কোষের স্বকীয়তা নির্ধারিত হয় কোষের মধ্যে অবস্থিত নিউক্লিয়াস নামের অঙ্গাণু দ্বারা। নিউক্লিয়াসই প্রতিটি কোষের গঠন ও কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মোদ্দাকথা, নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকা ক্রোমোজোম বা ডিএনএই হচ্ছে সেই মাস্টার অণু, যার দ্বারা কোষের সব কাজ সম্পাদিত হয়। তাই ডিএনএকে বলা হয় জীবের বংশগতির ধারক ও বাহক।
একটি কোষের ডিএনএ–ই নির্ধারণ করে কোন পরিবেশে, কোন অবস্থায় একটি কোষ তথা একটি জীব কী ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে, সেই তথ্য কিন্তু লিপিবদ্ধ থাকে এই বৃহৎ অণুর মধ্যে। এ ছাড়া একই জীবের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে এই অণুটিই সাধারণত প্রবাহিত হয় হয়, অন্য কিছু নয়। একটি জীবের ডিএনএকে বলা হয় তার জেনোম। ডিএনএ গঠিত হয় চারটি মাত্র নাইট্রোজেনাস বেসড ক্ষার দিয়ে।
সংক্ষেপে এদের বলা হয় A, T, G ও C। সব জীবের ডিএনএতে এ চারটি বেসই একের পর এক দুই স্তরে সজ্জিত হয়ে পুরো ডিএনএ অণুটি তৈরি করে। তাই কোনো জীবের জিনোম সিকোয়েন্স জানা থাকলে তার জীবনপ্রকৃতির সব তথ্যই আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে বর্তমানে স্বল্প সময়ের মধ্যে এখন অনেক জটিল জীবেরও জিনোম সিকোয়েন্স করা সম্ভব হচ্ছে।
জিনোমের দৈর্ঘ্য একেক জীবের একেক রকম হয়। অতি ক্ষুদ্র ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার জিনোমের আকৃতি ৪.৬ মিলিয়ন বেস পেয়ার, আর মানুষের জিনোমের আকৃতি হলো ৩.২ বিলিয়ন বেস পেয়ার এবং এটা সুতার মতো ২ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি আণুবীক্ষণিক বস্তু। ৩.২ বিলিয়ন বেস পেয়ার সুতার প্রতিটি বেসের সজ্জাকে পুনরুদ্ধার করা সহজ কাজ নয়। ডিএনএর সিকোয়েন্স বের করার জন্য বিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক সেঙ্গার প্রথম একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন ১৯৭৭ সালে। এর নাম স্যাঙ্গার সিকোয়েন্সিং পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতির মাধ্যমেই ২০০৩ সালে মানুষের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার হয়েছিল। সেটা যা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে।
এই পদ্ধতিটি নির্ভুল হলেও এতে প্রচুর সময় ও খরচ হয়। তাই বিজ্ঞানীরা পরে সিকোয়েন্সিংয়ের নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এর একটি পদ্ধতিকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং বা এনজিএস প্রযুক্তি বলে। এই প্রযুক্তির অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম আছে। এক একটা প্ল্যাটফর্মের মূলনীতি একেক রকম। এ রকম কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম হলো ইলুমিনা (Illumina), প্যাকবায়ো (PacBio), এবিআই সলিড (ABI Solid), আয়ন টরেন্ট (Ion Torrent) ইত্যাদি। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেরই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো অতি অল্প সময়ে অল্প খরচে অনেক বড় ডিএনএকে সিকোয়েন্স করা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।