জুমবাংলা ডেস্ক : স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকারের প্রথম ধাপ হিসেবে রাজধানীর লক্কড়-ঝক্কড় বাস উচ্ছেদ করে পাঁচ হাজার উন্নতমানের বাস নামানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এমন দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল করার কথা বলেছেন। তাই দেশের প্রবেশদ্বার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে পরপর চতুর্থ মেয়াদে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বরত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী যিনি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার হাতে দীর্ঘদিন এই মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব থাকায় তিনি সড়কে বিশৃঙ্খলা থামিয়ে স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা উপহার দেবেন, যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করবেন এমন আশায় দেশবাসী তার সুযোগ্য নেতৃত্বের দিকে অধীর আগ্রহে দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, সরকার ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতা শেষ করে চতুর্থ মেয়াদে নতুন করে দায়িত্ব নিয়েছে। সড়কের অবকাঠামো নির্মাণে দেশব্যাপী বৈপ্লবিক পরিবর্তন হলেও নতুন সরকারের চলতি মেয়াদে সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সড়কে শৃঙ্খলা, লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন উচ্ছেদ করে উন্নত দেশের আদলে স্মার্ট, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি দেশবাসীর।
নতুন সরকারের পরিকল্পনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছোট ছোট যানবাহনের পরিবর্তে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি কোম্পানির অধীনে অথবা পিপিপির অধীনে উন্নতমানের পাঁচ হাজার নতুন বাস নামানোর দাবি জানান মোজাম্মেল হক। একই পদ্ধতিতে সারাদেশে স্মার্ট বাস সার্ভিস গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য দাবিও জানান তিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভুক্তভোগী নগরবাসী দীর্ঘ সময় ধরে অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নোংরা আর্বজনায় ভরপুর পরিবহনগুলোতে প্রতিদিন যাতায়াত করছে। যানজট-জনজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন কর্মক্ষম মানুষের লাখো কোটি টাকার শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
সমিতির মহাসচিব বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য, গণপরিবহনগুলোকে মুড়িরটিন বানিয়ে ইচ্ছে মতো যাত্রী হয়রানি চলছে। ভয়াবহ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে নগরবাসী। যাত্রী ও নাগরিক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের উদ্যেগে চালু হওয়া বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতায় ঢাকা নগর পরিবহন নামে কয়েকটি রুটে বাস সার্ভিস চালু করা হলেও তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সদরঘাট থেকে গাবতলী আমিন বাজার পর্যন্ত চালু হওয়া ওয়াটার বাস সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে। নগর পরিবহনে ই-টিকিটিং সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে নগরীর যাত্রী সাধারণ এখন পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ইচ্ছের কাছে জিম্মি।
‘সাধারণ মানুষ ইজ্জত ও মর্যাদা নিয়ে এসব পরিবহনে যাতায়াত করতে পারছে না। সরকার বাস মালিক, শ্রমিকের স্বার্থগুলো অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল ফোরামে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলো রাখা হলেও যাত্রী প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে না,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সারাদেশে বাস নেটওর্য়াক ভেঙে পড়েছে। ইজিবাইক, অটোভ্যান, মোটরসাইকেল এখন দেশের প্রধান বাহন হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যয়বহুল, সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ, যানজট তৈরির উৎস এসব যানবাহন স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে বেমানান।
‘ক্ষমতাসীন নতুন সরকারের চলতি মেয়াদে সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সড়কে শৃঙ্খলা, লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন উচ্ছেদ করে উন্নত দেশের আদলে স্মার্ট, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একই সাথে নতুন সরকার দেশব্যাপী স্মার্ট, গণপরিবহন পরিকল্পনা প্রনয়ণ করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছোট ছোট যানবাহনের পরিবর্তে উন্নত দেশের আদলে স্মার্ট বাস সার্ভিস গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে,’ এমন দাবি জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, জাইকার সমিক্ষা অনুযায়ী বর্তমানে রাজধানীতে দৈনিক ৪ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। এখানে বাস ব্যবসার ব্যাপক সুযোগ থাকলেও শুধুমাত্র চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে, ডেডিকেটেড বাস লেইন চালু করা গেলে, বাস সার্ভিসের মধ্যে দিয়ে নগরীর যাতায়াত ব্যবস্থা চিত্র রাতারাতি পাল্টে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে অনেক বাস কোম্পানি একটি বাস নিয়ে রাস্তায় নেমে কেউ ৬শ কেউ ৮শ বাসের মালিক হওয়ার নজির আছে। অথচ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাস পরিচালনা করতে না পেরে বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দিচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব বাসের সংখ্যা কমছে।
তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, বিআরটিসি পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাস কোম্পানি পরিচালনায় দক্ষ অভিজ্ঞ কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ পরিচালক নিয়োগ দিয়ে বিআরটিসি পরিচালনা করা গেলে বিআরটিসিকে লাভজনক করার পাশাপাশি যাত্রী পরিবহন খাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির বলেন, বর্তমানে রাজধানীর যানজট ও যাত্রী ভোগান্তি নিরসনে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মিলে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। জাইকা সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬টি মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মাত্র ৩৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হবে। ৬৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করবে বিদ্যমান লক্কড়-ঝক্কড় বাস। অথচ মাত্র পাঁচ হাজার নতুন বাস নামাতে মাত্র আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সরকার চাইলে পিপিপির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মধ্যে দিয়ে এই ধরনের বাস সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। যার মধ্য দিয়ে রাজধানীবাসীর যাতায়াতের ভোগান্তি লাঘব করা সম্ভব। অবশ্যই সরকারকে মাথায় থাকবে হবে উন্নত দেশগুলোতে বাস পরিচালিত হয় সরকারি ব্যবস্থাপনায়। এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অভিজ্ঞ দক্ষ বিশেষজ্ঞ একজন পরিচালকের নেতৃত্বে এই কোম্পানি পরিচালনা করা যেতে পারে। ডিটিসিএর ব্যবস্থাপনায়ও এই বাস সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। ফলে এসব বাস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাসের মালিকানা থাকায় সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকার সফল হয় না। তাই যাত্রী ভোগান্তি বাড়ে।
যানজট ও জনজট নিরসনে ঢাকা উপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে প্রশাসনের বিকেন্দ্রিকরণের প্রস্তাব করে বিভিন্ন দেশের উদাহারণ তুলে ধরে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন হলেও প্রধান শহর নিউ ইয়র্ক। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ হলেও প্রধান শহর করাচি। ভারতে রাজধানী দিল্লী হলেও প্রধান শহর বোম্বে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল চালুর কারণে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহর সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সুতরাং চট্টগ্রাম শহরকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে এবং প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত চট্টগ্রামে সম্প্রসারণ করা গেলে ঢাকা উপর জনসংখ্যার চাপ কমানো সম্ভব। তাই নতুন সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনায় রাজধানী থেকে জনসংখ্যার চাপ কমানোর বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা জরুরি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, নেতৃত্বের অযোগ্যতা, পরিচালনার অদক্ষতা, সঠিক মনিটরিংয়ের অভাব, রাজনৈতিক ঠিকাদারের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে দেশের নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ ও পুরোনো সড়ক মেরামত, নৌপথ খনন, নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ ও পুরোনো রেলপথ মেরামত, ইঞ্জিন ও কোচসহ নানাখাতে কেনাকাটায় এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ বাড়তি খরচের নামে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। নতুন সরকার এসব খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার করেছে। আমরা সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান পথে প্রতিটি প্রকল্পে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সরকারের এই অঙ্গীকারের প্রতিফলন দেখতে চাই।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লুৎফুন নেসা খান এমপি, সংগঠনে সহসভাপতি তাওহিদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাসেল, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন, মনজুর হোসেন ইশা প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।