জুমবাংলা ডেস্ক : ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আর এগোয়নি। তবে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেতে শুরু করেছে। এক দশকেরও বেশি সময় পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। সে সফরের আগে সম্প্রতি সফর করে গেছে দেশটির শক্তিশালী ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল।
এদিকে আবারও চালু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট। এতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হুসেইন।
গতকাল রোববার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চলাচলের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হুসেইন। তিনি বলেছেন, এটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত শনিবার পেশোয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে হাইকমিশনার এ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে দুই দেশের মধ্যে পর্যটন, শিক্ষা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
ইকবাল হুসেইন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। তিনি বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও গুরুত্ব দেন, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণরা তাদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে সক্ষম হচ্ছে। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদার কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও করাচির মধ্যে শিপিং রুটের মাধ্যমে বাণিজ্য চলছে বলে জানান তিনি।
তবে এখনও অধরাই থেকে গেল দুই দেশের ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো। সম্প্রতি পাকিস্তানে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের ঘোষণা দেন। ২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের পর এটিই দেশটির প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের আগে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করে পাকিস্তানি একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, ভিসা সহজীকরণ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণন, শিক্ষা, পর্যটন ও সিরামিক খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলটি।
তবে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার মধ্যেও ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোটাদাগে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ত্রিদেশীয় চুক্তির বাস্তবায়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় জব্দ করা বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এখনও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ বরাবরই পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিচ্ছিন্নভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে ৭১-এর ভুল শিকার করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সে সময়ের সংঘটিত অপরাধের জন্য এখনও ক্ষমা চায়নি ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ জব্দ করে পাকিস্তান। স্বাধীনতার পর সে সম্পদ ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিষয়টি এখনও সুরাহ হয়নি। যদিও ১৯৭১ সালের সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার বর্তমানে মান অনেক বেশি।
এর বাইরে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে চুক্তি হয়েছিল। জাতিসংঘের সংজ্ঞানুযায়ী নৃশংস কর্মকাণ্ডের কারণে ১৯৫ পাকিস্তানিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পাকিস্তান এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে সেটি আর করেনি দেশটি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে আটকে থাকা বিহারি নাগরিকদেরও আর ফেরত নেয়নি পাকিস্তান।
সম্প্রতি মিসরের রাজধানী কায়রোয় ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বৈঠকে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মীমাংসা করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।