জুমবাংলা ডেস্ক : দুটি সাপের মিলন মানুষের কাছে ‘শঙ্খ’ লাগা নামে পরিচিত। অনেকে একে ‘যুদ্ধ নাচ’ও বলে থাকে। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ একে গোখরা ও দাঁড়াশ সাপের মিলনের দৃশ্য মনে করে। এটি খুবই বিরল। সাপের ভালোবাসার এমন দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না।
তবে নড়াইলের মুলিয়া ইউনিয়নের মুলিয়া এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে মুলিয়া-নুনক্ষির রাস্তার ওপর দু’টি দাঁড়াশ সাপের শঙ্খ লাগার দৃশ্য দেখা যায়।
নড়াইল পৌর শহরের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান নিলু ও মির্জা মাহমুদ রন্টু জানান, মঙ্গলবার বিকেলে পেশাগত কাজে মুলিয়া ইউনিয়নের মুলিয়া-নুনক্ষির সড়ক ধরে যাওয়ার পথে মুলিয়া বিল এলাকায় নির্জন রাস্তার ওপর হঠাৎ করেই দু’টি সাপ মাথা উঁচিয়ে পরস্পরের সঙ্গে ‘শঙ্খ লাগা’ বা ‘যুদ্ধ নাচ’ শুরু করে। কেউ কেউ একে অবশ্য গোখরা সাপের শঙ্খ লাগার দৃশ্য বলে মন্তব্য করেন। সেই সময় দু’টি সাপ নিজেদের জড়িয়ে অনেক উঁচুতে উঠতে থাকে। মাটি থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পরস্পরকে আলিঙ্গন করছিল। মাঝে মাঝে আবার মাথা উঁচু করে মারামারি করতে থাকে। চলতে থাকে ‘যুদ্ধ নাচ’। এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা ‘শঙ্খ লাগা’ বা ‘যুদ্ধ নাচ’ শেষ হয় অগণিত মানুষের হইচই ও চিৎকারে। পরে সাপ দু’টি রাস্তার পাশের ঝোপ-জঙলে হারিয়ে যায়।
সাপের শঙ্খ লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লে চারদিক থেকে উৎসুক মানুষের ভিড় জমতে থাকে সেখানে। সাপের শঙ্খ লাগা দৃশ্য উপস্থিত এলাকাবাসীকে অবাক করে দিয়েছে। এটি উৎসুক জনতা মুঠোফোনে ভিডিওটি ধারণ করেছেন। সাপের বিরল এই ভালোবাসার দৃশ্যের ভিডিওটি অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করেছেন।
এদিকে জনশ্রুতি আছে, সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীরা সাপের এই মিলনকে মঙ্গলজনক বা শুভচিহ্ন হিসেবে মনে করেন। কারো কারো মতে এমন দৃশ্য চোখে পড়লে সন্তানের বাসনা পূরণ হয়, শঙ্খ লাগলে বৃৃষ্টিপাত হয়। আবার অনেকের ধারণা বা বিশ্বাস, সাপের শঙ্খ লাগা স্থানে নতুন কাপড় বিছিয়ে রেখে ওই কাপড় যত্ন করে রাখলে সংসারে লক্ষ্মীর দৃষ্টি পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মতিউর রহমান বলেন, শঙ্খ লাগা সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণা বা বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। সাপের শঙ্খ লাগা একটি সাধারণ ও প্রাকৃতিক বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সাপের মধ্যে লড়াই হয়। তবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে কেবল দাঁড়াশ সাপই ‘যুদ্ধ নাচ’ (কমব্যাট ড্যান্স) দেখায়। প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি পুরুষ সাপের মধ্যে এই লড়াইয়ে তারা পরস্পর দেহের অর্ধেক রশির মতো পেঁচিয়ে সমান্তরালে অথবা কিছুটা উপরের দিকে থাকে। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ একে দাঁড়াশের মিলনের দৃশ্য মনে করে। দাঁড়াশ নিরীহ প্রজাতির উপকারী সাপ। এই সাপ প্রচুর পরিমাণে ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে বলে একে ‘কৃষকের বন্ধু’ বলা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।