জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য স্বর্ণ শুধু অলংকার নয়, এটি একধরনের আর্থিক নিরাপত্তা ও সংস্কৃতির প্রতীক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে খবরটি স্বর্ণপ্রেমী ও বিনিয়োগকারীদের চমকে দিয়েছে তা হলো – দেশে স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে সর্বনিম্ন অবস্থানে।
Table of Contents
স্বর্ণের দাম: সাম্প্রতিক অবস্থা ও মূল্য পর্যালোচনা
২০২৫ সালের ১৬ মে, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) স্বর্ণের দাম হ্রাস করার ঘোষণা দেয়। তাদের মতে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় নতুন এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষ করে, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ৬৯ হাজার ১৮৬ টাকা থেকে কমিয়ে এক লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে – যা স্বর্ণের দামের ইতিহাসে বর্তমান সময়ের সর্বনিম্ন।
- ২১ ক্যারেট: নতুন দাম – ১,৫৮,১৯৯ টাকা (আগে ছিল ১,৬১,৫০০ টাকা)
- ১৮ ক্যারেট: নতুন দাম – ১,৩৫,৬০৫ টাকা (আগে ছিল ১,৩৮,৪২৮ টাকা)
- সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ: নতুন দাম – ১,১২,০৩২ টাকা (আগে ছিল ১,১৪,৪৩৬ টাকা)
বাজুস এর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিক্রয়মূল্যে ৫% সরকার নির্ধারিত ভ্যাট এবং বাজুস নির্ধারিত ৬% ন্যূনতম মজুরি যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির ভিন্নতা থাকতে পারে।
স্বর্ণের দামে হ্রাস: প্রভাব ও বিশ্লেষণ
স্বর্ণের দাম কমে যাওয়ার অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এটি শুধুমাত্র স্বর্ণ ব্যবসায়ী বা গহনার দোকানদারদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, সাধারণ জনগণের জন্যও স্বস্তির খবর। বিশেষ করে যেসব পরিবার বিয়ের জন্য স্বর্ণ ক্রয়ের পরিকল্পনা করছিল, তারা এখন অপেক্ষাকৃত কম খরচে পণ্য ক্রয় করতে পারবে।
এই দামের হ্রাসের অন্যতম কারণ হতে পারে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দরপতন, দেশের মুদ্রানীতি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। এর ফলে বাজারে স্বর্ণের আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।
আরও একটি বিষয় হলো, বিগত কয়েক মাসে রূপার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও স্বর্ণের দাম বারবার ওঠানামা করেছে। এই ধরণের অস্থিরতা বাজারে স্বর্ণের চাহিদাকে প্রভাবিত করে, ফলে দাম কমানো একটি কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা হতে পারে।
আরও পড়ুন: ভারতের মুদ্রার দাম কেমন?
ভবিষ্যৎ প্রবণতা: স্বর্ণ বিনিয়োগের দিকনির্দেশনা
যেহেতু স্বর্ণ একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই দামের এই হ্রাস অনেককে বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে দেখছে। তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, দামের ওঠানামার পূর্বাভাস সহজ নয়। তাই স্বর্ণ কিনতে হলে, তাৎক্ষণিক লাভের আশায় নয়, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করাই ভালো।
স্বর্ণ ও রূপার বর্তমান মূল্যতালিকা
বাজুস প্রদত্ত নতুন মূল্যতালিকা অনুসারে:
- ২২ ক্যারেট সোনা – ১,৬৫,৭৩৪ টাকা
- ২১ ক্যারেট সোনা – ১,৫৮,১৯৯ টাকা
- ১৮ ক্যারেট সোনা – ১,৩৫,৬০৫ টাকা
- সনাতন পদ্ধতির সোনা – ১,১২,০৩২ টাকা
- ২২ ক্যারেট রূপা – ২,৫৭৮ টাকা
- ২১ ক্যারেট রূপা – ২,৪৪৯ টাকা
- ১৮ ক্যারেট রূপা – ২,১১১ টাকা
- সনাতন পদ্ধতির রূপা – ১,৫৮৬ টাকা
বাজুস এই মূল্যতালিকা শুক্রবার (১৭ মে) থেকে কার্যকর ঘোষণা করেছে।
ভোক্তাদের করণীয়
স্বর্ণ ক্রয়ের পূর্বে বাজার যাচাই ও নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে ক্রয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজুস সদস্যভুক্ত দোকানগুলোর দামের তালিকা ও পরিষেবার মান তুলনামূলক ভালো।
বর্তমানে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। এই সময় সঠিক তথ্য ও মূল্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় বা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া শ্রেয়।
FAQs: স্বর্ণের দাম নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
বর্তমানে ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত?
বর্তমানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের এক ভরি দাম ১,৬৫,৭৩৪ টাকা।
স্বর্ণের দাম কমার প্রধান কারণ কী?
মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন ও স্থানীয় চাহিদা হ্রাসের কারণে দাম কমানো হয়েছে।
রূপার দাম কি পরিবর্তিত হয়েছে?
না, রূপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এই দাম কতদিন কার্যকর থাকবে?
বাজুস সাধারণত মাসিক বা পরিস্থিতিভেদে দাম হালনাগাদ করে থাকে।
স্বর্ণ বিনিয়োগ কি এখন উপযুক্ত?
দামের হ্রাস বিনিয়োগের ভালো সুযোগ তৈরি করেছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করাই উত্তম।
বাজুস কিভাবে দাম নির্ধারণ করে?
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দাম নির্ধারণ করে বাজুসের কমিটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।