জুমবাংলা ডেস্ক: রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) গত দুই দিনে এযাবৎ সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। ১৯৬২ সালে যাত্রা শুরুর পর এই হাসপাতালে আগে কখনো এত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী আসেনি। গত সোমবার ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে এক হাজার ৩৩৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এ হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৫৬ রোগী ভর্তি হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভর্তি হয় ৯১০ রোগী, ঘণ্টায় গড় হিসাবে প্রায় ৫৭ জন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত দুই দিন অবস্থা এমনও হয়েছে যে হাসপাতালে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯২ রোগী ভর্তি করতে হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৬ মার্চ থেকে গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৩ দিন ১৬ ঘণ্টায় হাসপাতালে মোট ১৬ হাজার ৪১৮ রোগী ভর্তি হয়েছে।
আইসিডিডিআরবির তথ্য মতে, ৬০ বছর আগে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরুর পর এত রোগীর চাপ আগে কখনো সামাল দিতে হয়নি। ২০০৭ সালে প্রথম সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী আসে এই হাসপাতালে। তখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার রোগী এসেছিল। এরপর ২০১৮ সালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হলে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ৫৭ রোগী ভর্তি হয়।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহরুল আলম গতকাল বলেন, ‘গত সোমবার রাতে এক ঘণ্টায় হাসপাতালে ৯২ রোগী ভর্তি করতে হয়েছে। এত কম সময়ে এত রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে গিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও রোগীর অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। কবে রোগীর চাপ কমবে তা বুঝতে পারছি না। ’
ডা. বাহরুল আরো বলেন, ‘আমরা মূল হাসপাতালের বাইরে দুটি তাঁবুতে রোগীদের জন্য অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করেছি। তাতেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এখন ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ’
রাজধানীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালেই শুধু নয়, অন্যান্য হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। বাসায় থেকেও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে এখন ৪১ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ১১ শিশু রয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেককে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। যাদের অবস্থা খুব সংকটাপন্ন নয়, তাদের চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, এ সময় ডায়রিয়ার জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটে। সে কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। কিন্তু এবারের প্রকোপ অস্বাভাবিক। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে হাত ধোয়া এবং বাইরের খাবার না খাওয়ার অভ্যাস বেড়েছে। এর পরও ব্যাপক হারে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক নয়।
আইসিডিডিআরবির তথ্য মতে, হাসপাতালে গত ১৬ মার্চ এক হাজার ৫৭ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে কোনো দিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক হাজারের নিচে নামেনি। ১৭ মার্চ ভর্তি করা হয় এক হাজার ১৪১, ১৮ মার্চ এক হাজার ১৭৪, ১৯ মার্চ এক হাজার ১৩৫, ২০ মার্চ এক হাজার ১৫৭, ২১ মার্চ এক হাজার ২১৭, ২২ মার্চ এক হাজার ২৭২, ২৩ মার্চ এক হাজার ২৩৩, ২৪ মার্চ এক হাজার ১৭৬, ২৫ মার্চ এক হাজার ১৩৮, ২৬ মার্চ এক হাজার ২৪৫, ২৭ মার্চ এক হাজার ২৩০ এবং ২৮ মার্চ এক হাজার ৩৩৪ জন রোগী ভর্তি করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।