জুমবাংলা ডেস্ক : আইনের চোখে জমির প্রকৃত মালিক তিনি, যার নামে দলিল রয়েছে। দলিল মানে হচ্ছে বিক্রয় চুক্তিপত্র বা দলিল রেজিস্ট্রেশন, যার মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর হয়। দলিল ছাড়া শুধু কথাবার্তার ভিত্তিতে মালিকানা দাবি করলে তা আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। জমির বৈধ মালিকানা প্রমাণে প্রয়োজন হয় দলিল, খতিয়ান, নামজারি, ও ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ। শুধু দখলে থাকলে বা বসবাস করলেই জমির মালিক হওয়া যায় না।
Table of Contents
অনেক সময় দেখা যায়, দলিল অন্যের নামে থাকলেও জমির দখল থাকে ভিন্ন কারো হাতে। কেউ হয়তো জোরপূর্বক, আত্মীয়তার সুযোগে বা স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল করে রাখেন। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় “দখল ভিত্তিক মালিকানা দাবি”, যা প্রায়ই জটিলতা ও বিবাদের জন্ম দেয়। দীর্ঘদিন কেউ জমি দখলে রাখলে এবং প্রকৃত মালিক কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিলে, দখলদার ব্যক্তি ‘স্বত্বসুরক্ষা’ (Adverse Possession) আইনের অধীনে অধিকার দাবি করতে পারেন—তবে তা প্রমাণ করা কঠিন।
আইন যা বলে: নির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (ধারা ৮)
এই আইনে বলা হয়েছে:
“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে জমি থেকে উৎখাত হয়েছেন, তিনি তার দখল পুনরুদ্ধারের জন্য আদালতের শরনাপন্ন হতে পারবেন।”
অর্থাৎ, বৈধ মালিকানা থাকা সত্ত্বেও যদি কাউকে বেআইনিভাবে জমি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে তিনি আদালতে মামলা করে জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
জমি পুনরুদ্ধারের জন্য ৪টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত
এই আইনে মামলা করার জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে:
১. জমির প্রকৃত মালিকানা প্রমাণ:
বৈধ দলিল, খতিয়ান, নামজারি কাগজপত্র ও ট্যাক্স পরিশোধের প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
২. জমির প্রকৃত দখল:
আপনি জমিটি ব্যবহার করেছেন, চাষ করেছেন বা বসবাস করেছেন—এই বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে।
৩. সম্মতি ছাড়া জমি দখল:
কেউ যদি জোরপূর্বক বা প্রতারণা করে জমি দখল করে, তবে তা বেআইনি দখল হিসেবে বিবেচিত হবে।
৪. ১২ বছরের মধ্যে মামলা:
জমি বেদখলের ১২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। নাহলে আপনার মালিকানা দাবি ‘প্রেসক্রিপটিভ রাইট’ আইনের আওতায় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
তামাদি আইন, ১৯০৮ ও ধারা ২৮
বাংলাদেশের ভূমি আইন অনুযায়ী, যদি কেউ কোনো জমি ১২ বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ও মালিক সেজে ভোগদখল করেন এবং প্রকৃত মালিক কোনো আপত্তি না করেন, তাহলে দখলদার ব্যক্তি সেই জমির মালিকানা দাবি করতে পারেন। এ বিষয়টি ১৯০৮ সালের তামাদি আইন, ধারা ২৮-এ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তামাদি আইন, ১৯০৮ – ধারা ২৮ কী বলে?
“যে ব্যক্তি অপরের সম্পত্তি নিরবিচারে, টানা ১২ বছর ধরে, মালিকানা দাবিতে ভোগদখল করেন এবং প্রকৃত মালিক আপত্তি করেন না, সেই ব্যক্তি জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন। এ অবস্থায় প্রকৃত মালিকের মালিকানা আইনি দৃষ্টিতে তামাদির আওতায় পড়ে যাবে।”
অর্থাৎ, ১২ বছর পার হয়ে গেলে প্রকৃত মালিক আর জমি ফেরত চেয়ে মামলা করতে পারবেন না। ফলে জমির মালিকানা দখলদারের হাতে চলে যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।