জুমবাংলা ডেস্ক : বিগত ৬৩ বছরের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ লবণ উৎপাদন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশে উৎপাদিত লবণের পরিমাণ ২২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মৌসুম শেষ হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক বাকি থাকতেই এবার লবণের উৎপাদন ৬৩ বছরের আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। উপকূলের ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে এখন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৩৯ হাজার টন। বৃষ্টিবিহীন বাকি দিনগুলো পাওয়া গেলে উৎপাদিত হবে আরও অন্তত ৩ থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ।
তবে এরই মধ্যে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। বাণিজ্যিকভাবে লবণ চাষে গত ৬৩ বছরে ২২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন লবণ কখনো উৎপাদিত হয়নি। সর্বশেষ ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল।
বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, জেলাতে বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীতে ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। গত মৌসুমে এই সময়ে উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ২১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের তুলনায় এ পর্যন্ত ৬৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ বেশি উৎপাদন হয়েছে।
বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, মৌসুমজুড়ে দাবদাহ, ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমির শতভাগে আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তিতে চাষাবাদ এবং অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৩৩ একরের বেশি জমিতে লবণ চাষের কারণে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে।
বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ২০২০ সালে যখন লবণনীতি করা হয়, তখন দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। চলতি মৌসুমে দেশের লবণের চাহিদা ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, একদিকে যেমন ৬৩ বছরের মধ্যে এবার রেকর্ড লবণ উৎপাদন হয়েছে ঠিক তেমনি দৈনিক গড়ে লবণ উৎপাদন হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ। আগে যেখানে দৈনিক গড়ে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ হয়েছে সেখানে এই রেকর্ড ছাড়িয়ে চলতি মৌসুমে দৈনিক গড়ে ৩৯ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। আশা করি, যদি দাবদাহ আর কিছুদিন থাকে তাহলে দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙিখালী, খারাংখালী, সিকদারপাড়া, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, পিএমখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উৎপাদিত লবণচাষিরা মাঠের ওপর স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ কেউ বাড়িঘরের আঙিনায় মজুত করে তার ওপর পলিথিন বিছিয়ে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই লবণ মাঠে গর্ত করে পলিথিন বিছিয়ে লবণ মজুত করছেন।
চৌফলদন্ড এলাকার চাষি গিয়াস ও খুরুশকুলের চাষি ইদ্রিস বলেন, এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। কয়েক দিন পর অর্থাৎ বৃষ্টি হলেই লবণের মৌসুম শেষ হবে। তখন প্রতি মণ লবণের দাম আরও ১০০ টাকা বেড়ে যেতে পারে। প্রতি মণ লবণ তখন ৪০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি টাকায় বিক্রি হবে এই আশায় চাষিরা লবণ মজুত করছেন।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, টানা দাবদাহ পরিস্থিতিতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। তবে লবণের দাম কমে গেছে। এখন প্রতি মণ লবণ ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুমের শুরুতেই সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরুর ৬৩ বছরে এবার চাষিরা লবণ উৎপাদনে যে সাফল্যে দেখিয়েছেন, অতীতে এমনটা আর হয়নি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে চাষিরা লবণ মাঠে ফিরেছে এবং দামও ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড লবণ উৎপাদিত হয়েছে।
সূত্র ও ছবি : সময় টিভি অনলাইন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।