‘ধনীদের কর কম হওয়ায় বৈষম্য বেড়েছে, পরিবর্তন করা প্রয়োজন’

office

জুমবাংলা ডেস্ক : রাজস্ব আদায়ের ৮০ শতাংশ পরোক্ষ কর যা সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা। তবে ধনীদের কর কম হওয়ায় বৈষম্য বেড়েছে। এর পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

office

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারের পরামর্শক কমিটির সঙ্গে অর্থনীতি বিটের রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

পরামর্শক কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম। এটা বাড়াতে হবে।
দেশে কর আদায় পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের নয়। এটি এমন হয়ে গেছে যে, যেন রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজি। এখানে সংস্কার আনা জরুরি। পরোক্ষ করের বোঝা বড় হয়ে গেছে। এটি কমানো উচিত। কর হার কমিয়ে বেশি মানুষকে করের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি অর্থপাচার রোধ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকা দরকার।

কমিটির সদস্য ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, প্রতি বছর ৩০ জুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। নতুন করে শুল্ক-কর বসানো বা বাড়ানো পরদিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে তা বাস্তবায়ন করা হয়। এটি বিনিয়োগের ওপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ উদ্যোক্তা তো জানবে না কী পরিমাণে কর বাড়ছে। তারা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই বিনিয়োগ করেছেন। হঠাৎ করে তার ওপর করের বোঝা চাপালে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সাথে একটা বোঝাপড়া করতে হবে। তাদের বোঝার সময়ও দিতে হবে।

তিনি বলেন, এক সাথে অনেক কিছু প্রস্তাবনা দিয়ে বৈপ্লবিক কিছু করার জন্য প্রস্তাবনা দেবে না সংস্কার কমিটি। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। এমন কোনো পরামর্শ দেওয়া হবে না যেটা বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। আরও অংশীজনদের থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে। সবগুলো থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রস্তাবনা আকারে দেবে কমিটি।

পরামর্শক কমিটির সদস্য এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তবে মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়। কারণ মানুষ সমৃদ্ধ হলে রাজস্ব আয় বাড়বেই। তাই মানুষের আস্থা কীভাবে বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে উদ্যোগ থাকা দরকার।

অপরদিকে, আন্তর্জাতিক কর-ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক রয়েছে এমন কর-ব্যবস্থা থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইআরএফ।

সংগঠনটির সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, কর-ব্যবস্থাকে সহজ করতে হবে। যেমন—বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করা মিনিমাম ট্যাক্স (লোকসানি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও) ব্যবস্থা বাতিল করা;

অগ্রিম কর্তিত কর অর্থবছর শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা;

যেকোনো ধরনের ট্যাক্স পলিসি রেট্রোসপেকটিভ না রেখে প্রসপেকটিভ করা; প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে এনবিআরের গবেষণা সেলকে কার্যকর করা এবং সারা বছরব্যাপী গবেষণার ব্যবস্থা রাখা;

এ জন্য আলাদা একজন সদস্যের নেতৃত্বে এ বিভাগে পর্যাপ্ত জনবলসহ লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো দরকার।

প্রয়োজনে এনবিআরের বাইরে থেকেও লিগ্যাল, টেকনোলজি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি পলিসি ডিসিশনের ইমপ্যাক্ট বিশ্লেষণ করে তা জনগণকে জানানো।

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অডিটের জন্য ফাইল সিলেকশনের ব্যবস্থা বাতিল করে এআইয়ের সহায়তা নিয়ে রিস্ক বেজড ফাইল নির্বাচন করা। অর্থাৎ কর্মকর্তাদের হাতে ফাইল সিলেকশনের ক্ষমতা যাতে না থাকে। সেটি নিশ্চিত করা। এনবিআরের শীর্ষ নেতৃত্ব কমপক্ষে তিন বছরের জন্য রাখা এবং রাজস্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে এ পদের জন্য নির্বাচনের বিধান তৈরি করা।

ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। এতে সম্ভাব্য রাজস্ব লোকসান এড়াতে যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বর্তমানে ১৫ শতাংশ আদায় করা হচ্ছে, ওই পরিমাণ অর্থ সম্পূরক শুল্ক আকারে আদায় করা যেতে পারে।

এনবিআরে সদস্য পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ঘন ঘন দপ্তর বদল না করা। কেননা, এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। নিয়োগের পর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা কর্মকর্তাকে ওই দপ্তরেই রাখা উচিত।

সভায় ইআরএফ সদস্য ও সংবাদকর্মীরা বলেন, প্রায়ই এনবিআরের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে। অসৎ ও সন্দেহভাজন ব্যবসায়ী ও করদাতাদের বিষয়ে ডাটাব্যাংক তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সমন্বয়ে যৌথ টিম গঠন করা যেতে পারে। ওই টিম পৃথক উইং গঠন করক যেতে পারে।

https://inews.zoombangla.com/%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b2%e0%a6%b8-%e0%a6%85%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%9e-2/

তারা বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এনবিআর অফিস স্থাপন করা জরুরি। যতদিন সেটা না হয়, ততদিন প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসন, ব্যাংক কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি দিয়ে রাজস্ব আহরণ কমিটির মতো একটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যারা মূলত করজাল বিস্তারে সহায়তা করবে।

এনবিআরের অভ্যন্তরীণ তিনটি উইং এবং বাইরের অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর ইন্টিগ্রেশন নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে যাতে রিয়েল টাইম তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।