জুমবাংলা ডেস্ক : বাউ-সালাদ কচু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টার কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি জাত। ইহা একটি অপ্রচলিত কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ যা গাছের ছায়ায় চাষ করতে পারেন। সেইসাথে দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
সালাদ কচু বাণিজ্যিকভাবে বৃষ্টিবহুল উচ্চজমি, বাড়ির বাগান, পতিত জমি ও ছাদ বাগান এবং আন্তঃফসল পদ্ধতিতে যেমন- কলার বাগানে বা ছায়ায় এছাড়া আনারস বা অন্যান্য দীর্ঘতম ফসল এবং পাহাড়ি অঞ্চলে ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত জায়গায় চাষাবাদ হতে পারে।
সালাদকচু ট্রপিক্যাল অঞ্চল যেমন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে প্রচুর চাষ হয়। করম, পাতা এবং পাতার ডাঁটাগুলো শাকসবজি এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো যেমন- বাংলাদেশের খাদ্য সুরক্ষা, দুর্ভিক্ষ এবং দারিদ্র্য বিমোচন মোকাবিলা করতে পারে।
জাতটি স্থানীয়ভাবে সালাদ কচু নামে পরিচিত কারণ এটি সালাদ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে এবং গলা চুলকায় না। বাউ-সালাদকচু অৎধপবধব পরিবারের ভেষজ উদ্ভিদ। এই ফসলের পাতাগুলোর আকার ঢেউ খেলানো ও ডাটা লম্বা হয়। পাতাগুলো হৃদয়ের আকারের এবং খাঁড়া প্রকৃতির, গভীর নিলাভ সবুজ ও পাতার উপরি ভাগ গ্লেসি হয়। এই প্রজাতিটি মূলত বান্দরবন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক হয় কারণ এই অঞ্চলের লোকেরা দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকটে খাদ্য হিসেবে ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করা যায় বলে এর উৎপাদন খরচ খুবই কম।
জমি নির্বাচন: বাংলাদেশের সর্বত্র চাষযোগ্য এবং ২৩-৩০০ সেন্টিগ্রেড, তাপমাত্রা যুক্ত অঞ্চলে চাষ করা যেতে পারে। এটি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না এবং সামান্য ছায়া পছন্দ করে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করা ভালো।
জাত : সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টার কর্তৃক বাউ-সালাদ কচু জাতটি নিবন্ধিত হয়েছে। জাতটি উচ্চফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ।
চাষাবাদ পদ্ধতি : ৪-৫টা চাষ দিয়ে এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ (১৫-২০ সেন্টিমিটার) গভীরতাসহ জমি চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটির পিএইচ ৫.৫ থেকে ৬.৫ পর্যন্ত। উদ্ভিদ গ্লোবিউলাস/দীর্ঘায়িত করম এবং প্রচুর চারা উৎপন্ন করে। করম কাটিং এবং ছোট চারা বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বছরব্যাপী চাষাবাদ করা যায়। রোপণ দূরত্ব ৬০ী৪৫ সেমি.। অতিরিক্ত ঠান্ডা অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে রোপণ না করলেও চলে।
সার প্রয়োগ : সাধারণত জৈবসার দিলেই চলে। গোবর ১৫ টন/হেক্টর ব্যবহার করা যেতে পারে। জমি তৈরির সময় শেষ চাষের পরে গোবর সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা : আগাছা ১ সপ্তাহ পরপর পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে পানি সেচ ও নিষ্কাশন করতে হবে। খড়া মৌসুমে চারা লাগানো হলে প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায় পানি সেচ প্রয়োজন। দেড় থেকে দুই মাস পর চারা পাতলাকরণ করে অন্য জায়গায় লাগাতে হবে।
রোগবালাই : সালাদ কচুর তেমন কোনো রোগবালাই নাই। তবে কবুতর ও মুরগি কচিপাতা ভক্ষণ করতে পারে। তাই জাল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ : সারা বছরই নতুন লাগানো চারা থেকে পাতা-ডাঁটা, সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। করম আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সংগ্রহ করা যায়, যখন গাছগুলো হলুদ হয়ে যায় বা মারা যায়। হেক্টরপ্রতি ৩০-৪০ টন করম পাওয়া যায়। বাউ-সালাদকচু কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসেবে ভক্ষণযোগ্য এবং রান্না করে সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ফসল সংরক্ষণ : সাধারণত মুখী কচুর মতোই কন্দমুখী বীজ, সাকার/ছোট চারা বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই জন্য ছোট কন্দ যদি ভিজা থাকে তবে হালকা রৌদ্রে শুকিয়ে ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রযুক্তির সুবিধা: বাউ-সালাদকচু বাংলাদেশের আদিবাসীগণ গ্রীষ্মকালীন সবজি ফসল হিসেবে চাষ করে আসছে এবং পার্বত্য অঞ্চলের পাশাপাশি সমতল ভূমি অঞ্চলে কলা ও আনারস দিয়ে আন্তঃফসল হিসেবে বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশে মহামারির সময়ে উদীয়মান খাদ্য নিরাপত্তা সংকট, পরিবেশকে রক্ষা ও জাতিকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহের জন্য কৃষি খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে সালাদ কচুর মতো অপ্রচলিত ফসল দিয়ে বৈচিত্র্য আনা দরকার।
সালাদ কচু সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য এবং পুষ্টিকর খাদ্য, কারণ এটি মাইক্রো-পুষ্টি যেমন : ভিটামিন এ, বি, ইত্যাদি, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম, জিং এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। সালাদ কচুর মতো একটি নতুন ফসলের আবাদ করে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও আর্থিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখা যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।