দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মূলধনের শর্ত বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক আর প্রথাগত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন লাগে ৫০০ কোটি টাকা।
রবিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংক দেশের ব্যাংকিংখাতে একটি নতুন কনসেপ্ট। এর আগে, ২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইনে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছিল ১২৫ কোটি টাকা। সে তুলনায়, একটি প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী। তবে এর অধীনে পরিচালিত পেমেন্ট সার্ভিস চলবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনস, ২০১৪ অনুসারে।
ডিজিটাল ব্যাংককে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির পাঁচ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে। আইপিও’র আকার ন্যূনতম স্পন্সর বা উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং বৃহত্তর অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থারই একটি অংশ, যেখানে সব সেবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে মূল পার্থক্য হল প্রচলিত ব্যাংকের মতো শাখা বা অফিস থাকবে না শুধু একটি প্রধান কার্যালয় থেকেই সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। গাইডলাইনে আরও বলা হয়েছে, প্রচলিত ব্যাংকের ব্যবসা পরিচালনা, সুশাসন ও কার্যক্রম সংক্রান্ত যে বিধি-বিধান রয়েছে, সেগুলো ডিজিটাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও বহাল থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সময় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে, যখন বিশ্বের অনেক নতুন প্রজন্মের ব্যাংক প্রচলিত শাখাভিত্তিক ব্যাংকিং ছেড়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যে ২০২২ সালে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ৬১টি প্রচলিত ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যত ওভার-স্যাচুরেটেড বা অতিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
ডিজিটাল ব্যাংক যেভাবে পরিচালিত হবে- গ্রাহককে জানিয়ে বা না জানিয়ে দৈনিক লেনদেন সামলানোর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত একটি প্রযুক্তিভিত্তিক বিরোধ নিষ্পত্তি মেকানিজম থাকবে। ডিজিটাল ব্যাংক সময় সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধান মেনে প্রচলিত ব্যাংক বা এমএফএস প্রদানকারীদের এজেন্টদের ব্যবহার করতে পারবে। তবে ডিজিটাল ব্যাংকের নিজস্ব কোনো এজেন্ট থাকবে না।
ডিজিটাল ব্যাংক অনলাইন এন্ড-টু-এন্ড প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে দক্ষ, সাশ্রয়ী ও উদ্ভাবনী ডিজিটাল আর্থিক পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করবে। এটি গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে এবং সেবাবঞ্চিত, কম সেবা পাওয়া ও প্রত্যন্ত এলাকার (পার্বত্য জেলা, দ্বীপ ইত্যাদি) মার্কেট সেগমেন্টকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে এআই, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।
ডিজিটাল ব্যাংকগুলো কোনো ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। এদের নিজস্ব কোনো শাখা বা উপ-শাখা, এটিএম/সিডিএম/সিআরএমও থাকবে না। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারে। কিন্তু লেনদেনের জন্য কোনো ফিজিক্যাল উপকরণ দেওয়ার অনুমতি নেই এ ব্যাংকের। ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন বা বাণিজ্য অর্থায়নে যুক্ত হতে পারবে না। ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে কোম্পানি আইন অনুযায়ী সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে।
এ ছাড়া ডিজিটাল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর নীতি অনুসারে অথবা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে সময় সময় করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যকলাপও পরিচালনা করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।