বেলায়েত হুসাইন : মুসলিমদের কোনও উৎসবই নিছক উৎসব নয়; ইবাদতও বটে। ঈদুল আজহায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কোরবানি। কোরবানিতে যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় তেমনি এর আরেক উপকার হলো কোরবানিকৃত পশুর মাংস নিজে খেতে পারা ও অন্যকে উপহার দেওয়ার সুযোগ।
কোরবানির মাংসের সঠিক বিতরণ
কোরবানির মাংস বিতরণের মুস্তাহাব ও উত্তম পদ্ধতি হলো সমস্ত মাংস তিন অংশে ভাগ করা। একাংশ নিজের ও পরিবারের জন্য রাখা, আরেক অংশ স্বজনদের উপহার দেওয়া ও আরেক অংশ এতিম, অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা।
বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর কোরবানির গোশত বণ্টন সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখতেন, এক ভাগ গরিব প্রতিবেশীকে দিতেন আর এক ভাগ অন্য গরিবদের দান করতেন (আল ওযায়েফ, আবু মুসা আলআসবাহানি, মুগনি ইবনে কুদামা ১৩/৩৭৯-৩৮০)।
কোরবানির মাংস দান না করলে কি ক্ষতি হবে?
কোরবানি পশুর মতো তার মাংসের মালিকানাও কোরবানিদাতার। সেক্ষেত্রে ওই মাংস নিজে খাওয়া কিংবা কাউকে দেওয়া একান্তই তার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিনি চাইলে যেমন পুরোটাই বিতরণ করে দিতে পারেন, আবার চাইলে পুরোটা খাওয়ার অধিকারও তার আছে।
এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে- আল্লাহর রাসূল বলেছেন, তোমরা কোরবানির মাংস যে পরিমাণ ইচ্ছা খাও, অন্যদেরকে খাওয়াও এবং যতটুকু ইচ্ছা জমা করে রাখো। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৫১০)
ধনীদের কোরবানির মাংস দেওয়া যাবে?
এটা যেহেতু কোরবানিদাতার নিজস্ব সম্পদ, তাই তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে উপহার হিসেবে দিতে পারবেন। ইসলামি আইনবেত্তা ফকিহদের অভিমতও এটাই।
কোরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়া যাবে?
কোরবানির মাংস অন্য ধর্মাবলম্বীকেও দেওয়া জায়েজ। (ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফতোয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০) সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) তার ইহুদি প্রতিবেশীকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১২৮)।
বিতরণে সতর্কতা
১. মান্নতের কোরবানির মাংস পুরোটাই বিতরণ করতে হবে
মান্নতের কোরবানির মাংস মানতকারী ও তার পরিবার খেতে পারবে না; বরং তার পুরোটাই দান করে দিতে হবে এবং যারা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত শুধু তাদেরকেই দেওয়া যাবে, ধনীদের দেওয়া যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৫ ও রদ্দুল মুহতার : ৩/৭৩৭)
২. সামাজিকভাবে কোরবানির মাংস বিতরণে ভুল প্রচলন
আমাদের কিছু সমাজে প্রচলিত আছে সকল কোরবানিদাতাদের থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ (যে অংশ গরিবদের জন্য রাখা) মাংস সংগ্রহ করে তা আবার সমাজের প্রতিটি ঘরে বণ্টন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় কোরবানিদাতা চক্ষুলজ্জার ভয়ে কিংবা সামাজিক চাপে পড়েই মাংস দিতে বাধ্য হন। একইসঙ্গে এক্ষেত্রে ধনী, গরিব এমনকি স্বয়ং কোরবানিদাতাও ওই গোশতের ভাগ পান। কিন্তু সমাজে অনেকের কোরবানি মান্নতের থাকে, যার মাংসে শুধু গরিবদের অধিকার। তাই এ পদ্ধতি জায়েজ নেই।
তবে যদি মান্নতের না হয়; কোরবানিদাতা স্বেচ্ছায় এখানে মাংস দেন এবং তা শুধু গরিবদের মাঝেই বিতরণ করা হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে। (দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট, ফতোয়া নং : ১৫৩৮৩১)
৩. কোরবানিকৃত পশুর পা-মাথা ভাগের ক্ষেত্রে করণীয়
একাধিক শরিকে কোরবানি করলে ওজন করে মাংস বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নেই। পা ও মাথার ক্ষেত্রেও একই বিধান। তবে কেউ যদি নিজের ভাগের অংশ অন্যজনকে দিয়ে দেয়, তাতে সমস্যা নেই (আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩১৭, কাজিখান : ৩/৩৫১)।
৪. আকিকার মাংস বণ্টনেও একই বিধান
আকিকার মাংস সন্তানের মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ধনী-গরিব সবাই খেতে পারবেন। আকিকার মাংসের বণ্টন ও ব্যবহার কোরবানির মতোই। কিছু নিজেদের জন্য রাখা, কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং কিছু সদকা করা উত্তম (ইলাউস সুনান : ১৭/১১৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩০৪)।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষক-মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।