লাইফস্টাইল ডেস্ক : ‘আয়না দিয়ে চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার’- হাসন রাজার এ গান কমবেশি সবাই শুনেছেন, মাঝে মাঝে গেয়েছেন। কখনো কখনো এ গান শুনতে শুনতেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথার পাকা চুল তুলেছেন। আর তখনই হয়তো কেউ আপনাকে এভাবে চুল তুলতে বারণ করল। কারণ, পাকা চুল তুলে ফেললে আরও বেশি পাকা চুল গজায়। কিন্তু আসলেই কি তাই?
ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাস ফর মেডিকেল সায়েন্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্যকে প্রচলিত ধারণা বা বিশ্বাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শস্কাঙ্ক ক্রালেটি বলেন, একটি পাকা চুল তুলে ফেলার অর্থ হলো-সেখানে নতুন করে আরেকটি পাকা চুল ওঠার সুযোগ করে দেওয়া। কারণ, প্রত্যেকটি ফলিকলে (এক ধরনের কোষ, যা থেকে চুল জন্মায়) একটি চুলই গজাতে পারে। ফলে পাকা চুল তুলে ফেললে তার আশপাশের চুল সাদা হওয়ার সুযোগ নেই-যতক্ষণ না ওই চুলগুলোর ফলিকলের রঞ্জক কোষগুলো না মরে।
ডা. শস্কাঙ্ক বলেন, একটি চুল তখনই রং বদলায়, যখন ওই চুলের ফলিকলের রঞ্জক কোষগুলো মরে যায়। তাই কেউ যখন চুল তুলে ফেলে, সে জায়গায় নতুন আরেকটি চুল গজায়। আর যেহেতু ওই চুলের রঞ্জক কোষগুলো রঞ্জক পদার্থ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, তাই চুলগুলোর রংও সাদা হবে।
পাকা চুল তুলে ফেলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়, মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ থেকে চুল রং পায়। আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলানিনের উৎপাদন কমে যায়। যখন চুলের ফলিকলের এ রঞ্জক উৎপাদনকারী কোষগুলো মরে যায়, তখন আমাদের চুলে আর রং থাকে না-যাকে আমরা পাকা চুল বলি। একটি পাকা চুল তুলে ফেলা তার আশপাশের চুলের ওপর প্রভাব ফেলে না।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম টুডে ডটকমে ‘পাকা চুল তুলে ফেললে আরও বেশি পাকা চুল গজানোর’ ধারণা খণ্ডন করে বিস্তারিত এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। দ্য বিউটি ব্রেইন্স ব্লগের সম্পাদক শ্যুলার বিষয়টিকে প্রচলিত ধারণা হিসেবে তুলে বলেন, পাকা চুল তুলে ফেলার অর্থ সাময়িকভাবে সেটিকে সরিয়ে দেওয়া। কারণ, ওই চুলের ফলিকল তখনো বেঁচে থাকে এবং তার পরিবর্তে নতুন আরেকটি চুল সেখানে গজায়।
তিনি আরও বলেন, পাকা চুল তুলে ফেললে তার পরিবর্তে আরও বেশি পাকা চুল গজাবে-এমন ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, এখানে একটি চুলের ফলিকলেই প্রভাব পড়ে, যা অন্যান্য চুলকে প্রভাবিত করে না।
শ্যুলার আরও বলেন, এভাবে বারবার একই ফলিকল থেকে পাকা চুল তুলে ফেলার ফলে সেখানে নতুন করে চুল গজানোর সম্ভাবনা কমে যায়। আর তাই মাথায় পাকা চুল দেখা গেলে তিনি সেগুলোকে উপেক্ষা করতে বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর টেলিভিশন চ্যানেল ডব্লিউকেওয়াইসিকে অলাভজনক চিকিৎসাকেন্দ্র ক্লিভল্যান্ডের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেলিসা পিলিয়াং বলেন, একটি পাকা চুল তুললে, সেখানে একটি চুলই গজায়। এটি আশপাশের চুলকে প্রভাবিত করে না। বরং ঘন ঘন পাকা চুল তুলে ফেলার ফলে মাথায় টাক পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
চুল পাকা রোধ করার উপায়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পাকা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা রোধ করা সম্ভব নয়। তবে কিছু উপায় অবলম্বন করে অল্প বয়সে চুল পাকা রোধ করা সম্ভব।
এর মধ্যে আছে:-
ভিটামিন: খাদ্য তালিকায় অনেক পুষ্টির স্বল্পতায় চুল পেকে যেতে পারে। এর মধ্যে ভিটামিন অন্যতম। তাই খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি৩ ও ভিটামিনবি১২ এর পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। মাশরুম, দুধ, ডিম, গরুর কলিজা, টুনা জাতীয় খাবারে পর্যাপ্ত ভিটামিন রয়েছে।
ধূমপান পরিত্যাগ: ধূমপান চুলের ফলিকলের ক্ষতি ও সংকচিত করে ফেলতে পারে। ধূমপান একইসঙ্গে চুল ও ত্বকে দ্রুত বার্ধক্যের প্রভাব ফেলতে পারে।
মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা: পাকা চুলের অন্যতম প্রধান কারণ মানসিক চাপ। দীর্ঘস্থায়ী চাপ মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলোর কাজ বন্ধ করে দিতে পারে। যার ফলে অল্প বয়সে চুল পেকে যায়।
চুলে রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো: কেমিক্যালভিত্তিক শ্যাম্পু, সাবান, হেয়ার ডাই ইত্যাদির ব্যবহার সরাসরি চুলের সমস্যা সৃষ্টি করে। এর মধ্যে চুল পেকে যাওয়াও আছে।
সিদ্ধান্ত
প্রতিটি চুল আলাদা আলাদা ফলিকল তথা কোষ থেকে জন্মায়। চুলের রঙও নির্ভর করে ফলিকলে বিদ্যমান রঞ্জক পদার্থের ওপর। ফলে একটি পাকা চুল তুললে তার পরিবর্তে সেখানে একটি পাকা চুলই গজায়। এটি আশপাশের চুলকে প্রভাবিত করে না। পাকা চুল তুলে ফেললে তার পরিবর্তে আরও বেশি পাকা চুল গজানোর বিষয়টি একটি প্রচলিত ধারণা বা শ্রুতিকথা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।