জুমবাংলা ডেস্ক : কয়েক বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন জয়পুরহাট আক্কেলপুরের রুকিন্দিপুর ইউনিয়নের কানুপুর মুনইল গ্রামের খামারে । এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েন। অভাব-অনটনের সংসারে দু-একটি দেশি হাঁস-মুরগি পালন এবং পান-সিগারেট বিক্রি করে কোনোভাবে সংসার চালাতেন। এতে অভাব দূর হতো না। সে সময় বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাট রুরাল ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের (জেআরডিএম) কথা জানতে পারেন। সেখান থেকে বিনামূল্যে মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নেন। এখন তিনি একজন সফল খামারি। দেশি মুরগির খামার করে ভাগ্য বদলেছে তার।
প্রশিক্ষণ শেষে সুফিয়াকে বিনামূল্যে মুরগি পালনের উপকরণসহ এক হাজার দেশি মুরগির বাচ্চা দেয় জেআরডিএম। সেগুলো লালন-পালন করে বিক্রির করে তার অভাব দূর হয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকে ভাগ্য বদলের দিন শুরু।
বর্তমানে তার খামার থেকে দেশি মুরগির ডিম ও মুরগি বাণিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে। এখন তার সেডে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মুরগির বাচ্চা আছে। শুধু সুফিয়া বেগমই না, তার মতো জেলায় ৭৬টি পরিবার বিনামূল্যে দেশি মুরগির বাচ্চা, উপকরণ পেয়ে সেগুলো লালন-পালন করে সাবলম্বী হয়েছে।
সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারে অভাব লেগেই থাকে। তিনি ছোট্ট একটি দোকান রেখে যান। সেখানে পান, বিড়ি ও সিগারেট বিক্রি করে কিছু আয় রোজগার করতাম। তা দিয়ে দুই বেলা খেতেও পারতাম না। ফলে ধার-দেনা করে চলতে হতো। দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়তো। আমার কষ্ট দেখে জেআরডিএম সংস্থা একদিন তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে মুরগির বাচ্চা ও মুরগি পালনের উপকরণ দেন। সেই বাচ্চা লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করে ধার-দেনা পরিশোধ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারাও সুখে আছে, আমিও সুখে আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রয়লার, সোনালি ও কক মুরগি পালনের চেয়ে দেশি মুরগি পালন অনেক সাশ্রয়ী। কারণ, দেশি মুরগির খাবারের জন্য চিন্তা করতে হয় না। এই মুরগি বাড়ির উঠানের আশাপাশে ঘাস ও পোকা-মাকড় খেয়ে থাকে। তাছাড়া এ জাতের মুরগির খুব বেশি রোগ হয় না। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভবনা কম থাকে এবং লাভ বেশি হয়।’
দেশি মুরগি পালন করে সুফিয়া স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি অনুপ্রাণিত করেছেন স্থানীয় নারী ও পুরুষ খামারিদের। শুধু সুফিয়া না, স্বল্প পুঁজি এবং নামমাত্র শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় জেলার বেকার তরুণ-তরুণী ও নারীরাও দেশি মুরগি পালন করছেন। এতে বাড়ছে কর্মসংস্থান, দেশীয় পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন।
তাদেরই একজন খামারি কামরুজ্জামান জুয়েল। তিনি বলেন, ‘সুফিয়ার এমন সাফল্য দেখে আমিও জেআরডিএম’র কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশি মুরগি পালন করছি। আগে বিদেশি মুরগি পালন করতাম। বেশি পরিমাণে খাবার লাগতো, রোগ-বালাই লেগেই থাকতো। বিক্রি করেও তেমন লাভ হতো না। এখন দেশি মুরগি পালন করে লাভবান হচ্ছি।’
জেআরডিএমের নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘স্বাদ ও গুণগতমান বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে দেশি মুরগি ও ডিমের চাহিদা। তবে চাহিদা থাকলেও কমে গেছে এ মুরগি পালন। তাই পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও জেআরডিএমের সার্বিক সহযোগিতায় সমাজের অবহেলিত নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, জয়পুরহাটে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৭৬ জন খামারির মাঝে বিনামূল্যে দেশি মুরগির বাচ্চা ও উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। তা থেকে তারা এখন নিজের ভাগ্য বদলিয়ে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। এভাবে বেকারত্ব দূর এবং অবহেলিত নারী পুরুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরে তিনি খুশি।
জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন, ‘এই জেলায় ছোট-বড় প্রায় তিন শতাধিক দেশি মুরগির খামার আছে। এসব খামারে লাখ লাখ মুরগি লালন-পালন করা হচ্ছে। দেশি মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ করতে পরামর্শ দিতে মাঠে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।