জুমবাংলা ডেস্ক : এখন লাল টসটসে রঙিন হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের বাগানগুলো। রসালো ও সুস্বাদু লিচু আকৃষ্ট করছে ভোক্তাদের। ‘প্রকৃতির রসগোল্লা’ খ্যাত মৌসুমি ফল লিচু এখন দিনাজপুরে অনেকে চাষ করছেন। লিচু সংগ্রহ, বাছাই, কেনা-বেচা আর বহনের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
কিন্তু এবার বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিরল উপজেলার দক্ষিণ জগতপুর এলাকার লিচু বাগান মালিক মাহবুব আলী। তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছরে এমন হয়নি বাগানের অবস্থা। বৈরী আবহাওয়াই এর জন্য দায়ী।
লাভজনক ফসল হওয়ায় ধানের জেলা দিনাজপুরে লিচু’র বাগান করেছেন অনেকে। এবার এ জেলায় মাদ্রাজী, বেদেনা, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, হাড়িয়া ও কাঠালী জাতের লিচুর চাষ হয়েছে বেশী। বিগত বছরগুলোতে ফরমালিন আতংকে লিচুর বাজারে ধস নামায় এবার বিষমুক্ত লিচু চাষে নেমেছেন এ জেলার বাগান মালিকরা।
এদিকে লিচু’র ফলন বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন লিচু চাষী ও লিচু বাগান ক্রেতারা। দশ মাইল এলাকার লিচু বাগান ক্রেতা মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবার প্রচুর লোকসান হবে তার। বাগান কিনেছেন বেশী দামে। কিন্তু আশানুরূপ ফলন আসেনি বাগানে।
লিচু বেচা-কেনায় থানা মোড় নিউ মার্কেট, বাহাদুর বাজার ও পুলহাট, দশ মাইলসহ বেশ কিছু এলাকায় মৌসুমি লিচু বাজার গড়ে উঠলেও অনেকে বাগান থেকে কিনেন লিচু। লিচু কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাগানে ছুটে আসেন মানুষ।
রাজধানী ঢাকা থেকে দিনাজপুরের লিচু ক্রয় করতে এসেছেন সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, কয়েকদিনের মধ্যে নামবে লিচু, আমি অগ্রিম দিতে এসেছি, মুলত দিনাজপুরের লিচুর ভালো স্বাদ ও বিষমুক্ত হওয়ায় বাগান থেকে লিচু নিতে চাই। নিজের জন্য এবং অফিসের সহকর্মী ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য দশ হাজার লিচু নিবো তাই এতো দূর ছুটে আসা।
বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচুর বাগান মালিক আনারুল ইসলাম বলেন, সাধারণত মাদ্রাজি জাতে লিচু আগে পাকে। আর শেষে পাকে বোম্বে, বেদানা, চায়না-থ্রিসহ অন্যান্য লিচু। তিনি বলেন, মাদ্রাজি লিচু পরিপক্ব হতে আর সপ্তাহখানেক লাগবে। আর পরিপক্ব বোম্বে, বেদানা, চায়না-থ্রি বাজারে আসতে সময় লাগবে আরও একমাস।
একই উপজেলার পুরিয়া গ্রামের লিচু চাষি মতিউর রহমান বলেন, বাগানে মাদ্রাজি জাতের লিচুতে রঙ আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে এসব লিচু পরিপক্ব হয়ে উঠবে। তবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটসহ কিছু কিছু এলাকায় অপরিপক্ব লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কিছু বাগান মালিক অধিক লাভের আশায় অপরিপক্ব লিচু বাজারে নিয়ে আসছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম রামনগর এলাকার বাগান মালিক রবিউল ইসলাম জানান, মুকুল আসার সময় অতিরিক্ত খরার কারণে এবার অনেক মুকুল ঝরে পড়েছে। এ কারণে ফলন কিছুটা কম হবে। এতে কিছুটা ক্ষতির আশংকা করেন তিনি। তবে আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং বাজারে ভালো দাম থাকলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান জানান, দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এই বাগানগুলোতে লিচু উৎপাদন হয় প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন।তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে মাদ্রাজি লিচু বাজারে চলে আসবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।