জুমবাংলা ডেস্ক : খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে কাসাবা হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় ফসল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান খাদ্য এবং উৎপাদনের দিক থেকে গম, ধান, ভুট্টা, গোল আলু ও বার্লির পরই কাসাবার স্থান। বাংলাদেশে কাসাবা শিমুল আলু নামে পরিচিত। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার কাদেরের মোড় এলাকার তিস্তা এগ্রো ফ্রার্মে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে কাসাবার চাষ হচ্ছে।
জানা গেছে, কাসাবার গাছ দেখতে শিমুল গাছের পাতার মতো। এ গাছ চার থেকে ফুট লম্বা হয়। গাছের নিচ থেকেই চারপাশ দিয়ে ফল ধরে। ফলগুলো দেখতে মিষ্টি আলুর মতো। যা লম্বা হয় প্রায় এক থেকে দুই ফুট। দেশের বিভিন্ন স্থানে আগে থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে কাসাবার চাষাবাদ করা হচ্ছে।
তিস্তা এগ্রো ফ্রার্মের পরিচালক মোস্তফা কামাল জানান, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুটি জাতের কাসাবার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড থেকে এসেছে। একটি লাল অপরটি সাদাটে। কাসাবা হচ্ছে উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ কন্দল জাতীয় ফসল। দেশে ক্রমবর্ধমান খাদ্য খাটতি মোকাবেলায় কাসাবা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কাসাবাসহ যেকোনো কৃষি কাজের জন্য পূর্ব শর্ত হচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার ব্যবহার করা। এতে উৎপাদন খরচ কমে আবার ফলনও বাড়ে। কাসাবা চাষে কোনো ঝামেলা নেই বললেই চলে। অল্প পরিশ্রমে অধিক ফসল পাওয়া যায়। এটি একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় অর্থকারী ফসল।
কাসাবা চারা রোপণের ছয় মাস পর থেকে টিউবার সংগ্রহ করা যায়। সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২৫ টন কাসাবা উৎপাদন করা যায়। কাসাবা চাষের জমিতে যাতে বন্যা অথবা বৃষ্টির পানি না জমে এ জন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হয়। কাসাবা যদিও খরা সহনশীল গাছ তথাপি বার বার চাষে এর ফলন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, খরা মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ দিন পানি পেলে ফলন বৃদ্ধি পায় ।
কাসাবার বংশ বিস্তার সাধারণত স্টেম কাটিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। আট থেকে ১২ মাসের দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পুরু রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত কাণ্ড চারা তৈরির জন্য আদর্শ। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে রোগ মুক্ত কাণ্ড সংগ্রহ করে ধারালো ছুরি অথবা ডাবল সিকেসা দিয়ে এক বা দুই পর্ববিশিষ্ট ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট কাণ্ড পলি ব্যাগে বা সয়েল বেডে পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরতায় ৪৫ ডিগ্রী কোণে দক্ষিণে হেলিয়ে রোপন করতে হয়।
কাসাবা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত কর্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কন্দল জাতীয় ফসল। খাদ্য হিসেবে কাসাবার পরিস্কার টিউবার সরাসরি বা সেদ্ধ করে অথবা কাঁচাও খাওয়া যায়। কাসাবা থেকে উন্নতমানের সাদা আটা পাওয়া যায়, যা দিয়ে রুটি, বিস্কুট, চিপসসহ নানাবিধ খাবার তৈরি হয়।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শাফিয়ার রহমান দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, রংপুর-দিনাজপুরের মধ্যে দেবীগঞ্জেই এবার প্রথম চাষ হচ্ছে। দেবীগঞ্জ উপজেলার কাদেরের মোড় এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোস্তফা কামাল প্রায় ২০ বিঘা জমিতে কাসাবা চাষ করছেন।
তিনি আরো বলেন, দেশে কৃষি পণ্য উৎপাদনে যে সম্ভাবনা রয়েছে তা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে বাস্তবায়নে তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। উৎপাদন ধীরে ধীরে নিম্নগামী হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী লাভজনক এ কাসাবা সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের বুঝাতে পারলে চাষিদের মাঝে উৎপাদনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।