আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নেপালের বিমানবন্দরগুলো বিপজ্জনক স্থানে অবস্থিত। এই বিমানবন্দরগুলো পাহাড়ের কোলে অবস্থিত হওয়ায় প্লেন অবতরণ বেশ বিপজ্জনক। আসলে নেপাল এমনই এক দেশ, যার চারপাশে পাহাড়-পর্বত ঘেরা।
নেপালে একটিমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যদিও এটি তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সেখানকার অভ্যন্তরীণ কিছু বিমানবন্দর আছে যেগুলো এতোটাই বিপজ্জনক স্থানে অবস্থিত যে প্লেন উড্ডয়ন কিংবা অবতরণে বিপজ্জনক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নেপালে সব মিলিয়ে মোট ৪৩টি বিমানবন্দর আছে। তার মধ্যে ১০টি বিমানবন্দর বেশ পরিচিত। এই বিমানবন্দরগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিচারে দারুণ হলেও খুবই বিপজ্জনক ও ভয়ংকর স্থানে অবস্থিত।
লুকলা বিমানবন্দর
নেপালের তেমনই এক বিমানবন্দর লুকলা। বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর বলে মনে করা হয় এই লুকলাকে। এই বিমানবন্দর তেনজিং হিলারি এয়ারপোর্ট নামেও পরিচিত। এই বিমানবন্দর এভারেস্টের খুব কাছে। এটি অনেক বেশি জনপ্রিয় কারণ এখান থেকেই এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছানো যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ৩৩৪ ফুট উঁচুতে রয়েছে লুকলা বিমানবন্দর। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭২৯ ফুট, প্রস্থে ৯৮ ফুট। রানওয়ের চারপাশে প্রায় ২ হাজার ফুট গভীর খাদ।
সিমিকোট বিমানবন্দর
এরপরেই আছে সিমিকোট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ২৪৬ ফুট উঁচুতে এই বিমানবন্দর। কার্নালি প্রদেশের হুমলা জেলায় অবস্থিত এটি। এর রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৮০১ ফুট। সিমিকোট নেপালের একমাত্র বিমানবন্দর, যেটি ন্যাশনাল রোড নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। পশ্চিম নেপালের ডোলপায় যাওয়ার জন্য এই বিমানবন্দর প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া নেপাল থেকে কৈলাস ও মানস সরোবরে যাওয়ার মূল প্রবেশদ্বার হলো এই সিমিকোট।
তালচা এয়ারপোর্ট
নেপালের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর হলো তালচা। এটি মুগু বিমানবন্দর নামেও পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৯৭৩ ফুট উঁচুতে গড়ে তোলা হয়েছে এই বিমানবন্দর। এখানে বছরের বেশিরভাগ সময়ই বরফ পড়ে। এ কারণে রানওয়ে অনেকটা পিচ্ছিল থাকে, তাছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া নানা কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে এই বিমানবন্দরে। ২০১০ সালের ২৬ মে তারা এয়ারের ডিএইচসি ৬ টুইন অটার বীরেন্দ্রনগর বিমানবন্দর থেকে ক্রুসহ ২১ জন যাত্রীকে নিয়ে তালচাতে আসার সময় ওড়ার ৫ মিনিটের মধ্যে কেবিনের দরজা খুলে যায়। তারপর বিমানটি আবারও বীরেন্দ্রনগরে জরুরি অবতরণ করানো হয়। ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর সুরখেত বিমানবন্দর থেকে তালচাতে নামার সময় রানওয়েতে বিমানের চাকা পিছলে গিয়েছিলো। এতে ১১ জন আহত হন।
জমসম বিমানবন্দর
নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরের মধ্যে আরও একটি হলো জমসম। মুস্তাং নামেও পরিচিত এটি। মুস্তাং জেলার প্রবেশদ্বার এই বিমানবন্দর। যে পথে জমসম, কাগবেনী, তাংওয়ে, লো মাংথাং এবং মুক্তিনাথ মন্দিরের মতো দর্শনীয় স্থান আছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৯৭৬ ফুট উঁচুতে এই বিমানবন্দর। খুব জোরে বাতাস বইলে, খারাপ আবহাওয়া থাকলে এই বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়। সকালের দিকে প্রচণ্ড জোরে বাতাস হয়। তখন কুয়াশার কারণে রানওয়ে ঠিকমতো দেখাও যায় না।
বিপজ্জনক পোখরা বিমানবন্দর
নেপালের বিপজ্জনক বিমানবন্দরের তালিকায় আছে পোখরার নামও। ১৯৫৮ সালে তৈরি করা হয় এই বিমানবন্দরটি। এখান থেকে কাঠমান্ডু ও জমসমে নিয়মিত বিমান চলাচল করে। পাহাড়ের কোলে এই বিমানবন্দরটির অবস্থান। রানওয়েও ছোট। এ কারণেই পোখরায় এবার এতবড় একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই প্রথম নয়, এর আগেও ২০০২ সালের ২২ আগস্ট সাংগ্রী এয়ারের বিমান জমসম থেকে পোখরা যাওয়ার পথে পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়েছিলো। এতে তিনজন ক্রু ও ১৫ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান পোখরা থেকে জুমলা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে ভেঙে পড়েছিল খারাপ আবহাওয়ার কারণে। ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিলো সেই ঘটনায়। সূত্র: নেপাল ট্রেক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।