জুমবাংলা ডেস্ক : ঈদগাহ হলো ঈদের নামাজ আদায় করার নির্ধারিত স্থান। ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত। ঈদের নামাজ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। সবাই চান পরিবার পরিজন নিয়ে জামাতের সঙ্গে নিজের পছন্দের মসজিদে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে।
গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ
অন্যান্য সময় পাড়া বা মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়লেও ঈদের নামাজ জাতীয় ঈদগাহ বা বায়তুল মোকাররমে মানুষ আদায় করতে চান। আর এই দুই জায়গায় না হলে নিজ এলাকার বিখ্যাত বা বড় মসজিদে মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। আসুন জেনে নেই ঈদের নামাজ পড়তে কারা কোন মসজিদে যায় ও কখন ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান
ঢাকা জেলার হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। এই ঈদগাহে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রসাশনিক ব্যক্তিবর্গ ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। জাতীয় ঈদগাহ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি ঈদের নামাজের স্থান।
সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রায় ৩৫ হাজার নারী-পুরুষ একসঙ্গে ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করবেন। এ জন্য ইতোমধ্যে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ঈদ জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ক্বারী দায়িত্ব পালন করবেন।
২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসাথে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাত আদায় করতে পারবেন। এছাড়াও অনেক মুসল্লি মূল প্যান্ডেলের বাইরে ঈদের জামাত আদায় করে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন হাইকোর্ট মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে প্রধান ঈদের জামাতে সর্বস্তরের মুসল্লিদের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। এ সময় তার পরিবারের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
এছাড়া বরাবরের মতো এ ঈদ জামাতে প্রধান বিচারপতি, বিচারপতিগণ, মন্ত্রী-সচিব, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিবেন।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ
রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে অবস্থিত বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। এই মসজিদে একসাথে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। ফলে ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। তাই রাজধানীর সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসেন।
সরকারী আমলা, মন্ত্রী-সচিবরাও এই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব শ্রেণী পেশার মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে আসেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাতটা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এতে ইমাম হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান এবং মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন ক্বারী মো. ইসহাক মুয়াজ্জিন।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়। ইমাম থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. এহসানুল হক এবং মুকাব্বির থাকবেন খাদেম মো. আব্দুল হাদী।
তৃতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। এতে বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম ইমাম হিসেবে এবং খাদেম মো. আব্দুল হাদী মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠেয় চতুর্থ জামাতে ইমাম হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী এবং মুকাব্বির হিসেবে বায়তুল মোকাররমের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন থাকবেন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত হবে বেলা পৌনে ১১টায়। এতে ইমাম হিসেবে থাকবেন আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমরান বিন নূরউদ্দীন এবং মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররমের খাদেম মো. রুহুল আমিন।
তবে এই পাঁচটি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন।
রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ বা আজাদ মসজিদ
ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকার অন্যতম প্রিয় মসজিদ গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ যা আজাদ মসজিদ বলেও পরিচিত। কোরআন আর হাদীসের বাণী সম্বলিত বাধাঁই করা কিছু অসাধারণ ছবির জন্য এই মসজিদটি অন্যরকম একটি জায়গা দখল করে আছে।
মূলত দেশের ধনাঢ্য ব্যাক্তিবর্গ ও বড় বড় ব্যাবসায়ীরা এই মসজিদটিতে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। অভিজাত এলাকার মানুষ ছাড়াও বনানী ও বারিধারার মানুষ এ মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে আসেন। গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে (আজাদ মসজিদ) ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সকাল সাড়ে ৮ টায় ও ১০ টায়।
কুয়েতি মসজিদ
চারতলা ভবন। ঘিয়ে রঙের মধ্যে সোনালি কারুকাজ। ছাদে সুদীর্ঘ দুটি মিনার। জানালার কাচগুলো নীলাভ। সুবিশাল প্রবেশদ্বার। ভেতরে সাদা আর খয়েরিরঙা টাইলসের মেঝে।
ভবনের চারপাশে গাছগাছালির ছায়া। মিরপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত নয়নাভিরাম এই ভবনটি পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদ। কুয়েতের অর্থায়নে র্নিমিত হওয়ায় অনেকে এটাকে কুয়েতি মসজিদও বলে।
প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর ধরে করা এ মসজিদ মিরপুরবাসীর ঈদের নামাজের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। প্রতি বছরের মতো ঈদের নামাজ পড়তে এই মসজিদে মিরপুরের বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নামাজ পড়তে আসেন।
মিরপুরে স্টেডিয়াম থাকায় এই মসজিদে অনেক সময় জাতীয় দলের ক্রিকেট খেলোয়াড়রাও নামাজ পড়তে আসেন। কুয়েতি মসজিদে সকাল ৮টা ও ৯টায় ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জামাত
সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জমঈয়তে আহলে হাদিসের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় সকাল ৮টা ও ৯টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদে সকাল ৮টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায়, আজিমপুর ঢাবি আবাসিক এলাকার বায়তুন নূর জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত হবে।
বুয়েট এলাকায় জামাত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল সোয়া ৭টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। খোলা মাঠে নামাজের জামাতের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ জারি করা হলে বা আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে খেলার মাঠের পরিবর্তে নামাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে প্রথম জামাত বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত বকসি বাজার বায়তুস সালাম মসজিদে সকাল ৮টায় এবং আজাদ আবাসিক এলাকা মসজিদে সকাল ৮টায় তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট এলাকায় ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন।
রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় ঈদের জামাত
কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তিনটি জামাত যথাক্রমে সকাল ৭টা, ৮টা ও পৌনে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে, দারুস সালাম মীর বাড়ি আদি (মাদবর বাড়ি) জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা ও সকাল ৮টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার মিয়া সাহেবের ময়দান খানকা শরীফ জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, লক্ষ্মীবাজার নূরানি জামে মসজিদে সকাল পৌনে ৮টা ও সকাল সাড়ে ৮টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে, খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া পল্লীমা সংসদ প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে ৭টায় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।