জুমবাংলা ডেস্ক : বর্তমান দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সরকারি অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ ও নির্মাণ খাতে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ধীরগতির প্রভাব পড়েছে বেসরকারি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও। নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে নির্মাণ সামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপকরণ সিমেন্টের বাজার পরিস্থিতি বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
সরকারের পরিবর্তনের পর সিমেন্টের চাহিদা ও বিক্রি কমে গেছে
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনেক নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমে গেলেও সিমেন্টের দাম ছিল স্থিতিশীল। কিন্তু বর্তমানে সিমেন্টের দামেও হ্রাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবুও বাজারে চাহিদা বাড়ছে না। বিক্রির হার অনেকটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ডিলাররা বাধ্য হয়ে নামমাত্র লাভে সিমেন্ট বিক্রি করছেন, শুধু ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য।
কোন কোম্পানির সিমেন্ট কতটা কমেছে?
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী:
- ক্রাউন সিমেন্ট: ৫৩০ টাকা থেকে নেমে এসেছে ৪৯০ টাকায়
- আকিজ সিমেন্ট: ৫২০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকায়
- প্রিমিয়ার সিমেন্ট: ৫০০ টাকা থেকে ৪৭০ টাকায়
- শাহ সিমেন্ট: ৫১০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকায়
- আমান সিমেন্ট: ৫১০ টাকা থেকে ৪৭০ টাকায়
প্রায় প্রতিটি কোম্পানির সিমেন্টে বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ নেই, বসে থাকছে দিনভর
নারায়ণগঞ্জের অভিজ্ঞ নির্মাণ শ্রমিক ও বর্তমানে লেবার সর্দার শাহবাজ জানান, “বিগত কয়েক বছর এমন অবস্থা ছিল না। এখন কোনো কাজ নেই। সারাদিন বসে থাকতে হয়। আমরা কাজ না করলে সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমে থাকাটাই স্বাভাবিক।”
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নেই বিক্রি, নেই ক্রেতা
আয়াত এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ইসমাইল হোসেন নয়ন জানান, “বর্তমানে বিক্রি একেবারেই বন্ধ। সারাদিন ক্রেতা পাই না। মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব আমাদের এই খাতে পড়ছে।”
তুরাগ ও তুরান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ফারুক মাল বলেন, “সরকারি কোনো কাজ নেই, আমার লেবার বসে রয়েছে। সিমেন্টের দাম কমলেও কোনো ক্রেতা নেই, বিক্রি বন্ধ।”
কোম্পানির কর্মকর্তারাও শঙ্কিত
আকিজ সিমেন্টের সেলস ও মার্কেটিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমান রিগান বলেন, “সারাদেশেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ বন্ধ। প্রজেক্ট বন্ধ থাকলে বিক্রি বাড়ে না। যার কাছে টাকা আছে, তারা এখন দেশে নেই। সিমেন্টের বাজার ভালো যাচ্ছে না।”
ঠিকাদার ও কোম্পানির অভিমত
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার মো. রফিকুল ইসলাম সানু বলেন, “সরকারি উন্নয়ন কাজ স্থবির। সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। কাজ চললে চাহিদা বাড়ত।”
রূপান্তর লিভিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরিদুল মাইয়ান জানান, “মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন আগের মতো নেই। কেবল যারা বাধ্য, তারাই কাজ করছে। নতুন কাজ কেউ নিচ্ছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতাও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের অর্থনীতি ভালো থাকলে নির্মাণ খাত এগিয়ে যায়। এই সেক্টরের সঙ্গে ২৩৬টি কোম্পানি যুক্ত। এখন প্রতিটিই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই সিমেন্টের বাজার পরিস্থিতি এতটা খারাপ। বেচাকেনা নেই বললেই চলে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।