জুমবাংলা ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ডলারের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অদক্ষতাকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংক নিজেদের সংকট মোকাবিলা ও উচ্চ মুনাফার জন্য বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে বলেছে। যে কারণে তারাও বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়েছে। এই ফাঁদে পড়ে অস্থির হয়ে ওঠে ডলার বাজার। তবে এ প্রবণতা বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে গত আগস্ট থেকে আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। তবে যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে সে হারে রপ্তানি আয় বাড়েনি। মূলত রপ্তানি আয় দিয়ে কখনো আমদানি ব্যয় মেটানো যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় বেশি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়েছে। সঙ্গতকারণে সব সময় এই ঘাটতি রেমিট্যান্স থেকে মেটানো হয়। কিন্তু গত নভেম্বর থেকে রেমিট্যান্সও কমতে থাকে। যে কারণে গত মার্চ থেকে বাজারে ডলার সংকটের গতিও বাড়ে।
এদিকে করোনার পর কয়েকটি ব্যাংক আগাম ডলার সংগ্রহ না করেই আগ্রাসী নীতিতে আমদানির এলসি খুলতে থাকে। কিন্তু যখন ওইসব এলসির দেনা পরিশোধের সময় আসে তখন ব্যাংকগুলো চাহিদামাফিক ডলার পাচ্ছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও সব খাতে ডলারের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কয়েকটি ব্যাংক বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে বেশি দামে ডলার কেনার নির্দেশনা দেয়।
এ নির্দেশনা পেয়ে তারা ৯৩ থেকে ৯৫ টাকা দরে ডলার কিনেছে। এসব ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা দরে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করেছে। কিছু ব্যাংক করপোরেট বিক্রির নামে অন্য ব্যাংকের কাছে ৯৬ টাকা দরেও ডলার বিক্রি করেছে। আগাম ডলার বিক্রির আওতায় ব্যাংকগুলো এসব করেছে। শরিয়াভিত্তিতে পরিচালিত একটি ব্যাংক আমদানি ব্যয় মেটাতে নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংকের কাছে ৯৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে ডেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে সব ব্যাংককে জানিয়ে দেয়-আমদানির দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যকার ব্যবধান ১০ পয়সার বেশি হবে না। আন্তঃব্যাংক থেকে ডলার কিনে তা ১০ পয়সার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। এর বেশি নেওয়া যাবে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম এখন কমে এসেছে।
প্রায় সব ব্যাংকই আমদানির জন্য ডলার বিক্রি করছে ক্রয় মূল্যের চেয়ে ১০ পয়সা বেশি দামে। এছাড়া রপ্তানিকারকরা নিজেদের ডলার দিয়েই আমদানির এলসি খুলতে পারছেন। রেমিট্যান্স বা অন্যান্য খাত থেকে কেনা ডলারের দামও কমে এসেছে। এসব ক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান ১ টাকার নিচে নেমে এসেছে। আগে যেটি ছিল ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত।
প্রতিদিন কী দামে ডলার কিনবে তা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো বিদেশে অবস্থিত তাদের নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোকে জানিয়ে দেয়। তবে নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছু কম দামে ডলার কেনে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। বাকি অর্থ তাদের মুনাফা থাকে। এই ডলার ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দরে। এখন থেকে এটিও করা যাবে না। আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সর্বোচ্চ ১ টাকা বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করা যাবে। এর বেশি দামে নয়।
তবে নগদ ডলারের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা প্রযোজ্য নয়। নগদ ডলারের সংকট প্রকট হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৯৫ টাকা দরেও কিনছে। এর ফলে এগুলো বিক্রি করছে ৯৭ টাকা দরে। করোনার সময়ে প্রবাসীদের দেশে আসা কমে যাওয়ায় বাজারে নগদ ডলারের সরবরাহ কমেছে। করোনার পর বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় নগদ ডলারের সংকট বেড়ে যায়। যে কারণে হুহু করে দাম বেড়েছে। তবে এখন নগদ ডলার ছাড়া অন্যান্য খাতে এর দাম কমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তদারকি জোরদার করেছে।
কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম এখন ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। এখানেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।