জুমবাংলা ডেস্ক : তাপপ্রবাহত অত্যাচারিত বাংলাদেশের জনজীবন। উত্তর থেকে দক্ষিণ—প্রায় সব জায়গাতেই এখন গরমের তীব্রতা আছড়ে পড়ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা—সবখানেই মানুষ হাহাকার করছে অসহ্য গরমের জন্য। আজ শুক্রবার, প্রকৃতি যেন বিরূপ মুখে হেসেছে, দেশের একাধিক স্থানে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায় আজ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ বলে জানানো হয়েছে।
Table of Contents
বিশাল তাপপ্রবাহের চিত্র: দেশের বিভিন্ন স্থানে
আজকের তাপমাত্রা বর্ণনা করতে গিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, “গতকাল বৃহস্পতিবারের চেয়ে আজ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তাপপ্রবাহের পরিধি বেড়ে গেছে।” এর ফলে আজ দেশের সব প্রধান শহরগুলোই তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে গেছে। বিশেষ করে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের জন্য তাপপ্রবাহের আগমন অত্যন্ত তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দুই দিন এই অবস্থার স্থায়িত্ব অব্যাহত রাখতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সঠিক সময় মুষলধারে বৃষ্টি না হলে তাপপ্রবাহের তীব্রতা কিছুটা কমানোর লক্ষণ নেই। গত বুধবার থেকেই পুরোদমে গরম পড়তে শুরু করেছে; তবে এপ্রিল মাসে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল কারণ পশ্চিমা লঘুচাপ সক্রিয় হয়ে কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
মূল কারণ: অপর্যাপ্ত বৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রা
শুধু গরম কেন বেশি? ঢাকার ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার পর আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ যুক্তি দিয়েছেন, “এমন উষ্ণতর তাপমাত্রা মে মাসে অস্বাভাবিক নয়।” আবহাওয়া পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে, তিনি আরও জানান, মার্চ মাসে তাপমাত্রা তেমন থাকে না কারণ পশ্চিমের লঘুচাপ প্রভাবযুক্ত থাকে। কিন্তু এখন তেমন কোনো প্রভাব নেই, তাই মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে।
তাপমাত্রার শ্রেণীবিভাগ
- মৃদু তাপপ্রবাহ: ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- মাঝারি তাপপ্রবাহ: ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- তীব্র তাপপ্রবাহ: ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- অতি তীব্র তাপপ্রবাহ: ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি
এবারের মে মাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি যথেষ্ট উদ্বেগের সূচনা করছে। দেশের অন্য মাসগুলোতে গরম পড়লেও মে মাসে কিছুটা সহনীয় অবস্থানে ছিল। তবে গত এক সপ্তাহ টানা তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অপর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে একটি বিপদের দিকে যাচ্ছে দেশের আবহাওয়া।
মাঝে মাঝে বেড়ে যাওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে মানুষ উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে যুদ্ধ করতে শুরু করেছে। অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভীত হচ্ছে এবং তাপমাত্রা বাড়ার প্রভাবে মহিলাদের জন্য বিশেষ কষ্টকর হয়ে উঠছে। তাপপ্রবাহের ফলে স্বাস্থ্যের নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে শিশুরা এবং বৃদ্ধরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কবে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পশ্চিমা বায়ুর পরির্বতনের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে পারে এবং বৃষ্টি বাড়তে পারে।
এছাড়া, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা যশোরে পরিলক্ষিত হয়। এখন তাই অপেক্ষা করে দেখতে হবে, উচ্চ তাপমাত্রার এই দ্বারা বাংলাদেশ কতদিন পিষিত হবে।
বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন
বাংলাদেশ একা নয়, বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেও মানবিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে এমন পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া উচিত যাতে একই ধরনের প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে।
যে সমস্ত অভিজ্ঞতা এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো আলোচনা করে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা হাতে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।
- পানি খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে
- রোদ থেকে বাঁচতে হবে
- শিশুদের বাইরে না নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে
অতএব, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দেশের সকল নাগরিককে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে: বেশী করে পানি পান করতে হবে, বাইরের কাজ পূর্বকালে শেষ করতে হবে এবং সবচেয়ে বেশি রোদ পড়া সময়ের মধ্যে ঘরের ভিতরে থাকতে হবে।
প্রকৃতির এই খামখেয়ালির মধ্যে আমাদের উচিত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া।
আরও পড়ুন: আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারী তথ্য
FAQs
১. বাংলাদেশের তাপমাত্রা কেন বেড়ে যাচ্ছে?
তাপমাত্রা বৃদ্ধি সাধারণত বৃষ্টির অভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা লঘুচাপের অপ্রতুলতা তাপমাত্রা বাড়ানোর একটি মূল কারণ।
২. তাপপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগ কি?
তাপপ্রবাহকে মৃদু, মাঝারি, তীব্র এবং অতি তীব্র হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। প্রতিটি শ্রেণীতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার সীমা থাকে।
৩. কোন মাসে সাধারণত বেশি গরম হয়?
এপ্রিল মাসে সাধারণত বাংলাদেশে গরমের তীব্রতা সর্বাধিক থাকে, যেখানে গড় তাপমাত্রা ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৪. তাপপ্রবাহের কারণে কি ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে?
তাপপ্রবাহের কারণে শ্বাসকষ্ট, ডিহাইড্রেশন, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে শিশুরা এবং বৃদ্ধরা অধিক আক্রান্ত হতে পারে।
৫. তাপমাত্রার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস মানে কি?
৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে চিন্হিত হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৬. নবীন বৃষ্টির প্রত্যাশা কখন?
বিশেষজ্ঞগণের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পশ্চিমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।