সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত জীবনের এক অবিশ্বাস্য পরজীবী সাইমোথোয়া এক্সিগুয়া (Cymothoa exigua)। এই পরজীবী মাছের জিহ্বা খেয়ে নিজেই সেই জিহ্বা হয়ে মাছের মুখে বসবাস করে। তবে যারা নিয়মিত সাগরে বা নদীতে সাঁতার কাটেন, তাঁদের এই পরজীবী নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। কারণ, এরা শুধু মাছকেই আক্রমণ করে।
সাধারণত সাইমোথোয়া এক্সিগুয়াকে জিহ্বাখেকো লাউস নামে ডাকা হয়। মাত্র ০.৩ থেকে ১.১ ইঞ্চি লম্বা হলেও দেখতে বেশ অদ্ভুত। এদের দেহে সাত জোড়া শক্ত পা রয়েছে। কোনো কিছুকে আঁকড়ে ধরতে ও ছিঁড়ে ফেলতে এগুলো ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া এদের দেহ শক্ত খোলস দ্বারা আবৃত। দেখতে ভিনগ্রহী প্রাণীর মতো।
প্রধানত পূর্ব প্যাসিফিক মহাসাগরের উষ্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে মানে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ইকুয়েডর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যায়। পরজীবীটির এই অস্বাভাবিক জীবনচক্রের কারণে জীববিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে।
জিহ্বাখেকো লাউস জীবনের শুরুতে স্বাধীন সাঁতারু হিসেবে সাগরতলে ঘুরে বেড়ায়। এদের এই অবস্থাকে বলা হয় ‘মানকা’। এ সময় পরিজীবীটির মূল লক্ষ্য থাকে একটা উপযুক্ত পোষক মাছ খুঁজে বের করা, যাতে সেই মাছের মধ্যে বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারে শান্তিতে। এমন কোনো মাছ খুঁজে পেলে এরা মাছের ফুলকার পাশের ঘুরঘুর করতে থাকে। অপেক্ষা করে সঠিক সময়ের। সুযোগ বুঝে ঢুকে পরে মাছের ফুলকা দিয়ে মুখে। স্নাইপার, গ্র্যান্ট, ড্রামসজাতীয় মাছ এদের তালিকার সবার ওপরে।
মাছের মুখে প্রবেশের পর জিহ্বা আক্রমণ করে। আক্রমণ টের পেয়ে মাছ ছোটাছুটি করলে সাত জোড়া শক্ত পা দিয়ে মাছের জিহ্বার চারপাশে আটকে ধরে। এরপর জিহ্বায় রক্ত সরবরাহ ধমনীগুলো কেটে দেয়। তাতে মাছের জিহ্বায় ধীরে ধীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে জিহ্বা শুকিয়ে ঝরে যায়।
তাতেও অবশ্য মুক্তি পায় না মাছ। কারণ, এরপর জিহ্বার অবশিষ্ট টিস্যুর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে পরজীবীটি। তখন পরিজীবীটিই হয়ে যায় মাছের নতুন জিহ্বা। মাছও নতুন জিহ্বাকে রক্ত ও শ্লেষ্মা সরবরাহ শুরু করে। তা খেয়েই বেঁচে থাকে জিহ্বাখেকো লাউস।
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও জিহ্বাখেকো লাউস এভাবেই বেঁচে থাকে। প্রকৃতির এক বিচিত্র বেঁচে থাকার কৌশল এটি। তবে বেশিরভাগ মাছ এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করে।
এদের নিয়ে ২০১২ সালে লিনিয়ান সোসাইটির বায়োলজিক্যাল জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। জীববিজ্ঞানীরা মনে করেন, সাইমোথোয়া এক্সিগুয়ার প্রজনন ও জীবনের অন্যান্য দিক নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। জিবখেকো পরজীবী সাইমোথোয়ার প্রায় ১০০টি প্রজাতি বিশ্বব্যাপী পাওয়া যায়। এদেরকে আটটি বর্গে ভাগ করা হয়। সাইমোথোয়া এবং সেরাটোথোয়া এই পরজীবীর সবচেয়ে পরিচিত প্রজাতি। সেরাটোথোয়া মাছকে আক্রমণ করে পুষ্টিহীন করে ফেলে। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথম সাইমোথোয়া এক্সিগুয়া পরজীবীটি পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।