জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন ‘সুরা মসজিদ।’ উত্তরের জেলা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্যের সাক্ষী হয়ে ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সুরা মসজিদ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। তাদের ধারণা, গায়েবিভাবে এক রাতেই তৈরি হয়েছিল এই মসজিদ। আর এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে এবং মানত করতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মুসল্লিরা। রোগ থেকে মুক্তি পাওয়াসহ মনের বিভিন্ন আশা পূরণে এই সমজিদে মানত করেন তারা।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বদিকে ও ঘোড়াঘাট উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের পাশে চৌরগাছা গ্রামে সুলতানি আমলের বিরল স্থাপত্য এই সুরা মসজিদটির অবস্থান।
সুরা মসজিদটি ২ ভাগে বিভক্ত। নামাজ ঘর ও বারান্দা। নামাজ ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৭.৮৪ মিটার। বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪.৮৪ মিটার আর প্রস্থে ২.১২ মিটার। চুন-সুরকি ও ছোট আকৃতির ইট দিয়ে নির্মিত দেওয়ালগুলোর প্রস্থ ১.৮০ মিটার করে। নামাজ ঘরের ছাদ গোলাকৃতির গম্বুজ দ্বারা আবৃত। বারান্দায় রয়েছে এক সারিতে তিনটি গম্বুজ।
মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে তিনটি ও উত্তর-দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। এছাড়াও বারান্দার চারদিকেই রয়েছে একটি করে প্রবেশপথ। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেওয়ালে রয়েছে তিনটি অলঙ্কৃত পাথরের তৈরি মেহরাব। মসজিদটির বাইরে পাথরের ডিজাইন করা নকশা রয়েছে। স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী সুলতানি আমলের স্থাপত্য এটি। সুরা মসজিদটি হোসেন শাহী (১৬ শতক) আমলের নিদর্শন।
মনের আশা পূরর্ণে মানত করতে আসা রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। সন্তান না হওয়ায় আল্লাহর এই পবিত্র ঘরে মানত করেছিলাম। আল্লাহর রহমতে আমার সন্তান হয়েছে। তাই খাসি দিয়ে মানত সম্পন্ন করছি।’
গোবিন্দগঞ্জ থেকে আসা আতাউর রহমান বলেন, ‘এই মসজিদে আসছি নামাজ আদায় করতে। এখানে আসলে আমার অনেক ভালো লাগে এবং মনে শান্তি মেলে।’
মসজিদটি দেখতে আসা কর্তিক দাস বলেন, ‘এই মসজিদটি খুব জাগ্রত। ধর্ম বড় বিষয় নই, এখানে সবার সমান অধিকার। আমার শারীরিক ও মানুষিক যে কোনো সমস্যা হলেই এই ঘরে এসে মানত করি। মানত করলে এই ঘরের মালিক আমার সব সমস্যার সমাধান করে দেন।’
মসজিদের খাদেম মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাপ-দাদারা এই মসজিদে খেদমত করে গেছেন। তাদের অবর্তমানে আমি কাজ করছি। সুরা মসজিদটির বয়স ৪০০ বছরের বেশি হবে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে নামাজ পড়তে এবং মানত করতে।’
মসজিদের ইমাম মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আল্লাহর ঘর এই সুরা মসজিদে আমি দীর্ঘদিন ধরে ইমামতি করছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লি অনেক বেশি হয়। তবে শুক্রবার মুসল্লিদের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। অনেক সময় নামাজের জায়গা দিতে পারি না।’
সূত্র : রাইজিংবিডি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।