বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : DeepSeek কেবল আরেকটি ভাষা মডেল নয়; এটি এআই প্রযুক্তির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যেখানে গুগল, ওপেনএআই, মেটা ও মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা বিশাল ব্যয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল তৈরি করছে, সেখানে চীনা গবেষকদের তৈরি DeepSeek R1 কম খরচে শক্তিশালী এআই মডেল তৈরি করে এই প্রতিযোগিতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান
২০২২ সালে চ্যাটজিপিটির আবির্ভাবের পর, প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। ওপেনএআই ও মাইক্রোসফট তাদের মডেলগুলোর কাঠামো গোপন রাখলেও, মেটা তাদের লামা (LLaMA) মডেল উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু লামার বিশাল আকারের কারণে এটি ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবহার করা কঠিন। DeepSeek R1 এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে কম খরচে উচ্চমানের এআই মডেল তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে। মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলারে প্রশিক্ষিত এই মডেলটি কর্মক্ষমতায় GPT বা LLaMA-এর সঙ্গে তুলনীয়, যা একচেটিয়া প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটাতে পারে।
Mixture of Experts এবং Distillation প্রযুক্তি
DeepSeek R1 প্রচলিত বিশাল ভাষা মডেলের মতো একযোগে সব সমস্যার সমাধান করতে চায় না। এটি Mixture of Experts (MoE) পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে মডেলের নির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করে। ফলে কম শক্তিতে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়।
এছাড়া, Distillation পদ্ধতির মাধ্যমে বিশাল মডেল থেকে ছোট সংস্করণ তৈরি করা হয়, যা কম কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করেও শক্তিশালী পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৬৭০ বিলিয়ন প্যারামিটার মডেল থেকে মাত্র ৮ বিলিয়ন প্যারামিটারের ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করা সম্ভব, যা সাধারণ কম্পিউটিং শক্তিতেও চালানো যায়।
চেইন অব থট: জটিল সমস্যার সমাধানে নতুন দিগন্ত
DeepSeek R1-এর অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য Chain of Thought প্রযুক্তি। প্রচলিত এআই মডেল পরবর্তী শব্দ অনুমান করে উত্তর দেয়, কিন্তু চেইন অব থট প্রযুক্তির মাধ্যমে মডেল নিজেই ধাপে ধাপে যুক্তি বিশ্লেষণ করতে পারে। ফলে এটি জটিল সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান দিতে সক্ষম হয়।
এআই প্রযুক্তির গণতন্ত্রায়ন
DeepSeek R1-এর সবচেয়ে বড় বৈপ্লবিক দিক হলো এর উন্মুক্ত কাঠামো। যেখানে ওপেনএআই ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের উন্নত এআই প্রযুক্তিকে গোপন রাখে, সেখানে DeepSeek এটি উন্মুক্ত করে দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে উন্নত এআই তৈরি করতে বিশাল প্রযুক্তি কোম্পানি হওয়া জরুরি নয়। এই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষক এবং নতুন উদ্যোগের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।
সিলিকন ভ্যালির জন্য চ্যালেঞ্জ
DeepSeek R1-এর সাফল্য সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এতদিন ধরে মনে করা হতো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন মানেই বিশাল বিনিয়োগ ও শক্তিশালী কম্পিউটিং শক্তি। কিন্তু ডিপসিক প্রমাণ করেছে, সীমিত বাজেটেও উন্নত এআই তৈরি করা সম্ভব।
বিশেষ করে, এনভিডিয়ার মতো কোম্পানির জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ তাদের ব্যবসার বড় একটি অংশই বিশাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর GPU বিক্রয়ের ওপর নির্ভরশীল। কম শক্তিতে কার্যকর মডেল তৈরি হলে, এই বাজার সংকুচিত হতে পারে। একইভাবে, ওপেনএআই-এর মতো প্রতিষ্ঠান, যারা তাদের এআই মডেলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গোপন রেখে ব্যবসা করে, তারা ভবিষ্যতে আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ
DeepSeek R1 কেবল একটি এআই মডেল নয়, এটি প্রযুক্তির নতুন ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করছে। এর উন্মুক্ত কাঠামো এআই প্রযুক্তিকে গণতান্ত্রিক করে তুলছে, যেখানে শুধু বিশাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিপত্য থাকবে না। বরং, ছোট প্রতিষ্ঠান ও গবেষকদের হাতেও শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা পৌঁছে যাবে।
Samsung 5G : ২০ হাজার টাকা বাজেটের সেরা Smartphone এর লিস্ট
সম্ভবত আমরা এমন এক ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছি, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন শুধুমাত্র ডেটাসেটের আকার বা শক্তিশালী হার্ডওয়্যারের ওপর নির্ভর করবে না, বরং আরও দক্ষ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।