সাজিদুর রহমান রাসেল : ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ -এটি হাজার বছরের প্রচলিত বাঙালির খাদ্যাভ্যাস। দেশের জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয়তেই রয়েছে ভাত ও মাছ। বাঙালির তৃপ্তিই মেলে না ভাত-মাছ না খেলে, যা অন্য কিছুতে হয় না।
কিন্তু বাঙালির সেই চিরায়ত খাদ্যাভাসের ব্যতিক্রম হলেন মানিকগঞ্জের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন। পেশা চা-দোকানি। ৫৩ বছর ধরে ভাত-মাছ না খেয়েই দিব্যি সুস্থ তিনি। জীবন-জীবিকার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত।
জেলার সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের চর-গড়পাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন। ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাইয়ে রহম আলী ও টগরজান দম্পত্তির ঘরে জন্ম তার। আট মাস বয়সে মায়ের বুধ ছাড়ানোর পর থেকেই ভাত স্পর্শ করেনি দেলোয়ার।
পরিবার জানায়, সুস্বাদু ভাত-মাছের স্বাদ কেমন তা জানেন না দেলোয়ার। প্রতিদিন সকালে তার খাবারের তালিকায় থাকে তিনটি রুটি এবং সঙ্গে সবজি ভাজি। দুপুরে দেলোয়ার চারটি রুটি আর এক প্লেট ভাজি এবং একইভাবে রাতে রুটি ও ভাজির পাশাপাশি ডিম খেয়ে থাকেন।
তার এই খাদ্যাভ্যাস দেখে বিস্মিত স্থানীয়রা। ভাত না খেয়েও বাঙালি বেঁচে থাকতে পারে তার জীবন্ত উদাহরণ দেখতে অনেকেই দেলোয়ারের চায়ের দোকানে ভিড় জমান।
এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেনের মা টগরজান বেগম বলেন, আমার প্রথম সন্তান দেলোয়ার। জন্মের পর আট/নয় মাস বুকের দুধ পান করেছে সে। এরপর একটু বড় হলে ভাত নরম করে তার মুখে দিলে বমি করে ফেলে দিত দেলোয়ার। এভাবে বেশ কয়েকদিন চলার পর একদিন ওর দাদি (আমার শাশুড়ি) আটার চাপটি বানিয়ে মুখে দিলে তা খেতে শুরু করে। সেই যে শুরু হলো আটার রুটি খাওয়া যা আজও চলছে।
তিনি আরও বলেন, ছেলের এই অভ্যাসের জন্য কোনো আত্মীয়ের বাড়ি গেলে আমি সঙ্গে করে আটা নিয়ে যেতাম। কোনো দাওয়াতে গেলে দেলোয়ারের জন্য দুটি রুটি বানিয়ে তার সামনে দিত সেই বাড়ির মানুষেরা। এই ৫৩ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে।
দেলোয়ারের স্ত্রী শিউলি বেগম বলেন, প্রায় ৩৫ বছর হবে আমাদের সংসার। বিয়ের দিন সবাই বর দেখে এসে আমাকে বলেছিল- তোর জামাই না কি ভাত খায় না। এটা শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম। বিয়ের পর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ভাত খাওয়াতে পারিনি তাকে। পরে চেষ্টা করা বন্ধ করে দিই। আমাদের যেমন ভাত না খেলে ভালো লাগে না সেও রুটি না খেলে তৃপ্তি পায় না।
প্রথম দিকে খানিকটা বিরক্তি লাগলেও পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে জানালেন দেলোয়ারের স্ত্রী।
দেলোয়ারের প্রতিবেশী বারেক মিয়া বলেন, সে বয়সে আমার কিছুটা ছোট হবে। আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে ও দেখে আসছি দেলোয়ার ভাত খায় না। এমনও শুনেছি ভাতের সঙ্গে রুটি খেতে বলেছে কিন্তু সে তাও পারে নি। কখনও ভাত মুখে দিয়ে একটু টেস্টও করতে দেখিনি দেলোয়ারকে। অবাক করা বিষয় হলো ভাত না খেলেও সে সুস্থ। সে কখনোই ডাক্তারের কাছে যায়নি। আল্লাহর রহমতে দেলোয়ার সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই তার জীবন যাপন করে যাচ্ছে ।
দরিদ্র ঘরের সন্তান দেলোয়ার। মানিকগঞ্জ ফুটওভার ব্রিজের নিচে চায়ের দোকান করেন সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজে ঠিক মতো লেখাপড়া করতে না পারলেও সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন দেলোয়ার।
তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা দেলোয়ায়।
নিজের এই খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে দেলোয়ার বলেন, মায়ের মুখে শুনেছি আট/নয় মাস দুধ খাওয়ার পর যখন বাড়তি খাবার (নরম ভাত,ভাতের মার,সুজি) মুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন,তখন নাকি তা বমি করে ফেলে দিয়েছি। পরবর্তীতে আটার তৈরি চাপটি স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে নিতাম। এভাবেই চলছে এখন পর্যন্ত। ক্ষুধা লাগলে রুটি ছাড়া অন্য কিছু খাই না। রুটির সঙ্গে সবজি ভাজি এবং ডিম খাই। ভাত-মাছ খেতে কখনও ইচ্ছা জাগেনি। তা না খেয়েও তো আমি সুস্থ আছি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. লুৎফর রহমান বলেন, ভাত ও রুটি দুটোই কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার। তবে রুটি খেলে শরীরে হালকা রক্তশূন্যতার দেখা দিতে পারে। গমের রুটিতে ভাতের চেয়ে ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণও কম থাকে।
তবে রুটি খেলে শারীরিকভাবে কোনো বড় সমস্যা নেই বলেও জানান এই চিকিৎসক। সূত্র : বাংলানিউজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।