জুমবাংলা ডেস্ক : নরসিংদীর শিবপুরে আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ডিগ্রী কলেজের পাশে গড়ে উঠেছে একাধিক বিনোদন পার্ক। এ সকল বিনোদন পার্কে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার ভুরভূরিয়া গ্রামে আবদুল মান্নান ভূইয়া ডিগ্রী কলেজের পাশে তথাকথিত নাদিরা গার্ডেন নামে একটি বিনোদন পার্ক গড়ে উঠেছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে পার্কটি। সরকারের কোনো অনুমোদন ছাড়াই পার্কটি দীর্ঘদিন যাবৎ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। কলেজের দেয়াল ঘেঁষা পার্কটিতে কোনপ্রকার সীমানা প্রাচীর না থাকায় দর্শনার্থীদের সকল কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিগোচর হয়। এর ফলে এগুলোর প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৭ মে) বিকেলে ৪টার দিকে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাতের নিদের্শে অভিযান পরিচালনা করে পার্কের দুইজনকে আটক করা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কলেজের নির্মাণাধীন হোস্টেলের রাস্তার জায়গা দখল করে পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। পার্কে নিয়মিত উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদেরা যাতায়ত করছে।
এলাকাবাসী জানায়, পার্কের আড়ালে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। তাছাড়া বেশ কয়েক দিন আগে কলেজের অনার্স ভবনের পাশে গড়ে উঠা কফি শপের আড়ালে মাদকসেবীদের আড্ডা চলে আসছিল। যার ফলশ্রুতিতে কফি শপটি মাদক কেনা-বেচা ও সেবনকারীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়। এ অবস্থায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে আগুন লাগিয়ে কফি শপটি পুড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে কলেজ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কলেজের আশে পাশে এমন পার্কের নামে গড়ে উঠা মাদকসেবীদের আখড়ার কারণে শিক্ষার পরিবেশে বিরুপ প্রভাব পড়ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
এর ফলে অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের কলেজে পাঠিয়ে সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থায় কলেজে উপস্থিতির হার দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এমন পরিাস্থতি থেকে উত্তরণের জন্য কলেজের অধ্যক্ষ শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
আবদুল মান্নান ভূইয়া ডিগ্রি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, কলেজের দুই পাশে গড়ে উঠা দুটি পার্কের আগত দর্শণার্থীদের দ্বারা আমাদের কলেজের অনেক মেয়েই ইভটিজিং এর শিকার হয়েছে। তাছাড়া পার্কে আসা উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ের খোলামেলা চলাফেরার কারণে আমাদেরকে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখতে হলে এ এলাকা থেকে পার্কগুলো অতিসত্ত্বর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া উচিত। তাই এখান থেকে পার্ক সরিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কলেজের ইংরেজী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, গত ১১ মে কলেজের পূর্ব পাশের কফিশপ নামে গড়ে উঠা মাদকের আড্ডাখানায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলার দৃশ্য আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্লাস রুম থেকে দেখেছে। এর একটি বিরুপ প্রভাব ছেলেমেয়েদের ওপর পড়েছে। তাছাড়া কলেজের মূলভবনে ক্লাস নিতে গিয়ে যখন ক্লাসের জানালা দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর দৃশ্য দেখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অনেক সময় লজ্জায় আর আমাদের মুখ লুকানোর যায়গা থাকে না। এ বিব্রতকর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অতিসত্বর পার্কটি এখান থেকে স্থানান্তর করা আবশ্যক।
এ ব্যাপারে কলেজের পার্শ্ববর্তী নাদিরা গার্ডেনের মালিক সাইদ বলেন, আমার জানা মতে পার্কে কোন অনৈতিক কাজ হয় না বা সেই সুযোগও নেই।
আবদুল মান্নান ভূইয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জালাল আহমেদ বলেন, ২০০২ সালে এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এ অঞ্চলেরই কৃতি সন্তান শাহান শাহ্ শাহীন অত্র কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে কলেজের দু’পাশে পার্ক গড়ে উঠায় কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১১ তারিখের পর থেকে আমরা এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত। অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের কলেজে পাঠাতে রীতিমত ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়ে তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।
আইয়ুবপুর ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, পার্কের অসামাজিক কার্যকালাপ বন্ধের জন্য আমিও এখনও থানায় আছি বিষয়টি নিয়ে। পার্কের কারণে আমাদের এলাকার তরুণ সমাজ নষ্টের পথে। এলাকার সচেতন মানুষ ও আমরা মিলে পার্কের কার্যক্রম বন্ধ করে। সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই।
এ ব্যাপারে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাত জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।