জুমবাংলা ডেস্ক : ‘আকাশে মেঘ দেখলেই ভয় হয়। মনে হয়, আবার বুঝি সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাচ্চা-কাচ্চা, গরু-ছাগল নিয়ে আবার দৌড়াতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রে।’—সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা অঞ্জলী রানী মন্ডলের চোখে ছিল একরাশ হতাশা।
Table of Contents
এই অনুভূতি শুধু তার একার নয়, বরং উপকূলজুড়ে হাজারো মানুষের চিরচেনা আতঙ্ক। কারণ, ১৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের অন্তত ২০ কিলোমিটার রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের ২৭টি পয়েন্ট অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত।
উপকূলজুড়ে বেড়িবাঁধের দুর্বলতা
শ্যামনগরের ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ-সংশ্লিষ্ট এলাকায়। পুরনো ও দুর্বল এই বাঁধগুলোর ওপর দিয়ে আইলা, আম্পান, সিডর, বুলবুল, মহাসেন, ডানা, রেমালসহ প্রায় ১৫টি বড় ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। ফলে কয়েকবার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে এলাকাগুলো। প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ২০০ জন এবং অনেক গবাদিপশুও হানি হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য ও কাঁকড়া চাষ প্রকল্প, কৃষিজমি ও বসতবাড়ি।
ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ ও নতুন আতঙ্ক
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২৫ সালের ২৯ মে থেকে ৩১ মে-র মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’। এই আশঙ্কাজনক পূর্বাভাসে উপকূলজুড়ে নতুন করে ভয় ছড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগর এলাকায় মোট ১৪৫.৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে রয়েছে:
- বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন: পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গা বাটি, দাতিনাখালি
- আটুলিয়া ইউনিয়ন: বড় কুপট, খোন্তাকাটা, সরদারবাড়ি
- পদ্মপুকুর ইউনিয়ন: কামালকাঠি, ঝাপা, চাউলখোলা, পশ্চিম পাতাখালি
- কাশিমাড়ী ইউনিয়ন: ঝাপালির মমিন নগর
- কৈখালী ইউনিয়ন: মির্জাপুর, দক্ষিণ জয়াখালী, জয়াখালী হুলা
- মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন: মৌখালী গাজী বাড়ি মসজিদসংলগ্ন, হরিনগর খাদ্যগুদাম, সিংহরতলী
- গাবুরা ইউনিয়ন: নেবুবুনিয়া, গাগড়ামারি, কালিবাড়ী
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গা বাটি, দাতিনাখালী বেড়িবাঁধ অতীতেও ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিমত
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় প্রতিবছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ বিপর্যস্ত হয়। মানুষের কষ্ট আর সহ্য হয় না। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা এখন বুড়িগোয়ালিনী বেড়িবাঁধে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো কাজ সম্পন্ন করছে না।
পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। যদি মজবুত বাঁধ থাকে, তাহলে মানুষ না খেয়ে হলেও বাঁচতে পারবে।’
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম পল্টু (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘২৭ এপ্রিল সিংহরতলী বেড়িবাঁধ ধসে গেছে। এছাড়া আরও তিনটি পয়েন্ট চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না।’
প্রস্তুতির কথা জানালেন কর্মকর্তারা
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান সরদার বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জিও রোল, জিও শিট, লেবার ও বালু বহনকারী বালগেট মজুদ রয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনী খাতুন বলেন, ‘১৫ মে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।