জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়ার পরিমাণই বেশি। বছরের পর বছর বিল না দেওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উপরন্তু বিল আদায় করতে গেলে বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বিদ্যুতের কর্মচারীদের ওপর চড়াও হন সরকারি কর্মচারীরা। এমনকি বেঁধে রাখার মতো ঘটনাও ঘটছে। দিনে দিনে এমন ঘটনা বাড়ছেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এলাকায় ইউএনওর আবাসিক কোয়ার্টার সংলগ্ন আনসার ব্যারাকে ২ বছরের বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যান পল্লী বিদ্যুতের লাইন টেকনিশিয়ান ইকবাল হোসেন। সেখানে তাকে রশি দিয়ে ব্যারাকের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
জানা যায়, পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মো. শেখ ফরিদের নির্দেশে আনসার ব্যারাকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা ব্যারাকে থাকা আনসার সদস্যদের জানালে তারা ইউএনও শেখ জাহিদ হাসানকে ফোনে বিষয়টি জানান। এক পর্যায়ে ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্যরা ইকবাল হোসেনকে ব্যারাকের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এ ছাড়া গত ১ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া গেছে।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়সম বকেয়া নিয়ে ঝুলছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। গত জানুয়ারি পর্যন্ত পিডিবির কাছে সরকারি, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পেট্রোবাংলার বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। যা বর্তমানে ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পিডিবির প্রতি মাসে গড় বিল পরিশোধ করতে হয় ৮ হাজার ৭০০ কোটি থেকে ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে গড়ে রাজস্ব আয় ৫ হাজার ১০০ কোটি থেকে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া বিল পাওনা ২০ হাজার কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠকে বৈশ্বিক সংকট এবং বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানিতে অর্থ সংকটের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্টদের বকেয়া আদায়ের তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি মন্ত্রণালয় বা সংস্থা, সিটি করপোরেশনগুলোর বিল আদায়ে চিঠি পাঠানো এবং নিয়মিত মনিটরিং ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামে ১৭ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পাওনা বিল প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। গত সোমবার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) একাডেমিক ভবন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দফতরের (সিআরবি) বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পিডিবি। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় ৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের। বিল আদায়ে গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুইটি সংযোগ কেটে দেন পিডিবির লোকজন। পরে তিনটি মিটার সংযোগের বিপরীতে আংশিক ২৭ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুইটি মিটারের সংযোগ আবার দেওয়া হয়। এ ছাড়া এক মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করবে বলে মুচলেকা দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ।
ডেসকো সূত্রে জানা গেছে, জুন ২৩ পর্যন্ত ডেসকোর বকেয়া বিলের পরিমাণ মোট ২১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিহারি ক্যাম্পের কাছে ১৭২ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৫ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ৪ কোটি, স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ৩ কোটি, পিডব্লিউডির কাছে ৩ কোটি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বকেয়া আদায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি গ্রাহকদের এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি বকেয়া সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোতে। আর ওই বকেয়া আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সেখানে বকেয়া আদায় করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের কর্মীদের নাজেহাল এমনকি বেঁধে রাখার ঘটনাও ঘটছে। এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরাই।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বলছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খুব কম সময় বকেয়া ধরে রাখছে। প্রকৃতপক্ষে এখন বেসরকারি খাতে বিলিং মাসের বাইরে এক সমতুল্য মাসের কম সময়ের বিল বাকি রয়েছে। ফলে এটি বিতরণ কোম্পানিগুলোর ওপর বেশি চাপ তৈরি করছে না। কিন্তু অনেক সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক বছর ধরে বিল দিচ্ছে না। এটি বাড়তি চাপ তৈরি করছে।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, দেশের বিদ্যুৎ খাত এগিয়েছে। আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি সরবরাহও করছি। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের পথে একটি বড় বাধা বকেয়া বিল। সবখানে স্মার্ট ও প্রিপেইড মিটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে বকেয়া নিয়ে অস্বস্তির চাপ দূর হয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রিপেইড মিটার স্থাপনে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দ্রুত বিল পরিশোধ করে তার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে আরও ভালো হওয়া প্রয়োজন।
আমি বুঝি না, রাষ্ট্রযন্ত্র আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় কি না: ব্যারিস্টার সুমন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, জনগণের টাকায় পরিচালিত সরকারি সংস্থা বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখবে কেন, এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপ্রোয়জনীয় খরচ কমিয়ে আনলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দরকার হয় না, আরও কম দামে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।