জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার ঘটনা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। চমকপ্রদভাবে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক ও ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের নামে ব্যবসায়িক লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়েছে!
সম্প্রতি ডিএনসিসি ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করায় যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শিথিল হয়েছে। ফলে অনেকেই ভুল তথ্য, মিথ্যা পরিচয় ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে লাইসেন্স সংগ্রহ করছেন। যার মধ্যে আছে ভুয়া তথ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে লাইসেন্স সংগ্রহের ঘটনা। কাঁকড়া মাছের ব্যবসা করতে তার নামে একটি লাইনেন্স অনুমোদন হয়। এছাড়া ইলন মাস্কের নামেও রেস্টুরেন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স অনুমোদন হয়েছে।
জানা গেছে, ট্রাম্পের নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয় ১১ মার্চ বিকেলে। লাইসেন্স অনুযায়ী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম ‘ট্রাম্প এসোসিয়েশন’। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাবার নাম ফ্রেড ট্রাম্প। মায়ের নাম ম্যারি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্প। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মা-বাবার নামানুসারেই এ নাম দেওয়া হয়। আর লাইসেন্সে মালিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা সবই দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের। তবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ঢাকার আফতাবনগরে।
আবেদনকারী নির্ধারিত সব ফি (মোট ২ হাজার ২৬৫ টাকা) ডিএনসিসির অনুকূলে পরিশোধ করে লাইসেন্সটি পেয়েছেন। লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন। নিয়ম অনুসারে, মেয়াদকালের মধ্যে তিনি চাইলে এই লাইসেন্স প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লাইসেন্সের আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারী দুটি নথি যুক্ত করেছেন। একটি অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র, অন্যটি একজন চীনা নাগরিকের বাংলাদেশের ভিসা। লাইসেন্সটি দেওয়া হয়েছে ডিএনসিসির অঞ্চল-১০-এর সাতারকুল এলাকা থেকে। ব্যবসার প্রকৃতি দেখানো হয়েছে অন্যান্য-একক এবং ব্যবসার ধরন কাঁকড়া মাছ বিক্রেতা।
শুধু ট্রাম্প নন, ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ ও ইলন মাস্কের নামেও রেস্টুরেন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স অনুমোদন হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভুল তথ্য জমা পড়লেও ডিএনসিসি যাচাই-বাছাই না করেই অনুমোদন দিয়েছে।
আরেকটি অবিশ্বাস্য ঘটনা হলো, মো. নুরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি আবাসিক ভবনের ঠিকানা ব্যবহার করে আইসক্রিম কারখানার লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। তবে সাংবাদিকরা সেখানে গিয়ে কোনো কারখানার অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। নুরুজ্জামান স্বীকার করেছেন যে তিনি ডিএনসিসির এক সামছু নামের কর্মকর্তাকে ১০,০০০ টাকা ঘুষ দিয়েছেন, যদিও লাইসেন্স ফি ছিল মাত্র ৪,২৬৬ টাকা।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দাবি করেছেন, নাগরিকদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তদন্ত চালানো হয়। তবে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান সতর্ক করে বলেছেন, যাচাই ছাড়া লাইসেন্স প্রদান নগর ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
সাধারণত ট্রেড লাইসেন্সের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণপত্র, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। তবে যাচাই ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে বলে অনুমোদিত লাইসেন্সের সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।