জুমবাংলা ডেস্ক : ঝালকাঠিতে লেবুর বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা। ২০ হালি অর্থাৎ ৮০টি লেবুকে স্থানীয় ভাষায় এক পোন বলা হয়। বর্তমানে ৮০টি লেবুর পাইকারি দাম আকার ও মানভেদে ৪০-৫০ টাকা মাত্র। এক পোন লেবু বিক্রি করে তাতে এক কেজি চাল মিলছে না কৃষকের। এতে হতাশ তৃণমূলের প্রান্তিক লেবুচাষীরা।
ঝালকাঠি শহর থেকে কীর্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই ভীমরুলী বাজার। পেয়ারার জন্য বিখ্যাত হলেও এখন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে লেবুর রাজত্ব। কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ারা পরিপক্ব হয়ে বাজারে আসবে। এখন ভীমরুলী সেতুর ওপর দাঁড়ালে দেখা যায় ছোট ছোট ডিঙি নৌকা করে হাটে আসছে সুগন্ধি ও রসে ভরপুর কাগজি লেবু। খালের মধ্যে যেন সবুজের এক সমারোহ। লেবুচাষীরা খুব সকালে বিভিন্ন বাগানের গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকা করে নিয়ে আসেন ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভীমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষণ্ডাসহ ২২ গ্রামের চাষীরা এ হাটে লেবু বিক্রি করেন। কাগজি লেবুই এখানে বেশি জনপ্রিয়। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ সুগন্ধ ও রসে ভরা এ লেবুর চাহিদাও বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবু চাষ করেই প্রতি বছর অনেকের ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও এবার তা থেমে গেছে।
প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখান থেকে লেবু নিয়ে আসেন। ভাসমান লেবু বাজারের বেচাকেনা দেখতে দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটকও ভিড় করতেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এ হাট জমে থাকে লেবুচাষী, পাইকার ও দর্শনার্থীর কোলাহলে।
ভাসমান হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় সুমন জানান, পেয়ারার মৌসুমে পর্যটকের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। এখনো পেয়ারা পরিপক্ব হয়ে পাকতে শুরু করেনি। এ সময়ে লেবুর ভরা মৌসুম। কিন্তু পাইকাররা তেমন না আসায় নামমাত্র মূল্যে লেবু বিক্রি করছেন চাষীরা। এক পোন লেবু আকার ও মানভেদে ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তা দিয়ে এক কেজি চালও মিলছে না।
সরেজমিন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে গিয়ে দেখা যায়, চাষীরা ভীমরুলীর খালে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় লেবু নিয়ে পাইকারদের আশায় অপেক্ষা করছেন। কয়েকজন পাইকারকেও দেখা গেল খাল পাড়ে। তারা নৌকা ডেকে কিনারে এনে লেবুর দরদাম করছেন।
জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় ১ হাজার ৮৭৫ টন লেবু উৎপাদন হয়। উৎপাদন খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা লেবু চাষে বেশ আগ্রহী। কিন্তু এ বছরের মূল্যস্ফীতিতে চরম হতাশায় কৃষক।
লেবুচাষীরা জানান, এক পোন লেবু তারা গত বছরও ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন। বর্তমানে সেই লেবু ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
লেবুচাষী তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ ছিল ৫০ হাজার টাকা। গত বছর বিক্রি করেছি প্রায় ৪ লাখ টাকার লেবু। এ বছর উৎপাদন খরচ আরো বেড়েছে কিন্তু লেবুর দাম আগের তুলনায় প্রায় ১০ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, লেবু মানুষের শরীরে ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। লেবু চাষের পরিধি বাড়াতে চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋণের সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।