জুমবাংলা ডেস্ক : সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও গত কয়েকদিনে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেছে। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএস স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। এ অবস্থায় কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ১০০ টাকার স্যালাইন ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে ডিএনএস স্যালাইন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক অনুরোধের পর কাউকে স্যালাইন দিলেও ৩০০-৫০০ টাকা নেওয়া হয়। অথচ এসব স্যালাইনের গায়ে মূল্য দেওয়া আছে ১০০ টাকা। ফার্মেসি মালিকরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ৫০০ টাকা পর্যন্ত এই স্যালাইন বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের একাধিক ফার্মেসির মালিক দাবি করেছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ডিএনএস স্যালাইনের সরবরাহ নেই। এতদিন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এই স্যালাইন দিলেও ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। হয়তো এই অজুহাতে দাম বাড়ানোর কথা ভাবছে কোম্পানিগুলো।
রাউজান উপজেলার বাসিন্দা নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘আমার ছোট ভাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সোমবার চিকিৎসক তাকে ডিএনএস স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দেন। মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে যেসব ফার্মেসি আছে, সবগুলোতে খোঁজ নিয়েও স্যালাইন পাইনি। এরপর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়েও পাইনি। সর্বশেষ হাজারী গলির একটি দোকান থেকে ৩০০ টাকায় একটি স্যালাইন কিনেছি। অথচ স্যালাইনটির মূল্য ১০০ টাকা। কোনও কোনও ফার্মেসি ৫০০ টাকা বিক্রি করছে। স্বাভাবিক সময়ে এই স্যালাইন ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হতো।’
এদিকে, ডিএনএস স্যালাইন সংকটের খবরে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধের বাজার হাজারী গলিতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। প্রতিবারের মতো এবারও ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান ফার্মেসি মালিকরা।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএস স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যায়নি। গায়ে ১০০ টাকা লেখা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। খবর পেয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধের বাজার হাজারী গলিতে অভিযান চালানো হয়েছে।’
ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন ফার্মেসি মালিকরা উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ‘নগরীর বেঙ্গল ফার্মেসি ও চট্টলা ফার্মেসিতে ১৫০টি ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যায়। পরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভেতরের ফার্মেসিতে ন্যায্যদামে ওসব স্যালাইন বিক্রি করা হয়। এরপর হাজারী গলির খাজা মার্কেটের একটি দোকান থেকে লক্ষাধিক টাকার ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ জব্দ করা হয়। এই তিন দোকানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
অভিযানের সময় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফীন উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে ডিএনএস স্যালাইনের সংকট আছে। আমরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলবো। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবকে বিষয়টি জানাবো। সেইসঙ্গে বাজারে ডিএনএস স্যালাইন সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।’
তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডিএনএস স্যালাইনের সংকট নেই। বাজারে যে সংকট, তা সিন্ডিকেটের কারসাজি। তারা তেল-পেঁয়াজের মতো স্যালাইন মজুত করেছে। উদ্দেশ্য দাম বাড়ানো। আমরা এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।’
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১৪ জন রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হলেন দুই হাজার ২৪১ জন। মারা গেছেন ২৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে নগরীর এক হাজার ৬৩০ জন এবং জেলার অন্যান্য এলাকার ৬১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৪১, নারী ৬৩৫ এবং শিশু ৫৬৫ জন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।