হোসাইন আহমদ : কৃষি ব্যাংক মৌলভীবাজারের রাজনগর শাখা থেকে উৎকোচ ছাড়া লোন পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষকরা। এ সিন্ডিকেটে ব্যাংকের স্টাফ, জনপ্রতিনিধি এবং ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দালাল জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমন অনিয়মে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যাদের লোনের প্রয়োজন নেই, এমনকি মাঠে জমিও নেই, তাদের নামেও লোন পাশ হচ্ছে। ত্রিমুখী সিন্ডিকেটে এ উপজেলায় সরকারের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, মাঠ পর্যায়ে কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির জাল পাতা রয়েছে। জমি আছে ও অসচ্ছল কৃষকরা আবেদন করলে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের লোন দেওয়া হয় না। বাধ্য হয়ে সিন্ডিকেটের দ্বারস্থ হয়ে মোটা অংকের ঘুস দিয়ে কৃষকদের লোন নিতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ হয়রানির শিকার হয়ে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে কৃষি জমি আবাদ করছেন। এতে কৃষকরা লাভের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেশি। পুরো বছর কৃষকরা সুদের দেনা পরিশোধ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মতিন ওরফে মামুকে ভাতা দেওয়ার কথা বলে ব্যাংকে নেন ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্নেল। এক পর্যায়ে মতিন মিয়া জানতে পারেন ভাতার পরিবর্তে তার নামে দুই লাখ টাকার লোন পাশ হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মতিন মিয়া আপত্তি জানালে ব্যাংক ব্যবস্থাপক এ লোন বাতিল করেন।
মতিন মিয়া বলেন, ‘লোন তোলার জন্য আমার জমিও নেই। লোন তোলার প্রয়োজনও নেই। ঘটনার পরদিন ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্নেল ও তার ভাই জয়নাল মিয়া আমার বাড়িতে এসে ক্ষমা চান।’ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন গ্রাহকের মধ্যে এক কোটি টাকার শস্য লোন দেওয়া হয়েছে।
গ্রাহক সেজে লোনের জন্য কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখার সিকিউরিটি গার্ড শাহিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কৃষি জমির কাগজ থাকলে দুই লাখের মতো লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। এজন্য শাহিন প্রতিবেদকের কাছে ৩৫ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন।
ব্যাংক মনোনীত উপজেলার রক্তা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আকামত মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, কাগজপত্র থাকলে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে। এজন্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা ঘুস দাবি করেন আকামত। কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখা থেকে লোন গ্রহীতা পাঁচগাঁও ইউনিয়নের বাপ্পি বলেন, দুই লাখ টাকা লোনের জন্য ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্নেলকে ৫৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
অপর লোন গ্রহীতা মিন্নত আলী বলেন, ‘দুই লাখ টাকা লোন আনতে ৩৫ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। আমাদের এলাকার যারা লোন নিয়েছেন সবাইকে আমার মতো ঘুস দিতে হয়েছে।’ ইউপি সদস্য তারেক আহমদ কর্নেল বলেন, মতিন মিয়ার নামে আমার কিছু জায়গা আছে। ওই জায়গার কাগজপত্র দিয়ে এমন মিয়া লোন তোলার জন্য মতিন মিয়াকে নিয়ে কৃষি ব্যাংকে যান। প্রথমে সম্মত হলে পরদিন মতিন মিয়া সম্মতি না দেওয়ায় লোন তোলা হয়নি। তিনি কৃষকদের কাছ থেকে লোনের কথা বলে ঘুস নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখার মাঠ কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত করে মতিন মিয়ার নামে লোন পাশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মতিন মিয়া সম্মত না হওয়ায় লোন বাতিল করা হয়। কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে লোন পাশ করা হয়। বাইরে কে কাকে টাকা দেয়, সেটা আমার জানা নেই।’
কৃষি ব্যাংক রাজনগর শাখার ব্যবস্থাপক এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও শুনেছি এরকম হচ্ছে। কিন্তু লিখিত কোনো অভিযোগ কিংবা প্রমাণ না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মতিন মিয়া যখন বলেন তিনি লোন নিতে আসেননি। তাকে ভাতার কথা বলে ব্যাংকে আনা হয়েছে। এ কথা শোনার পর তার লোন বাতিল করি এবং লোনের তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলামকে সাময়িকভাবে মাঠের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
কৃষি ব্যাংক মৌলভীবাজার মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে আবগত হলাম, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’ সূত্র: যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।