লাইফস্টাইল ডেস্ক : দীর্ঘ দিন পর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হলে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি আমরা। কখনও চোখের কোণায় চিকচিক করে অশ্রু। অবশ্য এই কান্না দুঃখের নয়, তা আনন্দাশ্রু। তবে শুধু মানুষই নয়, কুকুরের সঙ্গেও এরকম ঘটে। বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর মালিকের দেখা পেলে আনন্দে কেঁদে ফেলে পোষা কুকুর। হ্যাঁ, এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়।
একাধিক গবেষণায় জাপানের বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, মানুষের অন্যতম পোষা প্রাণী কুকুরেরও আনন্দে কান্না করার ক্ষমতা আছে।
সারাদিন কাজের পর আপনি যখন ঘরে ফেরেন, তখন আপনাকে দেখে লেজ নাড়ানো ও আওয়াজ করার পাশাপাশি আনন্দে কান্নাও করে কুকুর। এমন তথ্যই জানানো হয়েছে কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায়।
১৮টি কুকুরের ওপর করা ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মালিকের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে কুকুরগুলোর চোখ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি ভিজে উঠেছিল।
কিন্তু মালিকের বাইরে অন্য কোনও পরিচিত মানুষকে দেখলে একই ধরনের আবেগ প্রকাশ করেনি তারা।
কুকুরের চোখে এক চিলতে বিশোষক কাগজ ৬০ সেকেন্ড লাগিয়ে তাদের কান্না পরিমাপ করেন গবেষকেরা। কাগজ ভিজে কতদূর গড়িয়েছে তার পরিমাণ রেকর্ড করা হয়।
মনুষ্য প্রজাতির ক্ষেত্রে কান্না ও আবেগ সমানুপাতিক। বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক আবেগ কুকুরের চোখে বাড়তি অশ্রু তৈরি করে।
গবেষকেরা আরেকটি গবেষণায় ‘লাভ হরমোন’ অক্সিটোসিন মিশ্রিত এক ধরনের দ্রবণ অন্য ২২টি কুকুরের চোখে লাগান। এ হরমোন বিশ্বাস, সমানুভূতি, ও সম্পর্ক-তৈরি ইত্যাদির সঙ্গেও সম্পর্কিত। দেখা যায়, ওই কুকুরগুলোর চোখ থেকে আরও বেশি অশ্রু বেরিয়েছিল।
শরীরে অক্সিটোসিনের বেশি ক্ষরণই কুকুরের চোখে বাড়তি অশ্রু তৈরি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকেরা।
আমাদের এ অতিপ্রিয় সঙ্গীটির আনন্দ-অশ্রু নিয়ে এ আবিষ্কারটিকে বৈপ্লবিক হিসেবে অভিহিত করা যেত। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী এ গবেষণার ফলাফল ও পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
আবেগে কান্না কেবল মানুষই করে বলে এখন পর্যন্ত প্রমাণিত। অন্য প্রাণীরা তাদের চোখের আর্দ্রতা চোখ থেকে ময়লা বের করে দিতে ও চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার করতে ব্যবহার করে। তাই অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন, কুকুরের চোখে বাড়তি অক্সিটোসিন যোগ করায় চোখ জ্বালার কারণে ওই বেশি অশ্রু বের হয়েছিল, এটি কোনও খুশির অশ্রু ছিল না।
তবে গবেষণাটির গবেষক জাপানের আজাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাণীর আচরণ বিশেষজ্ঞ তাকেফুমি কিকুসুই ব্যাপারটা তা নয় বলে মনে করেন।
তবুও চোখ পরিষ্কারের পানি আর আবেগের পানি পরিমাপ করা স্পষ্টতই কঠিন একটা কাজ। আর স্রেফ একটি গবেষণা দিয়ে এ বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসাও সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
কিকুসুই বলেন, ‘মানুষ সঙ্গীর সাথে দেখা হলে যে কুকুরের চোখ ভিজে যায়, তার ক্ষেত্রে তার মালিকের কাছ থেকে বেশি আদর-যত্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ মানুষ আর কুকুর কয়েক হাজার বছর ধরে একত্রে বিবর্তিত হয়েছে। তবে আমাদের সবচেয়ে কাছের এ বন্ধুপ্রতিম প্রাণীটিকে নিয়ে জানার এখনও অনেক কিছু বাকি আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।