বড়পর্দার কাজ হোক বা ছোটপর্দা— অভিনয় করতে গেলে পেশার খাতিরে নিজেদের ‘কমফোর্ট জ়োন’ থেকে বেরিয়ে আসতেই হয় শিল্পীদের। নতুন শিল্পীদের এ ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। আর যাঁরা অভিজ্ঞ অভিনেতা বা অভিনেত্রী, তাঁরা নিজেদের অসুবিধা, সুবিধার কথা চুক্তির সময় জানিয়ে দেন। সম্প্রতি যেমন বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন নিজের চুক্তিতে একটি শর্ত যোগ করেছেন। জানিয়েছেন, তিনি দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। আবার কলকাতায় অনেক ছোটপর্দার শিল্পীরা নিজেদের চুক্তিতে লিখে দিচ্ছেন, মাসে নির্দিষ্ট কিছু দিন তাঁরা শুটিং করবেন। অনেকে আবার চুক্তিতে শর্ত দেন, দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। দক্ষিণী অভিনেত্রী সাই পল্লবীর চুক্তিতে লেখা রয়েছে, পর্দায় হাতকাটা পোশাক বা ছোট পোশাক পরবেন না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই একই কথা বলেছেন টলিউডের অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্য।
তবে শ্বেতাই প্রথম নন। শোনা যায়, ছোটপর্দার অভিনেত্রী সৌমিলি বিশ্বাসও খোলামেলা পোশাক পরার বিপক্ষে ছিলেন। একটা সময় কোয়েল মল্লিককে বড়পর্দায় শুধুই সালোয়ার কামিজে দেখা যেত। তা কোনও গান হোক কিংবা দৃশ্য। কিন্তু সে সব নিয়ে আগে বিতর্ক না বাধলেও, এখন শ্বেতার মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে যুক্তি-তক্কো।
বিতর্কের সূত্রপাত একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে গিয়ে অভিনেত্রী শ্বেতা বলেন, ‘‘আমি কখনও হাতাকাটা ব্লাউজ় পরব না, কখনও ছোট জামা পরব না। কারণ, আমি শরীর বেচে রোজগার করতে আসিনি। বরং প্রতিভা বিক্রি করতে এসেছি।’’ শ্বেতার এই মন্তব্য ঘিরে সমাজমাধ্যমে হই চই। টেলিপাড়ার বেশ কিছু অভিনেত্রী শ্বেতার নাম না নিয়ে নানা ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেছেন। হাতকাটা ব্লাউজ়, ছোট জামা পরা নিয়ে শ্বেতার আপত্তি প্রসঙ্গে চলছে মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য।
এ প্রসঙ্গে, আনন্দবাজার ডট কম-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল স্টুডিয়োপাড়ার বেশ কিছু অভিনেত্রীর সঙ্গে। অনেক সময় খোলামেলা পোশাক পরার জন্যে দর্শকের কটাক্ষের শিকার হতে হয় তাঁদের। তাই অভিনেত্রী মানসী মনে করেন, এই কথায় গুরুত্ব দেওয়াই বড় ভুল। তাঁর দাবি, ছোট পোশাক না পরতে চাওয়া বা হাতকাটা পোশাকে আপত্তি থাকা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মানুষটির উপর। তাই এখানে কেউ কোনও মন্তব্য করতে পারেন না।
অভিনেত্রী ঋ-ও একমত মানসীর সঙ্গে। শিল্পী বা অভিনেত্রীদের নিজস্ব স্বাধীনতা আছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, “আমি কেমন পোশাক পরি, তা সবার জানা। অভিনেত্রী মানেই কি পোশাক খুলে দাঁড়িয়ে পরবে? তাঁর নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকবে না? যে যেমন পোশাকে স্বচ্ছন্দ, তার তেমনটাই পরা উচিত।” মানসী, ঋ-এর সুরে সুর মেলালেন অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ও। মাত্র চার বছরের অভিনয়-জীবন তাঁর। কিন্তু শিল্পী হিসাবে তিনিও মনে করেন, দর্শক কোনও ভাবেই ঠিক করে দিতে পারেন না, শিল্পীরা কেমন পোশাক পরবেন। সুস্মিতা বললেন, “আমি যেমন শাড়ি পরি। তেমনই খোলামেলা পোশাক পরতেও আমার অসুবিধা হয় না। কিন্তু কেউ যদি স্বাচ্ছন্দ্য না বোধ করেন, তা হলে তিনি কেন পরবেন এমন পোশাক? এই স্বাধীনতা সবার থাকা উচিত।”
হাতকাটা পোশাক বিতর্কে আনন্দাবাজার ডট কমকে অভিনেত্রী শ্বেতা জানিয়েছিলেন, তিনি অন্য কারও পোশাক পরার উপর কোনও নীতি-পুলিশি করতে চান না। বরং তিনি তাঁর ধারাবাহিকের সহ অভিনেত্রী মিশমি দাস যে ধরনের আধুনিক পোশাক পরেন, তার প্রশংসা করেছেন। কে, কী পরবেন তা যেমন তিনি ঠিক করে দিতে পারেন না, তেমনই আবার তাঁর ভাবনাচিন্তাকে কেন্দ্র করে মানুষ তাঁকে বিচার করতে বসবে, সেটাও তিনি মানতে নারাজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।