গালুরুর রাস্তায় সাইকেল চালিয়েছেন। শোনা যায়, একবার এক উদীয়মান জনপ্রতিনিধি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন। ব্যস, টিভি চ্যানেলওয়ালারা তাঁকে নিয়ে শুরু করে দেয় মশকরা। ডাচেদের মানসিকতা হচ্ছে ‘দ্যু নরমাল দান দ্যু য়ে আল য়েক ন্যুফ’। মানে, সাধারণ থাকো, বাড়াবাড়ি করো না। সাধারণ থাকাটাই যথেষ্ট বড় ব্যাপার। বিদেশিরা এই ডাচ মানসিকতাকে বলেন ‘ফ্ল্যাট মেন্টালিটি’। প্রথম প্রথম এটা ধরতে পারিনি। পরে এডার এক অধ্যাপক এক ফিল্ড ট্রিপে গিয়ে অভিনব পন্থায় ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

    ফিল্ড ট্রিপের গন্তব্য ছিল লিমবুর্গ। দেশের দক্ষিণ এলাকা। সাইক্লিং ছাড়াও ডাচরা আরেকটি বিষয়ে দড়। সেটি ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট। একাধিক বার বিধ্বংসী বন্যা ডাচদের কাঁদিয়ে ছেড়েছে। স্বাভাবিক, দেশের বেশ কিছুটা অংশ সমুদ্রতলের নীচে। বাধ্য হয়ে ডাচরা জলের ব্যাপারে পারদর্শী হয়েছে। ফিল্ড ট্রিপের উদ্দেশ্য ছিল এই ‘ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’-এর কিছু নমুনা দেখা।

    আমাদের যাত্রা শুরু হলো এক মিনিভ্যানে। ভ্যান চালাচ্ছেন ইপে স্তারেফেল। অর্থনীতির শিক্ষক। কয়েক মাস এডায় পড়ান, বাকিটা সময় কাটান আমেরিকায়। মজার মানুষ। মিনিভ্যানের সামনে চালকের আসনের পাশেই বসেছি আমি। ইপের সঙ্গে গল্পগাছা চলছে। জিজ্ঞাসা করলাম, ডাচদের ‘ফ্ল্যাট মেন্টালিটি’ বলে, এর কারণটা ঠিক কী? ইপে ম্যাপে কী যেন এক বার দেখে নিলেন। তার পর বললেন, সবুর করো, ফেরার পথে জিনিসটা তোমায় বুঝিয়ে দিচ্ছি। ফিল্ড ট্রিপ শেষ করে আমরা চলেছি। বেশ অনেকটা ড্রাইভ করার পর ইপে পথের এক বিশেষ দিকে আঙুল তুলে বলে উঠলেন, দ্যাটস আওয়ার হাইয়েস্ট মাউন্টেন, হ্যাভ আ লুক!

    শুধু আমি কেন, বাকিরাও অবাক। পাহাড় কোথায়? বিস্তীর্ণ সবুজ প্রান্তর ছাড়া কোনও কিছু চোখে পড়ে না। কিছুটা এগোনোর পর বোঝা গেল, সামনে টিলার মতো কিছু একটা রয়েছে। কিন্তু সেটাকে পাহাড় বললে গৌরবের রাজতিলক পরানো হয়।

    ইপে তখন মন খুলে হাসছেন। বললেন, ‘ওর নাম ভালসেরবেয়ার। নেদারল্যান্ডস-এ কোনও পাহাড় নেই। ভালসেরবেয়ারের উচ্চতা ৩২২ মিটার, একেই আমরা পাহাড় বলি।’ ইপের বক্তব্য, ডাচদের মানসিকতা বোঝার জন্য এই টিলাটি দর্শন বিশেষ প্রয়োজন। ভালসেরবেয়ার ছাড়া বাকি দেশ মোটের উপর সমতল। উঁচু-নিচু নেই। ডাচেদের মনও সেই রকম হয়ে গিয়েছে। উচ্চ-নীচের প্রভেদ এখানে অপ্রয়োজনীয়। ফ্ল্যাট কান্ট্রি। ফ্ল্যাট মেন্টালিটি। বিত্ত থাকতেই পারে। প্রকাশ্যে তা প্রদর্শন করলে মানুষ পছন্দ করবে না।

    পরীক্ষা না দিয়েও জিপিএ-৫ পেলেন দুই শিক্ষার্থী

    ইপে আবার মিনিভ্যানে স্টার্ট দিয়েছেন। মোটর রোডের পাশে ‘ফিতসপাথ’। এক প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ার দল দিব্যি সাইকেল হাঁকিয়ে চলে গেলেন। তাঁদের বাইকে ব্যাটারি বসানো। গতিও বেশি। আমরা দাদু-দিদিমাদের রাস্তা ছেড়ে দিলাম। জার্মানি-বেলজিয়ামের মাঝে স্যান্ডউইচ হয়ে থাকা ছোট্ট এই দেশটির সম্পর্কে অনেক স্মৃতি মনে ভিড় করে আছে। সময়ের পলেস্তারায় তার খানিকটা মলিন হলেও, আমার সেই হলুদ সাইকেলের স্মৃতি অমলিন। যে হলুদ সাইকেল ভালসেরবেয়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমায় শিক্ষা দিয়েছে ‘দ্যু নরমাল’। সাধারণ থাকো। সেটাই যথেষ্ট বেশি।

    সাইকেলের এই শিক্ষা আমার জীবনকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছে।

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    এক গল্প জীবনশিক্ষার থেকে পাওয়া লাইফস্টাইল সাইকেল
    Related Posts
    Lemon

    লেবুর সঙ্গে যে ৫ জিনিস ভুলেও খাবেন না

    June 16, 2025
    মিটার

    আপনার মিটারে Reverse বাতি জ্বলছে? সাবধান হয়ে যান এখনি!

    June 16, 2025
    শালিক

    হুবহু মানুষের কণ্ঠে কথা বললো শালিক পাখি, ভাইরাল ভিডিও

    June 16, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Xiaomi 11T Pro বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ

    Xiaomi 11T Pro বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ

    Oppo Find N10 Flip বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ

    Oppo Find N10 Flip বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ

    Lava Blaze X 5G: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    Lava Blaze X 5G: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    Dangue

    ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরো ২৩৪ জন হাসপাতালে ভর্তি

    iQOO Z9 5G: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    Infinix Hot 40i: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    CV writing for freshers

    How to Write a CV for Fresher: Stand Out with Your First Resume

    iQOO Z9 5G: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    iQOO Z9 5G: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    Flood

    ধেয়ে আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয়, ৩ বিভাগে বন্যার শঙ্কা

    Samsung Galaxy A35: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    Samsung Galaxy A35: Price in Bangladesh & India with Full Specifications

    green railway project

    প্রশাসনিক অনুমোদন পেলো গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রকল্প

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.