জুমবাংলা ডেস্ক : ‘আসেন, ভালো ভালো টাটকা লিচু নিয়ে যান, একশ লিচুর দাম মাত্র পঞ্চাশ টাকা। এর চেয়ে কম দামে কোথাও লিচু পাবেন না। আসেন নিয়ে যান।’
মঙ্গলবার দুপুরে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিরল-ধুকুরঝাড়ি সড়কের বালাপুকুর নামক স্থানে সড়কের ধারে ডালিতে (বাঁশের ঝুড়ি) লিচু নিয়ে এভাবেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছিল ১০ বছর বয়সের শিশুকন্যা মিম আক্তার।
ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল, সাইকেল, রিকশাভ্যান, ইজিবাইক কিংবা অন্যকোনো যানবাহন দেখলেই উচ্চস্বরে মানুষদের এভাবেই লিচু কেনার আহ্বান জানায় সে।
মিম আক্তার পার্শ্ববর্তী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মিমের পাশেই একইভাবে লিচু বিক্রি করছিল তার চেয়ে ৩-৪ বছর বেশি বয়সের আরেক মেয়ে। তার নাম জিজ্ঞেস করতেই সে জানায়, স্যার নাম বলা যাবে না। আমরা লেখাপড়া করি, ব্যবসা করি না। বাগান থেকে কুড়িয়ে এনে লিচুগুলো বিক্রি করছি। যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই ঈদে ঘোরাফেরা করা যাবে।
মঙ্গলবার দুপুরে মিম আক্তার জানায়, সকাল থেকে ২শ টাকার লিচু বিক্রি করেছি। এখন যে লিচুগুলো আছে, তা আড়াইশ থেকে ৩শ টাকায় বিক্রি করতে পারব। গত কয়েক দিন ধরেই এভাবে বাগানে পড়ে থাকা লিচু কুড়িয়ে এনে সড়কে বিক্রি করি।
মিম জানায়, গতরাতে ঝড় হয়েছে, তাই আজ একটু বেশি লিচু পেয়েছি। অন্যদিন এর চেয়ে কম লিচু পাওয়া যায়।
বিরল-ধুকুরঝাড়ীর ওই সড়কের বিভিন্ন স্থানে এমনভাবেই লিচু বিক্রির দৃশ্য দেখা যায়। সড়কের ধারে এভাবেই লিচু বিক্রি করছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ। কেউ বাগান থেকে ঝড়েপড়া লিচু কুড়িয়ে এনে ডালিতে বা পলিথিনের ব্যাগে বিক্রি করছেন। বাগান মালিকরা গাছ থেকে লিচু পাড়ার পর কিছু লিচু গাছেই থেকেই যায়। গাছের অবশিষ্ট এসব লিচু সংগ্রহ করে কেউ কেউ আবার আঁটি করে বিক্রি করছেন। লিচুর এই মৌসুমে এভাবেই লিচু বিক্রি করে আয় করছেন অনেকেই।
লিচুর রাজধানী হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলার পথে-প্রান্তরে এভাবেই বিক্রি হচ্ছে লিচু। আর সড়কের ধারে তুলনামূলক কম দামেই এসব লিচু কিনে লিচুর স্বাদ মেটাচ্ছেন লিচুপ্রেমিরা।
বিরল উপজেলায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বিশ্বনাথ রায়। তিনি বলেন, সড়কের ধারে যেসব লিচু পাওয়া যাচ্ছে, তা গুণে-মানে কোনো অংশেই কম নয়; কিন্তু বাজারের লিচুর দামের তুলনায় এসব লিচুর দাম চার ভাগের একভাগ বা তারও কম। তাই গত কয়েক দিন ধরে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিদিন এসব লিচু কিনে নিয়ে যাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়কের ধারে বিভিন্ন জাতের একশ লিচু বিক্রি হয় ৫০ টাকা থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত। যেখানে বাজারে লিচু বিক্রি হচ্ছে জাতভেদে ২শ টাকা শুরু করে ১ হাজার ৮শ টাকা পর্যন্ত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে- দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান আছে ৯ হাজার ৯৮টি। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন। আর এই লিচুর মৌসুমে বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় শিশু ও নারী-পুরুষসহ কয়েক লাখ মানুষের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।