জুমবাংলা ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আজ। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সহ অংশ নিচ্ছে ২৮টি দল। এর মধ্যে ৩০০ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন জাপার ২৮৩ প্রার্থী। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার পরও ভোটের মাঠ জমাতে পারেনি জাপা। এর জন্য আওয়ামী লীগের দ্বিমুখী আচরণকে দায়ী করছেন জাপা প্রার্থীরা। আবার মাঠ পর্যায়ে নিজেদের নড়বড়ে সাংগঠনিক অবস্থান, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং অর্থের অপ্রতুলতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। এমন বাস্তবতায় গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫০ আসন থেকে জাপা প্রার্থীরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই আবার প্রচারাভিযানে সক্রিয় হচ্ছেন না।
যদিও জাপা আনুষ্ঠানিকভাবে বলছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ৩৩ আসন থেকে লাঙ্গলের প্রার্থীরা সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীসহ বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভোটের মাঠ থেকে সরে গেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত মোট কতজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী সবমিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ প্রার্থী নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। অবশ্য প্রত্যাহারের সময় পার হওয়ার পর আইনগতভাবে ভোট ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ সময় ভোট ছাড়লেও ব্যালটে তাদের প্রতীক থাকবে। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে বৈধ প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হবেন। এমনকি ভোটের মাঠ ছেড়ে দেওয়া কেউ যদি বিজয়ী হন আইনত সেটা বৈধ হবে। ফলে শেষ মুহূর্তে সরে গেলেও নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ২৬টি আসনে ছাড় দেয় জাপাকে। তবে নৌকার আধিপত্য এবং আর্থিকসহ নানা কারণে লাঙ্গল প্রতীকের অন্তত ১৫০ প্রার্থী এরই মধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৩৩ জন। অন্যরা অনানুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেছেন, এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা থাকলেও সরকারি দলের সঙ্গে কিছু সমঝোতা করে বাকি প্রার্থীদের বঞ্চিত করেছেন। অবশ্য কেউ কারণ হিসেবে আর্থিক সংকট, কেউ পারিবারিক কারণের কথা বলেছেন। কেউ কেউ তার আসনের অন্য প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে ভোটের মাঠ ছেড়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে গেলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে ২৬টি আসনে সমঝোতা হয়েছে সেখানকার কেউ নির্বাচন থেকে সরেননি। তারা সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে রয়েছেন। তাদের অনেকে নিজেদের পোস্টারে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে ১ হাজার ৯৭১ জনের মতো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ৪৩৬ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচন থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সরে যাওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, শেষবেলায় হয়তো আরও কেউ কেউ প্রত্যাহার করবেন। কেউ অর্থের অভাবে, কেউ বা নৌকার আধিপত্যের ভয়ে ভোট থেকে সরে যাচ্ছেন। আমরা পার্টি থেকে প্রার্থীদের সহযোগিতা করতে পারছি না, কারণ চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নিজেদের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তিনি জানান, সবমিলিয়ে নির্বাচনে নেমে এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠ ছেড়ে গেছেন দলটির ৫৫ প্রার্থী।
ভোট থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরের ৫টি আসন থেকেই দলের প্রার্থীরা সরে যাচ্ছেন। তিনটিতে ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও বাকি আসনগুলোতে পোস্টার নেই, প্রচার চালানো হচ্ছে না।
জাপার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থীরা হলেন-ঢাকা-১৩ ও ১৪ আসনে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, গাজীপুর-১ ও ৫ এমএম নিয়াজ উদ্দিন, গাজীপুর-২ জয়নাল আবেদীন, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) মো. সামসুদ্দিন খান, চুয়াডাঙ্গা-১ সোহরাব হোসেন, চুয়াডাঙ্গা-২ রবিউল ইসলাম, যশোর-৫ (মনিরামপুর উপজেলা) এমএ হালিম, বরিশাল-২ ও বরিশাল-৫ ইকবাল হোসেন তাপস, বরগুনা-১ মো. খলিলুর রহমান, টাঙ্গাইল-৭ জহিরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, মুন্সীগঞ্জ-১ শেখ মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ-১ মান্নান তালুকদার, সিলেট-৫ সাব্বির আহমেদ, হবিগঞ্জ-২ শংকর পাল, লক্ষ্মীপুর-৩ রাকিব হোসেন, কুমিল্লা-২ এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম, নাটোর-৪ আলাউদ্দিন মৃধা, নওগাঁ-২ মো. তোফাজ্জল হোসেন, সিরাজগঞ্জ-৩ জাকির হোসেন, দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) মাহবুব আলম, গাইবান্ধা-৫ আতাউর রহমান এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের মো. শামসুদ্দিন।
এর বাইরে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ জাতীয় পার্টির ১৪ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
জাপা ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের (বিএনএম) প্রার্থী সিরাজগঞ্জ-৫ (চৌহালী-বেলকুচি) আসনে আবদুল হাকিম, সুনামগঞ্জ-৪ দেওয়ান শামছুল আবেদীন, যশোর-৪ সুকৃতি কুমার মণ্ডল এবং কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আরিফুর রহমান নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের কেএম আবু হানিফ হৃদয়, যশোর-৫ (মনিরামপুর) মেজর (অব.) আ ন ম মোস্তফা বনি, মেহেরপুর-২ (গাংনী) এ সাবেক এমপি আবদুল গনি এবং জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম টুকন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ছাড়া নীলফামারী-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানাকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন অন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ শামিম এবং হুকুম আলী খান। রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ, হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ, যশোর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম হাবিবুর রহমান হাবিব, যশোর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি রণজিৎ কুমার রায়, নড়াইল-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু, ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর, কাঁঠালিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির, নেত্রকোনা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আফতাব উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ফুলকপি প্রতীক) মোর্শেদুজ্জামান সেলিম, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. এসএম মুসতানজিদ এবং ফেনী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রিন্টু আনোয়ারসহ শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সূত্র : সময়ের আলো
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।