জুমবাংলা ডেস্ক : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থায়ী দোকান তৈরি করা হবে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, টিসিবি সাধারণত একত্রে চার থেকে পাঁচটি পণ্য সরবরাহ করে। কিন্তু অনেক সময় এমন হয় একটি পণ্য পৌঁছাতে দেরি হলে ডিসিরা বাকি পণ্যগুলো আটকে রাখেন, সবগুলো পণ্য একত্রে দেবেন বলে৷ কিন্তু যখন ফিক্সড দোকান করে দেবো তখন যে মাল যখনই দোকানে চলে যাবে তখনই সেই মাল বিক্রি শুরু হবে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ।
মাঝে মাঝে টিসিবির পণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, জরুরিভিত্তিতে পণ্য সরবরাহ ও সেবা নিশ্চিত করতে টিসিবি শুরু হয়েছিল। পরে এটাকে একটা কাঠামোতে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আমাদের নিজস্ব কোনো গুদাম ছিল না। যে কোনো পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখতে সেটার বাফার স্টক থাকা দরকার৷
তিনি বলেন, বাফার স্টকের জন্য আমাদের গুদাম দরকার। চট্টগ্রামে আমরা ৪০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি নতুন গুদাম করেছি। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গুদাম করছি। চেষ্টা করবো দ্রুত যেন বাফার স্টক তৈরি করতে পারি। এছাড়া টিসিবিতে আমাদের চার-পাঁচটি পণ্য দেওয়া হয়, অনেক সময় একসঙ্গে সব পণ্য না পেলে ডিসিরা পণ্য দেন না। এজন্য আমরা নির্দিষ্ট দোকান তৈরি করে দেবো, যাতে যখন যে মাল আসবে তখন সেটা বিক্রি শুরু করতে পারবে।
তিন কারণে মাঝে মাঝে টিসিবির পণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের তিনটা কারণ এক হলো, বাফার স্টক না থাকায় আমাদের পণ্য কিনেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়েও আমাদের বাফার স্টক নেই। দ্বিতীয় আমাদের সংরক্ষণের জন্য স্টোরেজ নেই এবং ডিলারদেরও ১৫ দিন বা একমাস পণ্য রাখার মতো নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা নেই। এই তিন কারণে টিসিবির পণ্য সরবরাহে ৭ বা ১০ দিন আগে-পিছ হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেখানে যে জিনিস ভালো পাওয়া যায় আমরা সেটা সংগ্রহ করে টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিতরণ করবো। টিসিবির পণ্য হতদরিদ্র মানুষের জন্য নয়। কারণ ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা পণ্য ক্রয় করার ক্ষমতা তাদের নেই। এজন্য এমন মানুষদের সম্পৃক্ত করবো যাতে নিম্ন, মধ্যবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ তাদের একটু সুযোগ সুবিধা দিতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে নজর দিচ্ছি সেটা হলো পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো। এত কিছুর মধ্যেও গত তিন মাসে, প্রতি মাসে আমরা রপ্তানি বাড়িয়েছি। এখন আমরা আমদানিতেও বহুমুখীকরণ করতে চাচ্ছি। যাতে একটি স্থান বা দেশের ওপর নির্ভর না থাকতে হয়। আমরা অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে (এলডিসি) উত্তরণ ঘটবে। এজন্য আমরা তিন বছর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবো। ফলে আগামী পাঁচ বছর আমাদের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জিং। একই সঙ্গে আমরা যে সুবিধাগুলো পেতাম সেটা এলডিসি হলে পাবো না। সেজন্য এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ছয়টি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ পর্যন্ত অনেকগুলো দেশের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য আলোচনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় কাজ হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, এর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি, দ্বিপাক্ষিক পলিসি নিয়ে কাজ করছি। ট্যারিফ পলিসি নিয়ে কাজ চলছে, আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। অফিসিয়ালি লঞ্চ করবো। আমরা বহুমুখী কাজ করছি। সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
এলডিসি উত্তরণের পরে আমাদের দেশের শিল্পগুলো রক্ষায় কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রতিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা শুধু কি কি পরিবর্তন আসবে সেটা করে দেবো। বাকি কাজগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের লোকাল শিল্প ও কর্মসংস্থার কথা মাথায় রেখেই আমরা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টসহ যা করি সেটা আমাদের একটি নীতিমালা আছে সে অনুযায়ী করবো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে করবো। ফলে এলডিসি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বুঝে শুনে এফটিএ করা হবে। এমনভাবে এফটিএ করা হবে না যাতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এলিডিসি হওয়ার পর ভর্তুকি বা সুবিধা কীভাবে দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউটিও’র আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ভর্তুকি দেবে না। বাংলাদেশ নিজেদের কৌশল মেনেই ভর্তুকি দেবে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না যাতে দেশের লোকাল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। ডব্লিউটিও কিছু বললেই মেনে নিতে হবে এমন নয়। ভারত তাদের কৃষি ভর্তুকি তুলে নেয়নি।
গরুর মাংস আমদানি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, গরুর মাংসের আমদানি-রপ্তানির কোনো সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নেবে না। এটি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোক্তাবান্ধব নাকি ব্যবসায়ীবান্ধব এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার ভোক্তাবান্ধব। আমরা ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেবো যতক্ষণ তারা ভোক্তাকে সাহায্য করবে এবং রীতির মধ্যে থাকবে। আমরা জনগণের স্বার্থে কাজ করতে চাই। যাতে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।