আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বরফের নিচ থেকে উঠে আসা ‘রহস্যময়’ রেডিও তরঙ্গ ধরা পড়েছে অ্যান্টার্কটিকার এক গবেষণায়। আন্তর্জাতিক এক গবেষক দল অ্যান্টার্কটিকার আকাশে ওড়ানো এক বিশেষ ডিটেক্টরের মাধ্যমে এমন কিছু সংকেত পেয়েছেন, যার উৎস এখনো শনাক্ত হয়নি—ফলে ধন্দে বিজ্ঞানীরা।
Table of Contents
কীভাবে মিলল খোঁজ?
উচ্চ উচ্চতায় ওড়ানো বেলুনে লাগানো রেডিও অ্যান্টেনা ব্যবহার করে গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয় আনিটা (ANITA – Antarctic Impulsive Transient Antenna)। এটি বরফের নিচে উচ্চ ক্ষমতার কসমিক কণার আঘাতে তৈরি হওয়া রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করতে সক্ষম। মূল লক্ষ্য ছিল মহাবিশ্বের মহাজাগতিক ঘটনার নতুন সূত্র খুঁজে বের করা।
কেন অ্যান্টার্কটিকায় বিজ্ঞানীরা?
অ্যান্টার্কটিকা বেছে নেওয়ার কারণ—সেখানে বাইরের রেডিও তরঙ্গের হস্তক্ষেপ নেই বললেই চলে, যার ফলে সংকেত বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া সম্ভব হয়। তবে এবারের সংকেত বরফের অনেক গভীর তলা থেকে এসেছে, যা অস্বাভাবিক ও চমকপ্রদ। সংকেতগুলো প্রায় ৩০ ডিগ্রি নিচ থেকে উঠে এসেছে—মানে এটি বরফ এবং পৃথিবীর পাথুরে স্তর ফুঁড়ে উঠেছে।
পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ স্টেফানি উইসেল বলেন, যদি সংকেতের উৎস নিউট্রিনো হতো, তাহলে এত গভীর থেকে উঠে আসা সম্ভব হতো না। কারণ, পৃথিবীর পুরু স্তর পেরোনোর পর এসব সংকেত বিলীন হয়ে যায়। তাঁর ভাষায়, ‘গাণিতিক কোনও হিসেব মিলছে না।’
নিউট্রিনো কি?
নিউট্রিনো হলো একটি প্রায় ভরহীন ও বিদ্যুৎ-নিরপেক্ষ কণা, যা সাধারণত অন্য কিছুর সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে না। এই কণাগুলো প্রতিনিয়ত মানুষের শরীর ও পৃথিবীজুড়ে চলাচল করে। উইসেল উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনার নখের ওপর দিয়ে এক বিলিয়ন নিউট্রিনো পার হয়ে যাচ্ছে।’ কিন্তু আনিটার ধরা সংকেত নিউট্রিনোর মতো আচরণ করছে না।
তথ্য যাচাইয়ে গবেষকরা আইসকিউব (IceCube) ও আর্জেন্টিনার পিয়েরে অগার (Pierre Auger) পর্যবেক্ষণাগারের রেকর্ড খতিয়ে দেখেন, কিন্তু এমন কোনো সংকেত সেখানে ধরা পড়েনি। ফলে জানা যায়, এটি কোনও পরিচিত কণার সৃষ্টি নয়।
বহু মডেল ও সিমুলেশনের মাধ্যমে পরিচিত কসমিক রশ্মি ও ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ বাদ দেওয়ার পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, এটি ‘একটি ব্যতিক্রমী সংকেত’।
নতুন যন্ত্রে মিলবে দিশা?
স্টেফানি উইসেল ও তাঁর দল বর্তমানে আরও উন্নত একটি ডিটেক্টর তৈরি করছেন, যার নাম পিইউইও (PUEO)। এই যন্ত্র আরও সংবেদনশীল এবং তারা আশা করছেন যে এই যন্ত্রের মাধ্যমে অজানা সংকেতের উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা মিলবে।
উইসেল বলেন, ‘আমরা যদি আরও এমন সংকেত ধরি, তাহলে বুঝতে পারব এটি নতুন কোনো পদার্থবিজ্ঞানের ইঙ্গিত, নাকি বিরল কোনো প্রাকৃতিক ঘটনার ফল।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।