জুমবাংলা ডেস্ক : যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র ও জনতার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ১০ জন প্রতিনিধি। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা ও আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় পাঁচ শতাধিক ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, স্বরচিত গানের পর আলোচনা শুরু হয়। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের শিক্ষার্থী ইমরান খান, মারুফ হাসান ও আব্দুল্লাহ আল লাইস।
স্বাগত বক্তব্যে তারা বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্ররা যখন আন্দোলন ও দেশ গড়তে ব্যস্ত সময় পার করছে তখন এক শ্রেণির নব্য ফ্যাসিস্ট হামলা, লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্বৈরাচার সরকারকে যেভাবে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে দখলদারিত্ব, লুটপাট বন্ধ না করলে তাদেরকেও সেভাবে দেশ ছাড়া করা হবে। গত ১৭ বছরে আপনারা যা পারেননি ছাত্ররা তা করে দেখিয়েছে এটা ভুলে গেলে চলবে না।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ছাত্র বিপ্লবে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের দাবির কথা শোনা হয়। এ সময় জুলাই বিপ্লবে ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত কেশবপুর উপজেলার শিক্ষার্থী তৌহিদের বাবা জব্বার আলী ও গুরুতর আহত শার্শা উপজেলার শিক্ষার্থী নূর হুসাইনের বোন সুরাইয়া ইসলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে অনুরোধ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আকরাম হুসাইন ও যশোরের অন্যতম সমন্বয়ক সোহানুর রহমান সোহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াহিদ উজ্জামান, আশরেফা খাতুন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু বকর খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা ফারিন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুইনুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বজিৎ দত্ত, এনইউবি’র তৌহিদ ইসলাম শুভ, ডিআইইউ’র বাবু খান, বদরুন্নেসা কলেজের জান্নাত। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলার সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-জনতার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ১০ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের প্রতিনিধিদল। প্রশ্নের উত্তরে আগত প্রতিনিধিরা বলেন, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিনিধি নির্বাচন করছি। এই প্রতিনিধিরা অনিয়ম করলে আপনারা সেটি তুলে ধরতে পারবেন। নির্বাচিত সরকার আসার আগে আমরা দেশের সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। দেশ সংস্কারের পর আমরা পুনরায় পড়ার টেবিলে ফিরে যাব। আমাদের ভেতরে মিশে থাকা ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। সমন্বয়ক বা প্রতিনিধি মানে আলাদা কিছু না। আমরাও আপনাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের শিক্ষা খাতে সংস্কার করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লেজুরভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষকদের মধ্যকার রাজনীতি দূর করতে এই সরকার কাজ করছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু করা হবে। পড়াশুনা করে চাকরির পেছনে না দৌড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান করেন তারা।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের প্রতিনিধিরা আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ফ্যাসিবাদ কাঠামো দূর করা। আমরা ফ্যাসিবাদীর পতন চেয়েছিলাম, ব্যক্তি শেখ হাসিনার পতন না। গত ৫ আগস্টের পর নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে। তাদের উৎখাত না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আলেমরা চাইলে রাজনীতিতে আসতে পারেন। শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগে জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার বিচার করবে সরকার। পরে ধারাবাহিকভাবে সকল হত্যা, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিচার করা হবে।
শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিনিধিরা বলেন, সামনে হয়ত নতুন একটি রাজনৈতিক সংগঠন আসবে। তবে সেটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে না। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংবিধান সংশোধন করা হবে। এই সরকার অবশ্যই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, মতবিনিময় অনুষ্ঠানের বাইরে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা দেখা গেলেও যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রথম সারির ছাত্র নেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।