আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকলো ম্যানহাটনের ডাউনটাউনের ১০০ নম্বর সেন্টার স্ট্রিট। যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট অপরাধী প্রমাণিত হয়ে গ্রেপ্তার হলেন। দেশটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুর ১টা ৩০মিনিটে ক্রিমিনাল কোর্ট ভবনে এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে অফিসিয়ালি তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়।
আদালতের সামনে অপেক্ষমান শতশত মিডিয়াকর্মিদের চোখ ফাকি দিয়ে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ না করে পুলিশ ও সিক্রেট সার্ভিস পরিবেষ্টিত ট্রাম্প ভিন্ন দরজা দিয়ে আদালত ভবনে প্রবেশ করেন। নিউইয়র্কের ক্রিমিনাল কোর্টে আত্মসমর্পণের পর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম এই প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি, অ্যালভিন এল ব্র্যাগের অফিসে আত্মসমর্পণ করার পর অফিসিয়ালিভাবে তাকে গ্রেপ্তারের পর তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে ফৌজদারি আদালত ভবনে হাজির করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই আদালত ভবনের সামনে ছিল নজির বিহীন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কয়েকশ পুলিশ সদস্য, এফবিআই এবং সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের উপস্থিতি ছিল ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। উপস্থিত ছিল কয়েকশ গণমাধ্যমকর্মী। সকাল থেকেই আদালত চত্তরের সামনে জড়ো হতে থাকে ট্রাম্প সমর্থক এবং ট্রাম্পকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা। দুই গ্রুপের বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ।
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে ট্রাম্পকে বহনকারী তার ব্যাক্তিগত বিশেষ বিমানটি নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। সেখান থেকে সরাসরি ম্যানহাটনের ফিফথ এভিনিউতে অবস্থিত বাসভবন ট্রাম্প টাওয়ারে যান।
বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে ট্রাম্প টাওয়ারে পৌঁছান তিনি। এ সময় কয়েকজন সমর্থক হাতে পতাকা নিয়ে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান। তবে সেটা ট্রাম্পের চোখে পড়েনি। ভিড় এড়াতে তিনি মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ না করে পাশের ৫৬ স্ট্রিটের গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় কয়েকশ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা চারদিক থেকে ট্রাম্প টাওয়ার ঘিরে রাখে। এর আগে ট্রাম্পের জন্য এত বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এর প্রায় তিন ঘণ্টা আগে ফ্লোরিডার পামবীচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ট্রাম্পের বহনকারী বিমানটি নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
এর আগে ট্রুথ সোশ্যাল নামে তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘সোমবার দুপুর ১২টায় আমি মার-আ-ল্যাগো ত্যাগ করে নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের উদ্দেশে রওনা করছি। বিশ্বাস করুন আর না করুন মঙ্গলবার সকালে আমি আদালতে যাব। যুক্তরাষ্ট্র এমন হওয়ার কথা ছিল না।’
শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিউইয়র্কের আদালতে আত্মসমর্পণের ঘটনায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে।’ মিনেসোটার ফ্রিডলিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের সময় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।
সরাসরি সম্প্রচারের আবেদন নাকচ
বিশ্বের স্বনামধন্য গণমাধ্যম সিএনএন-সহ কয়েকটি গণমাধ্যম ট্রাম্পের আত্মসমর্পণ এবং শুনানি আদালত কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুয়ান মার্চান জানান, সোমবার রাতে সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে সংবাদ মাধ্যমের এই আবেদনের বিরোধীতা করে ট্রাম্পের আইনজীবীরা অনুমতি না দেয়ার জন্য আদালতে লিখিত আবেদন জানান। মামলার সরাসরি সম্প্রচার বাইরে উদ্বেগ সৃষ্টি করবে বলে তারা বিচারককে জানান। পরে রাত ১০টার পর বিচারক মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারের আবেদন নাকচ করে দিয়ে শুধুমাত্র পাঁচজন ফটোগ্রাফারকে ছবি তোলার অনুমতি দেন।
এ দিকে, মঙ্গলবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদালতে আত্মসমর্পণের ঘটনায় সমর্থকদের শান্ত থেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন নিউইয়র্কের মেয়র এরিক এ্যাডামস। কোনো রকম সহিংস আচরণ করছে তার জন্য পুলিশ বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। মেয়র জানিয়েছেন, আইন ভঙ্গ করলে যে কাউকে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।
ট্রাম্পের সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাৎ
স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, মামলার ভবিষ্যত এবং মঙ্গলবার কি ঘটতে পারে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় আইনজীবীদের সঙ্গে। ট্রাম্পের ব্যাক্তিগত আইনজীবী সুজান নেচলেস, জো টাকোপিনা এবং টড ব্ল্যাঞ্চ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে ট্রাম্পের আইনজীবী এ্যাটর্নি আলিনা হাব্বা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট ভালো আছেন এবং ফুরফুরে মেজাজে আছেন। সত্যি বলতে কি, তিনি সবসময় যেমন থাকেন তেমনই…।
ডলারকে টেক্কা দিতে নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে ব্রিকস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।