জুমবাংলা ডেস্ক : সারা দেশের মানুষেরই তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা। কাজের প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে কিংবা ঘরে থেকেও গরমে স্বস্তিতে নেই মানুষ। গরম থেকে আরামের জন্য মানুষ রাস্তাঘাটে বরফ দেওয়া শরবত খাচ্ছেন। বাইরের খোলা ফলমূলও খাচ্ছেন কেউ কেউ।
অনেকে বাইরে থেকে বাসায় ফিরেই ঠান্ডা পানি সরাসরি খাচ্ছেন। তীব্র গরমে সারা দেশের মতো রাজধানীতেও হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ বেড়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানী মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) গিয়ে দেখা যায়, বাইরে প্রচুর রোগীদের ভিড়। একজন রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি স্বজন ঢুকতে দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিভাগে রোগীদের প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে, তাদের অবস্থা বিবেচনা করে স্যালাইন দেওয়া কিংবা ভর্তি করানো হচ্ছে। কিছু রোগীকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠাতেও দেখা গেছে।
উত্তর বাড্ডা থানা রোডের বাসিন্দা পলাশ তার চার বছরের শিশু মারিয়ামকে নিয়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে এসেছেন। দু’দিন ধরে তার মেয়ের পাতলা পায়খানা হচ্ছে, এর সঙ্গে বমি।
পলাশ জানান বলেন, গত দু’দিন আগে প্রথমে পেট ব্যথা বলে মেয়েটি। এরপর তার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। দিনে ১২-১৪ বার বাথরুম করার পর শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে আজ সকালে এখানে নিয়ে আসেন। পাতলা পায়খানা কমলেও এখনও থামেনি। এখনো হালকা পেটব্যথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরেক রোগীর ছেলে রাসেল তার মাকে নিয়ে এসেছেন গাজীপুরা থেকে। তিনি জানান, ২১ তারিখ সকাল থেকে হঠাৎ করেই তার মায়ের পাতলা পায়খানা শুরু হয়। স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ার পরও বাথরুম বন্ধ হচ্ছিল না। এতে তার মা রোকেয়া বেগমের শরীর বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে গতকাল সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। এখন আগের চেয়ে ভালো। তবে শরীর খুবই দুর্বল।
আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনু্যায়ী, গত দু’সপ্তাহ আগেও দিনে পাঁচশর নিচে রোগী আসতো, গত দু’তিন থেকে দিনে রোগীর পরিমাণ পাঁচশ ছাড়িয়েছে। ১৬ এপ্রিল ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৪৭৪ জন রোগী, ১৭ তারিখ ৪৩২ জন, ১৮ তারিখ ৪৪৫ জন, ১৯ তারিখ ৪৫৬ জন, ২০ তারিখ ৫৪৩ জন, ২১ তারিখ ৫২২ জন ও সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৮৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
আইসিসিডিআরবির গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট ডা. নিগার সুলতানা বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে মে-জুন ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, এ তীব্র গরম সপ্তাহজুড়ে থাকতে পারে। তাই আমরা আশঙ্কা করছি এ বছর অতিরিক্ত গরম পড়ায় যে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব মে-জুনে দেখা যাওয়ার কথা সেটা আরও আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে ডায়রিয়ায় প্রতিদিন গড়ে পাঁচশর মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে।
কোন বয়সী রোগী বেশি ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে সব বয়সের মানুষই ভর্তি হচ্ছে। তবে এ সময়ে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়া বেশি হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই গরমে মানুষ বাইরের খোলা শরবত খাচ্ছে। সেখানে যে বরফ থাকে, তাতে প্রচুর জীবাণু থাকতে পারে।
তিনি বলেন, বাইরে থেকে এসে কিংবা পায়খানা করে সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে না। গরমে মানুষের প্রচুর পরিমাণে ঘাম হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান করছে না। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই সাধারণ মানুষকে মাথায় কাপড় বা টুপি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যাদের প্রয়োজন নেই, তাদের ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। এছাড়া যারা শ্রমজীবী তাদেরও এক টানা বেশিক্ষণ কাজে থাকা উচিত নয়।
ডায়রিয়ার সঙ্গে শিশুদের অন্য শারীরিক সমস্যা থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ডায়রিয়ার সঙ্গে অনেকের নিউমোনিয়া, কিডনি বা হার্টের সমস্যা থাকতে পারে। আমরা ডায়রিয়া পরীক্ষা করার পর তাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রেফার করি, যাতে তাদের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি না হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন দেশের ১ লাখ ৭০ হাজার ২৭৬ জন। এদের মধ্যে মারা যান ৩১ জন। ২০২৩ সালে আক্রান্ত হন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭২১ জন। মৃত্যু হয় ১২ জনের। ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ হাজার ৪৪৪ জন। তবে এসময়ের মধ্যে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানায় সংস্থাটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।