দোয়া কবুল হওয়ার সর্বপ্রথম শর্ত হলো উপার্জন হালাল হওয়া

doa

ধর্ম ডেস্ক : দোয়া প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য। আমাদের জীবনে দোয়ার গুরুত্ব অনেক। দোয়া ছাড়া কোনো মুসলমান চলতে পারে না। কমবেশি সবাই মহান পরওয়ারদিগারের কাছে দোয়া করে। কান্নাকাটি করে। মহান রবের কাছে নিবেদন করে। কিন্তু কখন আল্লাহপাক দোয়া কবুল করেন এবং কখন কবুল করেন না, তা জানা দরকার। রসুল (সা.) থেকে এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। দোয়া কবুল হওয়ার সর্বপ্রথম শর্ত হলো উপার্জন হালাল হওয়া।

doa

হারাম খেলে কখনো দোয়া কবুল হয় না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন- আল্লাহ পূতপবিত্র এবং তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবুল করেন। আর আল্লাহ মুমিনদের ওই বিষয়েরই হুকুম দিয়েছেন, নবী-রসুলদের তিনি যে বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হে রসুলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক কাজ করুন। (মুমিনদের উদ্দেশ করেও) তিনি বলেছেন- মে মুমিনগণ! তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।

তারপর রসুলুল্লাহ (সা.) এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফর করেছে, তার মাথার কেশ অবিন্যস্ত, শরীরও ধূলিমলিন। সে আকাশের দিকে হাত উঠিয়ে বলছে, সে আমার রব! হে আমার রব! কিন্তু তার আহার্য হচ্ছে হারাম, পানীয়ও হারাম, পোশাকও হারাম। হারাম খেয়েই তার বয়োবৃদ্ধি ঘটেছে। তাই তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে? (মুসলিম শরিফ) এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আমরা যারা অনেক ইবাদত করি, কিন্তু উপার্জন হালাল নাকি হারাম তা খেয়াল করি না, তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সুযোগ নেই। ইবাদত কবুল হতে হলে হালাল রিজিক বাধ্যতামূলক। মনে রাখা দরকার যে হারাম উপার্জন একটি মারাত্মক ব্যাধি। যা নিরাময়যোগ্য নয়। এটা এতটা ভয়ংকর যে মানুষের সব ইবাদত-বন্দেগি নষ্ট করে দেয়। সারা জীবনের সব নেক আমল বরবাদ করে দেয়।

যেসব আয় হারাম তা হলো- সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, অন্যের সম্পদ দখল করা, মিথ্যা কথা বলে ক্রেতার কাছে মাল বিক্রি করা, অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, জালিয়াতির মাধ্যমে কেনাবেচা করা, প্রতারণা করে আয় করা, মানুষকে ঠকিয়ে আয় করা ইত্যাদি। এসব আয়-রোজগার নিষিদ্ধ। আয়-রোজগার করতে হবে সহজসরল পথে। প্রকাশ্য এবং পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিতে। কোনো প্রকার ধোঁকার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। প্রতারণা করা যাবে না।

কার কার দোয়া কবুল হয় এ বিষয়ে প্রিয় রসুল (সা.)-এর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে নবী করিম রসুল (সা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন- পাঁচ ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। (১) মজলুমের দোয়া, যে পর্যন্ত সে প্রতিশোধ গ্রহণ না করে, (২) হাজির দোয়া, যে পর্যন্ত সে বাড়িতে ফিরে না আসে, (৩) আল্লাহর পথের মুজাহিদের দোয়া, যে পর্যন্ত সে জিহাদ থেকে বসে না পড়ে, (৪) অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া, যে পর্যন্ত সে সেরে না ওঠে, (৫) কোনো মুসলমান ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে অপর মুসলমানের দোয়া। তারপর তিনি বললেন, এগুলোর মধ্যে আবার সবচেয়ে দ্রুত কবুল হয় কোনো মুসলমানের জন্য তার অনুপস্থিতিতে অপর মুসলমানের দোয়াটি (বায়হাকী)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, মজলুম প্রতিশোধ গ্রহণ করার আগপর্যন্ত তার দোয়া কবুল হয়। প্রতিশোধ গ্রহণ করে ফেললে আর তার দোয়া কবুল হয় না। এভাবে হাজিদের দোয়া হজ চলাকালীন বা নিজের এলাকায় ফিরে আসার আগপর্যন্ত কবুল হয়। মুজাহিদের দোয়া জিহাদের মাঠে কবুল হয়। অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় যত দিন সে সুস্থ না হয়। এক মুসলমান যদি আরেক মুসলমানের অনুপস্থিতিতে দোয়া করে তাহলে সেই দোয়াও আল্লাহ কবুল করে নেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয় রসুল (সা.) বলেছেন- তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (১) রোজাদার যখন ইফতার করে, (২) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, (৩) মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়াকে আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয় (তিরমিযী)।’

মিরপুর-৬ নম্বরে বাটা জুতার শোরুমে আগুন

অপর হাদিসে এসেছে, মুসাফির ব্যক্তির দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতার দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন- তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়। এগুলো কবুল হওয়ার বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। (১) পিতার দোয়া সন্তানের জন্য (২) মুসাফিরের দোয়া, (৩) মজলুম ও অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া (তিরমিযী, আবু দাউদ)। আরও অনেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে কার দোয়া কবুল হয় বা কার দোয়া কবুল হয় না। মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ওই সব লোকের অন্তর্ভুক্ত করেন, যাদের দোয়া কবুল করা হয়।

লেখক : মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন