জুমবাংলা ডেস্ক : আজ থেকে বহু বছরের পুরনো কথা। একটা সময় দেশে মেছো বিড়াল বা মেছো বাঘ নিয়ে কিছু গল্প প্রচলিত ছিল। প্রচলিত সেইসব গল্পের নিরিখে আজ আমরা পাঠকদের জন্য একটি বিচিত্র প্রাণী নিয়ে আলোচনা করবো। আসলে এ তেমন কোনো বিচিত্র প্রাণী নয়, একটি পূর্ণবয়স্ক সাধারণ মেছো বিড়াল, অনেকে যাদের মেছো বাঘ বলেও ডাকে।
একটা সময় কিছু মেছো বাঘ জন্মগত অসুখে আক্রান্ত ছিল—রোগের নাম ‘অ্যালবিনিজম’। এ হচ্ছে এক ধরনের জন্মগত ব্যাধি, যা প্রাণীদের চুল, নখ ও ত্বককে বিবর্ণ করে দেয়। এভাবেই প্রকৃতির বুকে আসে অ্যালবিনো প্রাণীরা। স্বজাতির থেকে আলাদা ধবধবে ফর্সা এই প্রাণীগুলো শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ কিংবা আলোকচিত্রীদেরও বিশেষ আগ্রহ এবং কৌতূহলের বিষয়।
সংখ্যায় কম হলেও সারা দুনিয়ায় অ্যালবিনো প্রাণীদের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। যেখানে প্রাণী আছে সেখানেই এরা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এদের প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে বন্য প্রাণী চোরাচালান সিন্ডিকেটের। কারণ, আন্তর্জাতিক চোরা বাজারে অ্যালবিনো প্রাণীদের রয়েছে বিরাট চাহিদা।
দেড় দশক আগে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে শীতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানায় একটি সাদা মেছো বাঘ আনা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বন্য প্রাণীপ্রেমী, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং আলোকিত্রীরা ছুটে যান শীতেশ বাবুর বাড়িতে।
বছর চারেক আগে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় যে অ্যালবিনো বাঘের বাচ্চাটি জন্মগ্রহণ করেছিল, তাকে নিয়েও কম আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। মোটকথা, এরা বরাবরই সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
এবার আলোচনায় আশা যাক দেশের প্রকৃতির এক অতি সাধারণ বন্য প্রাণীকে নিয়ে, যাকে এখনো অনেক জায়গায়ই কমবেশি দেখতে পাওয়া যায়। সে হচ্ছে শেয়াল (Golden jackal)। শেয়াল নিজ চোখে দেখেনি এমন মানুষ এখনো দেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে সাদা শেয়াল দেখেছে, এমন মানুষ এ দেশে পাওয়াও বিরল। যদিও আমাদের প্রকৃতিতে কিন্তু সাদা শেয়ালও আছে। সম্প্রতি বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী আলমাস জামান অতি বিরল এক জোড়া অ্যালবিনো শেয়ালের ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছেন।
বন্যপ্রাণীসংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপের মাধ্যমে আলোকিত্রী আলমাস জামান প্রথমে সাদা শিয়ালের খবরটি জানতে পান। এ ধরনের সংবাদে যেকোনো ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার উত্তেজিত হয়ে উঠতে বাধ্য। আলমাসের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এরপর এদের অবস্থান খুঁজে বের করার পর শুরু হয় ছবি তোলার চেষ্টা। শেয়ালগুলো তাদের অবস্থান ছেড়ে বের হয় সন্ধ্যার একটু আগে, তখন ছবি তোলার মতো পর্যাপ্ত আলোর অভাব দেখা দেয়। চলে দিনের পর দিন চেষ্টা। এরপর লেন্সবন্দী হয় সাদা শেয়ালের ছবি। আলমাস জামান জানান, সাদা শেয়ালগুলো যেখানে আছে, সেখানকার মানুষ তাদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল। লোকজন এদের রীতিমতো পাহারা দিয়ে রাখে, বিভিন্ন ফার্মের মৃত মুরগিও এনে এদের দেওয়া হয় খাওয়ার জন্য।
৭০ বছরেও থাকে ভরা যৌবন, দেখতে হুবহু ১৬ বছরের তরুণীর মতো এই গ্রামের নারীরা
দেশের প্রকৃতিতে দেখা যাওয়া সাদা শেয়ালগুলো সম্পর্কে প্রখ্যাত বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান জানান, এই দুর্লভ প্রাণীগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এদের বয়স কম। এদের বাঁচিয়ে রাখতে পারলে প্রকৃতিতে আরও সাদা শেয়াল বেড়ে উঠবে। তবে তিনি আরও জানান, সাদা কিংবা কালো নয়, প্রতিটি বন্য প্রাণীই প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। যত দিন পর্যন্ত আমরা এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারব, তত দিন নিজেদের সভ্য জাতি বলে দাবি করার অধিকার নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।