জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশের দক্ষিণে যেখানে মেঘনা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে, সেখানে অবস্থান এই ছোট্ট দ্বীপ ঢালচরের। দ্বীপটি আজ ক্ষয়ে যাচ্ছে। এখন চুলা বানাচ্ছেন দ্বীপের বাসিন্দা হালিমা বিবি। বাকি সব গোছগাছ শেষ আগেই। গত দেড় দশক ধরে যে বাড়িটিকে তিনি নিজের ভিটে ভাবতেন, আর ক’দিনের মধ্যেই ছেড়ে যেতে হবে তাকে। খবর ডয়চে ভেলের।
হালিমা বলেন, “ঐ যে নদী চলে এসেছে ঘরের কাছে। আর এখানে থাকা যাবে না। রাতে ঢেউয়ের আওয়াজে ঘুমোতে পারি না। ওপাশে সব বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে। শুধু দু’তিনটি বাকি।”
এই দ্বীপে মানুষের বাস পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে। হালিমা একেবারে শুরুর দিকের বাসিন্দা। ভিটাছাড়া হয়েছেন এর আগেও। হালিমার মতো ভিটের খোঁজ জিজ্ঞেস করলে এখানকার বেশিরভাগই নদীর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখান। যেমন আলাউদ্দিন। তিনি এখানে এসেছেন ৪৭ বছর আগে। বছর তিন আগে নদী গিলে খেয়েছে তার তিন একর জমি।
“ঐ যে নৌকা দেখতে পাচ্ছেন। ওখানে ছিল। নদী যখন আমার ভিটে ভাঙতে শুরু করে তখন আমি পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। পরদিন ফিরে এসে দেখি সব তলিয়ে গেছে,” বলেন আলাউদ্দিন।
এখন আলাউদ্দিন থাকেন চরের আরেক প্রান্তে। তবে সেখানেও কতদিন থাকতে পারবেন জানেন না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় বন্যা, ভাঙন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বেড়েছে। তাই ঝুঁকিও বেড়েছে বাংলাদেশের পুরো উপকূলের। উপকূল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগ রয়েছে। তবে পরিষ্কার কোনো উদ্যোগ নেই ঢালচরের মতো দ্বীপগুলোকে বাঁচানোর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ বলেন, “আমরা সুরক্ষার ব্যবস্থা করব, যেন আর ক্ষয় না হয়। আর পেছনের দিকে ও সীমানাগুলোতে আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে হিসেব নিকেশ করে আমরা বাঁধ করে ফেলতে পারি, তাহলে ভাঙন রোধ করে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে যেন না হারায় সে ব্যবস্থা করতে পারি।”
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক বলেন, “আমাদের মেনে নিতে হবে যে, কিছু কিছু অঞ্চলে আমরা ঠেকা দিতে পারব না। সমুদ্রের নোনা পানি ঢুকে পড়বে, ওখানকার লোকদের সেখানে বাস করার পরিস্থিতি থাকবে না। তাদের চলে যেতেই হবে। ওরা কোথায় যাবে, এখন আমাদের তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।”
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। দ্বীপটির যে অংশে জঙ্গল সেটিই মূলত টিকে আছে। অনেকের ভয়, যদি জঙ্গল কেটে ঘর তৈরি করা হয়, তাহলে হয়তো সে অংশও ভাঙতে থাকবে। চরের যেসব বাসিন্দার সামর্থ্য আছে, তারা অন্য কোথাও জমি কিনে চলে গেছেন। কিন্তু হালিমা বা আলাউদ্দিনের মতো গরিবরা পড়ে আছেন এখানেই।
হালিমা বলেন, “এখন তাড়ুয়া (দ্বীপের আরেকটি অংশ) গিয়ে থাকব দু’চার বছর। এরপর আল্লাহ কোথায় নেন জানি না। কোনো দেশের বাড়ি বা কোনো জায়গা জমি নেই। নদীর মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছি।”
“এরপর মনে করেন অন্য কোথাও গিয়ে থাকব। আল্লাহ যেখানে নেন। আর কী করব?” বলেন আলাউদ্দিন।
বিলীন হতে থাকা এই চরের মানুষগুলোর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, কোনোভাবে কি বাঁচানো যায় না এই চরকে?
‘এমন কিছু ঘটাতে পারে যাতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনটা করতে না পারি’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।