আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সরকারি নানা উদ্যোগের পরও জাপানে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা জন্মহারের নিম্নগামিতা এবার ঠেকেছে নতুন রেকর্ডে।
তাই তরুণরা যাতে বিয়ে করে সংসারি হয়ে সন্তান জন্মদানে মনোযোগী হয়, সেজন্য মরিয়া দেশটির সরকার ডেটিং অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছে।
জাপানের স্বাস্থ্য ও শ্রমকল্যাণ মন্ত্রণালয় শুক্রবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে গত বছর মাত্র ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ শিশুর জন্ম হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী জাপানি নারীদের প্রজনন হার ১.২৬ থেকে ১.২০ তে নেমে এসেছে।
একজন নারী তার জীবদ্দশায় যতজন সন্তানের জন্ম দেন, তার ওপর ভিত্তি করেই জন্মহার নির্ধারণ করা হয়।
একটি দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল থাকার জন্য ২.১ প্রজনন হার প্রয়োজন। এই হারের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে শিশু এবং তরুণদের সংখ্যা বাড়ে। যেমনটি দেখা যায় ভারত এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে।
প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে জাপানে প্রজনন হার ২.১ এর নীচে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ১৯৭৩ সালে বিশ্বব্যাপী তেল সংকট অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেওয়ার পর জাপানে জন্মহার স্থিতিশীল স্তরের নীচে নেমে আসে, এরপর আর কখনো সেটি ঊর্ধ্বমুখী হয়নি।
বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই নিম্নমুখী প্রবণতা আরো বেড়েছে। দেশটিতে প্রতি বছরই মৃত্যুহার টপকে যাচ্ছে জন্মের হার। ফলে মোট জনসংখ্যাও কমছে। যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ছে জাপানের শ্রমশক্তি, অর্থনীতি, কল্যাণ ব্যবস্থা এবং সামাজিক কাঠামোর উপর।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটিতে ১৫ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা জন্মের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।
আর জাপানিদের দাম্পত্য ভাগ্যও সন্তোষজনক নয়। দেশটিতে গত বছর বিয়ের সংখ্যা কমেছে ৩০ হাজার, অন্যদিকে বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিম্নগামী প্রবণতা কয়েক দশক অব্যাহত থাকতে পারে। এমনকি যদি আগামীকালই প্রজনন হার বাড়ায়, তারপরও জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে যতক্ষণ না তরুণ ও বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ভারসাম্য আসে।
জাপানের সরকার এখন জনসংখ্যা কমার এই হারকে স্থিতিশীল করতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত এই সমস্যার দিকে মনোনিবেশ করার জন্য নতুন সরকারি সংস্থা চালু, শিশুদের যত্নের সুবিধা বাড়ানো, পিতা-মাতার আবাসনের ব্যবস্থা করতে ভর্তুকি দেওয়া এবং কিছু শহরে সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে দম্পতিদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানী টোকিওতে কর্মকর্তারা একটি নতুন কৌশল চালুর চেষ্টা করছেন। সেখানে সরকার পরিচালিত একটি ডেটিং অ্যাপ চালু করা হয়েছে। যদিও অ্যাপটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এ বছরের শেষের দিকে পুরোপুরিভাবে কার্যকর হবে।
অ্যাপটির ওয়েবসাইটে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হচ্ছে- ‘অনুগ্রহ করে বিয়ের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এটি ব্যবহার করুন’।
জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে টোকিও নগর কর্তৃপক্ষ এই অ্যাপের মাধ্যমে এআইভিত্তিক সেবা দেওয়ার কথাও বলছে।
অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, “আপনার মূল্যবোধ এবং সঙ্গীর মধ্যে আপনি যে মূল্যবোধ চান তার ওপর ভিত্তি করে এআই আপনাকে একজন সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।”
এমনকি এই অ্যাপটি বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কেরও নজর কেড়েছে।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “আমি আনন্দিত যে, জাপান সরকার এই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। যদি আমূল পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে জাপান (এবং অন্যান্য অনেক দেশ) নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে!”
তবে বিয়েতে আগ্রহী যারা এই অ্যাপের সেবা নিতে ইচ্ছুক, তাদের বয়সন অবশ্যই ১৮ এবং অবিবাহিত হতে হবে। তাছাড়া টোকিওতে কর্মরত কিংবা বসবাস করতে হবে।
দম্পতিদের জন্য দেওয়া সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথাও বলা হয়েছে অ্যাপের ওয়েবসাইটে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।