সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার স্বার্থে এবং বিজয় মেলার নামে অশ্লীলতা বন্ধে মেলা বন্ধ রাখার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।
রবিবার (১৪ জানুয়ারী) দুপুরে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন জেলার ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের তেরশ্রী এলাকার বাসিন্দারা।
আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, জেলার ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী এলাকাটি ঘনজনবসতি ও অত্যন্ত শান্তি প্রিয়। মেলার কারণে উচ্চ স্বরে মাইক বাজানো হলে এলাকার ছাত্র-ছাত্রী, শিশু ও বৃদ্ধদের মারাত্বক অসুবিধা হবে। এছাড়াও আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি হতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার আগে মেলা হলে পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ক্ষতি হবে। এছাড়াও মেলায় সার্কাসের নামে অশ্লীল নৃত্যসহ অবৈধ অনেক খেলাধুলার কারণে এলাকার কিশোর-কিশোরীদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। এলাকার শান্তি বজায় রাখতে এবং আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখার কথা বিবেচনা করে মেলাটি বন্ধের দাবী করা হয়েছে। এছাড়া মেলাটি সুবিধাজনক সময়ে অনুষ্ঠিত হলে এলাকাবাসীর কোন আপত্তি থাকবেনা। বিদ্যালয় চলাকালে মেলা হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবদেনপত্রে উল্লেখ করা হয়।
মেলা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় প্রত্যেক বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘিওরের তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনষ্টিটিউশন মাঠে ১৫দিন ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ২০২৩ সালের মেলা পিছিয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেজুলেশনের সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধের বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক অভিভাবক সদস্য মো. রমজান আলী ও রেজা মন্ডল জানান, নির্বাচনের মধ্যেও মানিকগঞ্জ বিজয় মেলা হয়েছে। অথচ ঘিওরে বিজয় মেলার নামে টাকা কামাই (আয়) করতে এখন মেলা করতে যাচ্ছে। অথচ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি করে দিনে ও রাতে বিদ্যালয়ের পাশেই মেলা করতে যাচ্ছে। তারা যদি শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করতেন, তাহলে কোনভাবেই বছরের শুরুতে মেলা করতেন না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো.জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিদ্যালয়ে প্রায় ১২শ শিক্ষার্থী আছে এবং প্রায় ১০০জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এখন বিদ্যালয়ের পাশে মেলা হলে তো স্বাভাবিকভাবেই পড়ালেখার ক্ষতি হবে। তাছাড়া মেলা থেকে অর্জিত কোন অর্থ বিদ্যালয়ের দেওয়া হয় না। মেলা থেকে যা আয় হয়, তা মেলা কমিটির লোকজন নেন।
স্থানীয় মজিবর রহমান নামের একজন জানান, মেলার কারণে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের, তাছাড়া রাতভর মাইকের শব্দ হয়। যাত্রা ও সার্কাসের নামে চলে অশ্লীল নাচ-গান। এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে মেলাটি বন্ধ করার দাবী করছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও পয়লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো.আব্দুল কুদ্দুস জানান, আমরাও মেলা করেছি, কিন্তু শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ক্ষতি না করে। এখন মেলা করা মানে মেলার নামে টাকা আয় করে নিজেদের পকেট ভরা। মেলার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের তো কোন উপকার হবেই না, বরং শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হবে। সার্বিক বিবেচনা করে মেলা না হওয়ায় ভালো।
ঘিওর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মিয়া জানান, মেলা হয় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত। আর পড়ালখার ক্ষতি হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ক্ষতি হবে, অন্য কারো ছেলে-মেয়েদের ক্ষতি তো হবেনা। এখন প্রশাসন যদি মেলা বন্ধ করে দেয়, তাহলে বন্ধ করে দিবে। কারণ মেলার সভাপতি হচ্ছে ইউএনও।
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আমিনুল ইসলাম জানান, তেরশীতে প্রতিবছরই মেলা হয়। তবে এবার লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনা করে জেলা প্রশাসক স্যার সিদ্ধান্ত নিবেন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারি মুঠোফোনে বলেন, আমার কাছে এখনো আবেদনে কপি আসেনি। আবেদনের কপি পেলে যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।