সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সীল-পদবি ব্যবহার করে অবৈধভাবে ডি.আর.কে নবীন সংঘ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের অডিট নিষ্পত্তির অভিযোগ উঠেছে।
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম অবৈধভাবে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার পদবী ও সীল ব্যবহার করে সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের উচ্চমান সহকারী মোশারফ হোসেনের যোগশাজসে ডি.আর.কে নবীন সংঘের সাধারণ সভার রেজুলেশন অনুমোদন, কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সত্যায়িতকরণ, সদস্যদের জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ সত্যায়িতকরণ ও কার্যকরী কমিটির অনুমোদন দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন সংগঠনটির সদস্য মো: রফিকুল ইসলাম, মো: সাইদুর রহমানসহ ১২৫ জন সদস্য।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সংগঠনটির কতিপয় অসাধু সদস্য অন্যান্য সদস্যদের না জানিয়েই মো: মোয়াজ্জেম হোসেনকে সভাপতি ও মো: সায়েদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য পদসমূহে আরো কয়েকজনকে মনোনীত করে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে কমিটি অনুমোদনের জন্য জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। কমিটি অনোমোদনের আবেদন পত্র পাওয়ার পর মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্মারক নম্বরসহ নিজেকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার (অঃ দাঃ) উল্লেখ করে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন।
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের অডিট করা ডি.আর.কে নবীন সংঘের আয়-ব্যয় বিবরণীর কপিতে দেখা যায়, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সংগঠনটির আয়-ব্যয় বিবরণীর কপির একপাশে নিজেকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার (অঃ দাঃ) উল্লেখ করলেও অপর পাশে সহকারি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার উল্লেখ করে স্বাক্ষর করেছেন। ওই আয়-ব্যয় বিবরণীতে সংগঠনটির অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণে খেলাধুলার সামগ্রী, বিভিন্ন আসবাবপত্র সহ অন্যান্য সম্পদের কথা উল্লেখ করে সংগঠনটির কার্যক্রম সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেন। অপরদিকে, সংগঠনটির উপরে উল্লেখিত সম্পদ নেই বলে জানান অভিযোগকারীরা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রুশিয়া আক্তার বলেন, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আমাকে না জানিয়েই আমার সীল ও পদবী ব্যবহার করেছেন। কয়েকটি কাগজে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বলেও উল্লেখ করেছেন। আমি সেসময় পদে থাকাবস্থায় তিনি কি করে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত হন সেটা জানিনা।
অভিযোগকারী সাইদুর রহমান বলেন, আমাদেরও তো কমিটিতে থাকার হক আছে। আমাদেরকে না জানিয়ে কয়েকজন মিলে কমিটির অনুমোদনের জন্য গোপনে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। এরপর আমিসহ ১২৫ জন মিলে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছি। আগের কমিটির কিছু লোক গোপনে সমিতির আয়-ব্যয় হিসাবের অডিট করিয়েছে। সেই কমিটির সভাপতি আলিমগীর হোসেনও অডিটের বিষয়ে জানেননা। সমিতির আয়-ব্যয় বিবরণীর যে অডিট করানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভূয়া। সেখানে যেসব ব্যয় দেখানো হয়েছে তার অধিকাংশই মিথ্যা। অনেক আয়ের হিসাবও নেই। এমনিকি ক্লাবের কোন আসবাবপত্রও নেই। খোলাধুলার সামগ্রী যা লাগে সেগুলোর খরচও আমরা এলাকাবাসী মিলে বহন করি। ক্লাবের পক্ষ থেকে সেগুলো বহন করেনি।
আরেক অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা লিখিত অফিযোগ দেয়ার পর কে বা কারা আমার স্বাক্ষর জাল করে অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন করেছে। সেটা আমার স্বাক্ষর নয়, জাল করা হয়েছে।
সংগঠনটির বর্তমান কমিটির সভাপতি পদপ্রার্থী ও সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম, তবে সেটা ছেড়ে দিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ম্যাডাম তদন্তে আসার পর সবার সাথে আলোচনা করে কম্প্রোমাইজ করে কমিটি বাতিল করে দিয়েছি। আর অডিটে যেসব হিসাব দেখানো হয়েছে সেগুলোর খাতাপত্র আছে। অডিটের সময় সভাপতি আলমগীর হোসেন উপস্থিত না থাকলেও তিনি সব কিছুই জানেন। তিনি আরো বলেন, এসব নিয়ে যে অভিযোগ ছিল আমরা সেগুলো মিউচুয়্যাল করে ফেলেছি।
এসব বিষয়ে কথা হলে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার অফিসের ম্যাডাম যখন ট্রেনিংয়ে ছিলেন তখন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাকে চিঠির মাধ্যমে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছেন। আমি যদি এসব না করতে পারি তাহলে আমার জেলা অফিস এগুলো একসেপ্ট করলো কিভাবে? আমি জেনেশুনেই এসব করেছি। অডিট প্রসঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সংগঠনের কর্তৃপক্ষ যেসব বিষয় উপস্থাপন করেছে সেগুলোই অডিট করা হয়েছে। সভাপতিকে না জানিয়ে কি অডিট করা যায়? অডিট নিষ্পত্তির কপিতে সভাপতির স্বাক্ষর আছে।
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল বাতেন বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সকল কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন। তবে উল্লেখিত সংগঠনটির কমিটি এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমের সংগঠনটির কমিটি গঠন করা হবে। অডিট নিয়ে যেহেতু অভিযোগ রয়েছে, সেটি পুনরায় নিরীক্ষণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।