জুমবাংলা ডেস্ক : সৌদি নিয়ে কাজ দেওয়ার কথা বলে এক কৃষকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আল আমিন নামে এক প্রবাসী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার সুরাহা চেয়ে থানায় যান ভুক্তভোগী পরিবার। তবু মেলেনি কোনো সমাধান। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
ঘটনাটি নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী নাজমা বেগম গোবিন্দশ্রী গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন। আল আমিন ও স্ত্রী নাজমা বেগম একই গ্রামের কৃষক আবুল কালামের ছেলে অলি আহম্মদকে সৌদি আরব নিয়ে কাজ দেবে বলে দুই দফায় মোট পাঁচ লাখ টাকা নেয়।
এর মধ্যে প্রথম দফায় নেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। পরে আরেক দফায় তাদের দেড় লাখ টাকা দেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রথম দফায় টাকা পরিশোধসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হলে সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন অলি আহম্মেদ। পরে সেখানে এসে জানতে পারেন তাকে সৌদি যাওয়ার জন্য যে কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে, তা ভুয়া।
পরে বাড়িতে ফেরত আসেন অলি। বিষয়টি নিয়ে আল আমিন ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ‘তাদের ভুল হয়েছে।’ পরে আবারো আশ্বাস দিয়ে অলির কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেন আল আমিন ও তার স্ত্রী। ফের ভুয়া কাগজপত্র দেওয়ায় দ্বিতীয় বারের মতো ঢাকার বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয় অলি আহম্মেদকে।
আল আমিন ও তার স্ত্রীর এমন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে এলাকার লোকজন নিয়ে টাকা ফেরত চান অলির পরিবার।
কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করে আল আমিনের স্ত্রী নাজমা। এ ঘটনায় মদন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী অলির পরিবার। তবে মদন থানায় অভিযুক্ত নাজমা বেগমের এক আত্মীয় পুলিশ সদস্য কর্মরত থাকায় অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। উল্টে ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে কোনো উপায় না পেয়ে গতকাল রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন অলি আহম্মেদের পরিবার।
ভুক্তভোগী অলি আহম্মেদ বলেন, ‘ আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক। আল আমিন ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম আমাকে সৌদি নিবে বলে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু থানায় নাজমা বেগমের আত্মীয় থাকায় কোনো বিচার পাইনি। এখন ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’
অলি আহম্মেদ আরো বলেন, ‘আমাদের ফসলি জমি বিক্রি করে তাদের টাকা দিয়েছি। তারা আমার অনেক ক্ষতি করেছে। এখন টাকা চাইলে মামলা দিয়ে হয়রানি করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর এমন প্রতারণার ফাঁদে এখন আমার পরিবার নিঃস্ব। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
প্রতিবেশী আবুল হাসেম মিয়া জানান, ‘আমরা জানি আল আমিন ও তার স্ত্রী অলিকে সৌদি আরব নিয়ে যাবে বলে টাকা নিয়েছে। ৫ লাখ টাকা নিয়েছে এটা আমিসহ এলাকার অনেক লোকজন জানেন। এখন শুনি বিদেশ নেওয়ার কাগজপত্র সব ভুয়া।’
প্রবাসী আল আমিনের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, ‘অলি সৌদি আরব যাবে বলে কথা বার্তা হয়েছে। আমি কোনো টাকা পয়সা অলির কাছ থেকে নেইনি। বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল। সেই টাকা আমি ফেরত নিয়েছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য বিশাল আহম্মেদ মাসুম বলেন, ‘অলিকে বিদেশ নেবে বলে আল আমিন টাকা নিয়েছে বিষয়টি শুনেছি।’
মদন থানার ওসি (তদন্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, থানায় যে অভিযোগ দিয়েছিল, সেই বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি। মদন থানায় কর্মরত কোনো পুলিশ সদস্য এর সঙ্গে জড়িত আছে কি না, খতিয়ে দেখব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।