লাইফস্টাইল ডেস্ক : সদ্য কৈশোর পেরোনো ছেলেরা যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন থাকে, তার মধ্যে অন্যতম দাড়ি–গোঁফ না ওঠা। আবার কারও মুখে দাড়ি উঠলেও দাড়ির ঘনত্ব এবং আকার আশানুরূপ হয় না। প্রচলিত সংস্কার হলো, বারবার শেভ করলে দাড়ি ওঠে এবং ঘন হয়। এ নিয়ে অনেককে বেশ কসরত করতে দেখা যায়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক আমেরিকান প্রকাশনা সংস্থা ওয়েব এমডির ওয়েবসাইটে ফেসিয়াল হেয়ার বা মুখের লোম বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্বে দাড়ি নিয়ে একটি আলোচনা রয়েছে। সেখানে এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয়, মুখে দাড়ি ওঠা বয়ঃসন্ধির শেষ পর্যায়ের লক্ষণগুলোর একটি। সাধারণভাবে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে ছেলেদের মুখে দাড়ি উঠতে শুরু করে। এই বয়সে বিভিন্ন শারীরিক পরিবৰ্তন ঘটে। এসব পরিবর্তনের সময়ও ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়। অর্থাৎ কারও দাড়ি দ্রুত ওঠে, আবার কারও দেরিতে ওঠে।
দাড়ি ওঠা শুরু করলেই কি শেভ করা শুরু করতে হবে? প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নাই। এ ছাড়া বারবার শেভ করলে দাড়ি ঘনও হয় না।
চিকিৎসা বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দাড়ি ওঠার সময় ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। কারও কারও ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালের একবারে শেষ পর্যায়ে, আবার কারও ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালের মধ্যপর্যায়েই পুরো দাড়ি ওঠে যায়। আবার কারও ক্ষেত্রে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আবার কারও কখনোই ঘন দাড়ি ওঠে না।
দাড়ি ওঠা এবং বিভিন্ন আকার পাওয়ার পেছনে কী কী প্রভাবক থাকে? এ প্রশ্নে ওয়েবসাইটটি জানায়, একজন পুরুষের দাড়ি কত দ্রুত বাড়বে ও সম্পূর্ণ হবে তা নির্ধারণ করে মূলত জিন ও হরমোন। পুরুষের দৈনন্দিন জীবনধারণ ও অভ্যাস দাড়ির বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। দাড়ির বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে টেস্টোস্টেরন হরমোন এবং এর মাত্রা ব্যক্তি ও বয়সভেদে আলাদা হতে পারে। কম টেস্টোস্টেরন দাড়ি বৃদ্ধিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
জিনগত বৈশিষ্ট্য একজন ব্যক্তির দাড়ি ওঠা এবং বিস্তার প্রভাবিত করে। জিনের কারণে কারনো মুখভর্তি দাড়ি গজায়। আবার জিনের কারণেই কারও ক্ষেত্রে বিরল দাড়ি বা প্যাঁচানো, কুঁচকানো বা ঢেউ খেলানো দাড়ি দেখা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চুল কামানো বা শেভিংয়ের সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি বা ঘনত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রচলিত এই ধারণার মূলে জড়িয়ে আছে চুল কামানোর ফলে নতুন করে ওঠা চুলের ভিন্নতায়। নতুন চুল সাধারণত ঘন ও কালো দেখায়। কারণ, নতুন চুল ওঠামাত্রই প্রাকৃতিক প্রভাবকের সংস্পর্শে আসে না। সূর্যের আলো, সাবানসহ অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান চুলের রং ও পুরুত্ব হালকা করে দিতে পারে। এসব কারণে মানুষ মনে করে, চুল ন্যাড়া করলে দ্রুত বাড়ে এবং আরও গাঢ় বা ঘন হয়। এমন ধারণা সঠিক নয়।
ওয়েবসাইটটি আরেকটি প্রতিবেদনে জানায়, বারবার শেভ করার সঙ্গে দ্রুত দাড়ি ওঠা বা বড় হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি প্রচলিত ধারণা, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে ১৯২৮ সালে এনাটোমিক্যাল রেকর্ড নামে একটি জার্নালে আমেরিকান ফরেনসিক নৃতত্ত্ববিদ মিলড্রেড ট্রটারের একটি গবেষণার বরাত দিয়ে জানানো হয়, চুল বা দাড়ির রং, ঘনত্ব এবং বৃদ্ধির হারের সঙ্গে শেভিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
গবেষণাটি দেখুন এখানে।
দাড়ি বৃদ্ধির কিছু উপায়
মানুষের জিন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তবে জীবনযাপন ও অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ও সুস্থ দাড়ি পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে: চিকিৎসা বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজ ২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার বরাতে জানায়, কিছু ভিটামিন আছে যা মৃত ফলিকলকে সচল করে দাড়ি গজাতে সাহায্য করে। মাছ, ডিম, দুধে ভিটামিন ডি রয়েছে। এ ছাড়া ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার যেমন: বাদাম, রুটি, মাছ–মাংস এবং বি ১২ ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার— ফল, শাক–সবজি— দাড়ি গজাতে ও দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম: ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে ২০১৫ সালের ২৭ মে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, পর্যাপ্ত ঘুম দেহের টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই দাড়ির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম প্রয়োজন।
ত্বক পরিষ্কার রাখা: পরিষ্কার ত্বক দাড়ি উঠতে সাহায্য করে। তাই ত্বক পরিষ্কার এবং আর্দ্র রাখতে হবে।
ধূমপান ত্যাগ: তামাকের ধোঁয়া রক্তনালির প্রদাহ এবং ফলিকলে পুষ্টি সরবরাহকারী ডিএনএর ক্ষতি করে। তাই দ্রুত দাড়ি বাড়াতে চাইলে ধূমপান ছাড়তে হবে।
সিদ্ধান্ত
ওপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দাড়ি ওঠা বা ঘন হওয়ার সঙ্গে শেভিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং দাড়ি ওঠার বিষয়টি পুরুষের হরমোন ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে। এ ছাড়া পুরুষের দৈনন্দিন জীবনধারা ও অভ্যাস তাদের দাড়ির বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।